দেশের সব থানাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে

    0
    213

    আমারসিলেট24ডটকম,১৯নভেম্বরঃ বহু আগ থেকে সাধারণ মানুষের কাছে থানা-পুলিশ আতঙ্কের বিষয়। থানার অভ্যন্তরে যেসব অপরাধ হয় এবার সেগুলো নিয়ন্ত্রণে দেশের সব থানাকে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে। এটি হলে থানাগুলোর পুরো অংশ ২৪ ঘণ্টা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারির মধ্যে থাকবে।

    গত ৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইনোভেশন সেলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

    জনপ্রশাসনে কাজের গতিশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা বাড়ানো এবং নাগরিকসেবা প্রদান প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজীকরণের পন্থা উদ্ভাবন ও চর্চার জন্য ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ পর্যায়ে ইনোভেশন টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

    ৫ নভেম্বরের সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রতি সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখার যুগ্ম-সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর মধ্যে একটি হলো থানা গুলোতে সিসিটিভি স্থাপন করা।

    চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের থানার কর্মপরিবেশ স্বচ্ছ রাখার স্বার্থে দেশের সব থানা সিসিটিভি/আইপি ক্যামেরার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

    ওই সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ থানায় দালাল চক্রের দৌরাত্ম বন্ধে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে অপরাধীদের শনাক্ত করা সহজ হবে।”

    তিনি আরও বলেন, “এটি সরকারের পুরনো সিদ্ধান্ত। সারা দেশে এটি বাস্তবায়নের জন্য সভায় আবারো বিষয়টি উঠেছে। এখন যেসব থানায় সিসিটিভির ব্যবস্থা আছে সেগুলোর অনেকগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। সারা দেশে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সাধারণ মানুষের হয়রানি অনেক কমে যাবে।”

    সারা দেশে মোট থানার সংখ্যা ৬৩০। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৪৯টি। কিন্তু খুব কম সংখ্যক থানায় সিসিটিভি’র মাধ্যমে মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে।

    সম্প্রতি বিভিন্ন থানায় আসামি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি নির্যাতনের ফলে আসামিদের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে অনেক। এসব কারণে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে দেশ-বিদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলো থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

    গত ১৩ জুলাই রাজধানীর মিরপুরে পুলিশি নির্যাতনে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান ওরফে বানকু সুজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ১৬ জুলাই মিরপুর থানার এসআই জাহিদ ও তার সহযোগী নাসিমকে গ্রেফতার করা হয়।

    সুজনের মৃত্যুর পর ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, তাকে আঘাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, থানায় নিয়ে আসার সময় সুজন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন।

    গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসআই জাহিদ পুলিশকে জানিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে তিনি সুজনকে হত্যা করেছেন। এর আগেও ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহ আলী থানায় বিহারি ক্যাম্পের জনি নামের এক যুবককে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল জাহিদের বিরুদ্ধে। তখন জাহিদকে ক্লোজড করা হয়।

    এসআই জাহিদের মতোই র্যা ব সদর দফতরে একটি অভিযোগ আসে আরেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মাদারীপুরের নতুন স্থাপিত ডাসার থানার তৎকালীন এসআই মীর নাজমুল আহসান এক লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে শাহীন মোল্লা নামের এক ব্যক্তির ওপর নির্যাতন চালান। এই নির্যাতনে শাহীনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর মামলা হলে তা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যা ব।

    গত ১৮ জুন রাতে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় রোকনুজ্জামান নামের এক আসামির মৃত্যু হয়। ২৫ জুন নিহতের স্ত্রী শিমু আক্তার পাঁচলাইশ থানার এসআই আমির হোসেন, বাকলিয়া থানার এএসআই মোহাম্মদ এনায়েত হোসেনসহ পুলিশের সাতজন সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করলে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করে।

    থানায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন হলে জনগণের জন্য তা কতটা কাজে দেবে?

    এ সম্পর্কে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। আমাদের দেশে অনেক আইন হয়, অনেক ভালো উদ্যোগ নেয়া হয়, নীতিমালা হয়, কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগ হয় না।সত্যিকারার্থে যদি সিসিটিভির মাধ্যমে থানাগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং করা যায়, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যায়, তাহলে জনগণ এটির সুফল পাবে।” সুত্রঃ নতুন বার্তা।