দের যুগেও নবীগঞ্জে প্রথম শ্রেণীর খেতাবপ্রাপ্ত পৌরসভার নিজস্ব ভবন নেই!

    0
    296

    নূরুজ্জামান ফারুকী নবীগঞ্জ: নবীগঞ্জ পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। প্রায় ১৯ হাজার ভোটারের বসবাস এই পৌরসভার নেই নিজস্ব কোনো ভবন। প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৪ বছর অতিবাহিত হলেও প্রথম শ্রেণীর খেতাব প্রাপ্ত নবীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব কোনো ভবন তৈরি হয়নি। নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাড়া করা ভবনেই চলছে পৌরসভা কার্যক্রম। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। রাস্তাঘাটের অবস্থাও ভালো নয়। সড়কের বাতিও ঠিকমতো জ্বলে না।

    সূত্র বলছে- পৌর পরিষদের কাছে ভবন ভাড়া বাবত বেশ কয়েক লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে উপজেলা পরিষদ। কিন্তু তা মানতে নারাজ পৌর মেয়র। তিনি এ তথ্য অস্বীকার করে বলেন ‘ভবন ভাড়া নেয়া তো প্রশ্নই উঠে না।’ কবেই বা নির্মিত নবীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ভবন তার কোনো সঠিক সময় জানা নেই সংশ্লিষ্টদের। আগামী ১৬ জানুয়ারি নবীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌরসভার নানা সমস্যার মধ্যে পৌরসভার নিজস্ব ভবন না থাকার বিষয়টি ভোটারদের অন্যতম। তাই এই বিষয়টি ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভোটারদের কাছে প্রার্থীরাও দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
    সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে স্থাপিত নবীগঞ্জ পৌরসভা ২০০৫ সালে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণীতে ও ২০১৩ সালে খ থেকে ক (প্রথম) শ্রেনীতে উন্নিত হয়। ১ম শ্রেণীর খেতাব প্রাপ্ত এ পৌরসভার আয়তন ৯ দশমিক ৭ কিলোমিটার। পৌর এলাকায় রয়েছে ৩টি হাটবাজার, ১টি কসাইখানা, ৪২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ইট সলিং রাস্তা ৮.১ কিলোমিটার, কাঁচারাস্তা ৩.৯ কিলোমিটার। এ ছাড়াও পাঁকা ড্রেন রয়েছে ৬ কিলোমিটার, কাঁচা ড্রেন ৪.১ কিলোমিটার, সড়কবাতি ৫’শটি। উপজেলা পরিষদের প্রায় ২০ শতাংশ জায়গায় এক তলা জরাজীর্ণ ভবনের সাতটি কক্ষ নিয়ে ‘ভাড়ায় চলছে’ পৌরসভার কার্যক্রম। পৌরসভার কার্যক্রম শুরুর পর উপজেলা পরিষদকে নিয়মিত ভাড়া হিসেবে কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বকেয়া পড়েছে কত লাখ টাকা! তার হিসেবও মিলেনি।
    এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের একটি পরিত্যক্ত ভবনে ভাড়া নিয়ে নবীগঞ্জ পৌরসভার কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের কাছে বেশ কয়েক লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এনিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায়ও আলোচনা হয়েছে।
    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার কিংবা নাগরিক সেবা প্রদানের ব্যবস্থাও তেমন ভালো নয়। কোনো রকম গাদাগাদি করে দাপ্তরিক কার্যক্রম সারছেন কর্মরত ব্যক্তিরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমরা নিজেরাই ঠিকমতো বসতে পারি না। সেবা দেব কীভাবে? যা দেই তাই যথেষ্ট’। কর্মকর্তারা জানান, ঝুকিঁপূর্ণ ভবনে মৃদু ভূমিকম্প হলেই আমরা প্রাণ ভয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসি। অনেকটা আতংকের মাঝেই অফিসের কার্যক্রম চলছে। সচেতন মহলের ভাষ্য, ‘প্রথম শ্রেণীর নবীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ভবন নেই, এটি দুঃখজনক। নির্বাচনের সময় মেয়র প্রার্থীরা নবীগঞ্জ পৌরসভার জন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
    ভবন প্রসঙ্গে- নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী বলেন- নবীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ভবন নির্মিত করার লক্ষ্যে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছিলাম। আমি দায়িত্ব পালনকালে আমার পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের পাশে ৬০ শতক জায়গার উপর পৌর ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করি। কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচনে বর্তমান পরিষদ বিজয়ী হওয়ার পর তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
    নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচনে স্বতস্ত্র প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুমন বলেন-নবীগঞ্জ পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণীর খেতাব প্রাপ্ত পৌরসভা। সেখানে নিজস্ব ভবন না থাকাটা সত্যিই আমাদের জন্য দুঃজনক, আসন্ন নির্বাচনে জনগণ যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তাহলে অবশ্যই আমি প্রথমেই নবীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ভবন নির্মাণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিব।
    নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, নবীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ভবন নেই এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাব এবং নবীগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ভবন নির্মাণের বিষয়ে যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
    এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন- ‘পৌরসভার উল্লেখযোগ্য যে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা নিজস্ব ভবন এখনো নির্মাণ করা হয়নি।’ মেয়র বলেন, ‘আমার পরিষদ আসার পর নিজস্ব ভবনের জন্য অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি, জায়গাও নির্ধারণের চেষ্টা প্রায় শেষ পর্যায়ে । বর্তমানে ৪র্থ তম পরিষদ। এর আগে আরো ৩টি পরিষদ গেছে। বিগত ৩ পরিষদে ১৭ বছর সময় গেছে। সেখানে ভবনের জায়গা নির্ধারণের কোন ব্যবস্থা হয়নি।’ বকেয়া প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ পৌরসভার কাছে টাকা পাবে এটা প্রশ্নই উঠেনা। এমন তথ্য আমার জানা নেই।’