তেতাল্লিশ বছর পরে আবারও ইরাকে সুন্দরী প্রতিযোগিতা

    0
    213

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২১ডিসেম্বর: শনিবারের সন্ধ্যা। বাগদাদের পাঁচতারা হোটেলের ঝলমলে বলরুমে তখন চাঁদের হাট। দেশের তাবড় সুন্দরীরা একসঙ্গে একই মঞ্চে হাজির। মাঝেমধ্যেই ঝলকাচ্ছে ক্যামেরার ফ্লাশলাইট। বলরুম উপস্থিত রয়েছেন দেশ-বিদেশের সাংবাদিকরাও। বছর কুড়ির তরুণী যখন হাসিমুখে পাথর বসানো ঝলমলে মুকুটটা পরলেন, হাততালির ঝড় উঠল গোটা বলরুমে।

    দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর পরে কাল এই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইরাক। রাজধানী বাগদাদে আয়োজন করা হয়েছিল ‘মিস ইরাক’ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার। আর তাতে জয়ী হয়েছেন শায়মা আবদেলরহমান নামে এক মডেল। ইরাকের কিরকুক শহরের বাসিন্দা, ধূসর নয়না শায়মা খেতাব পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত।

    হাত কাটা, হাঁটু পর্যন্ত ঝুলের গাউন পরে মঞ্চে যখন সুন্দরীরা একের পর এক রাউন্ডে বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন, দর্শকদের কেউই তেমন অস্বস্তি বোধ করলেন না বোধহয়। বরং শায়মা যখন পুরস্কার নিচ্ছেন, দর্শকাসনে পিছনের সারিতে বসা ইরাকি যুবকদের তার নামে জয়ধ্বনি করতে দেখা গেল। অনুষ্ঠান শেষে মিস ইরাকের সঙ্গে নিজস্বী তোলার হিড়িকও ছিল চোখে পড়ার মতো। সাম্প্রতিক অতীতে ইরাকের মতো অতি রক্ষণশীল সমাজে এমন দৃশ্যের কথা ভাবা যেত না। উদ্যোক্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছে সুইম স্যুটের পর্ব। যেমন পার্টিতে পানীয়ের তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছিল অ্যালকোহলকেও।

    চূড়ান্ত পর্বের জন্য বাছাই করা আট জন সুন্দরীর মধ্যে শায়মাকে বেছে নিয়েছিলেন বিচারকরা। দেশের সেরা সুন্দরীর খেতাব জেতা শায়মা অবশ্য সাংবাদিকদের সামনে যথেষ্ট সপ্রতিভ। বললেন, ‘‘ইরাক যে এ ভাবে এগোচ্ছে, তা দেখে আমি ভীষণ খুশি। আমার মনে হয়, এই অনুষ্ঠান গোটা দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে।’’ এখানেই থেমে থাকেননি শায়মা। জানিয়েছেন, তার খ্যাতিকে ব্যবহার করে ভবিষ্যতে সারা দেশে শিক্ষা বিস্তারে সাহায্য করতে চান তিনি। পৌঁছে যেতে চান সেই শ্রেণির কাছে, টানা এত বছরের যুদ্ধে ছারখার হয়েছে যাদের ঘর-বাড়ি, সংসার।

    শুধু বিজয়িনী নন। এমন কাজ করতে আগ্রহী প্রতিযোগিতার বাকি অংশগ্রহণকারীরাও। উদ্যোক্তারা জানান, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা পর্বে ঝাড়াই বাছাইয়ের পরে চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছিল আট জনের নাম। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন বেশ কয়েকটা সমাজকল্যাণমূলক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়েছে ওই সব মডেলকে। সেখানেই অনেকে জানিয়েছেন, উন্নত ইরাক গঠনে কী ভাবে প্রশাসনকে সাহায্য করতে চাইছেন তারা।

    সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতা আয়োজনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের অনেকেই। কালকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক তরুণী বলেলেন, “আমার তো মনে হয়, এই ধরনের অনুষ্ঠান আরও বেশি করে হওয়া উচিত।” একই কথা বলেছেন মানবাধিকার কর্মী হানা এডওয়ারও। তিনি জানাচ্ছেন, এ ভাবেই সারা বিশ্বকে জানাতে হবে যে ইরাকে এখন সব ঠিকঠাক চলছে।

    আর কী বলছেন উদ্যোক্তাদের অন্যতম হুমাম আল-ওবেইদি? “কিছু মানুষ মনে করেন আমরা বাঁচতে জানি না। জীবনকে ভালবাসি না। তাদের এই জবাবটা দেওয়া দরকার ছিল,” দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের স্পষ্টই বলেছেন ওবেইদি। গত মার্চে দেশের প্রথম ফ্যাশন শো-য়ের আয়োজন করেছিলেন সেনান কামেল। এ বছরের প্রতিযোগিতার শিল্প নির্দেশনাও তার। সেনান ফের বললেন,”আমরা দেখাতে চাই গোটা দুনিয়া ইরাকের কণ্ঠস্বর শুনুক। দেখাতে চাই, আমরা এখনও বেঁচে আছি। আর আমাদের হৃদয়ও ধুকপুক করে।” সুত্রঃওয়েবসাইট