তাহিরপুর সীমান্তে বেপোরোয়াঃচোরাচালানী ও চাঁদাবাজরা

    0
    245

    আমারসিলেট24ডটকম,২৮মেঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাচালানী ও চাঁদাবাজরা। তারা সীমান্ত এলাকা দখল করে প্রতিদিন ভারত থেকে আনছে মদ-গাজা,হেরোইন-ইয়াবা,নাসির উদ্দিন বিড়ি,কয়লা ও চুনাপাথর। এসবের বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পাঁচার করছে মাছ, হাস-মুরগির মাংস,শাক-সবজি,মেলামাইনের থালা-বাসন,ভৈজ্য তেল,মোবাইল সিম-কার্ডসহ বিভিন্ন প্রকার দেশীয় পন্য। দুই দেশের অভ্যন্তরে এসকল মালামাল আদান প্রদানের জন্য চোরাচালানীরা তৈরি করেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেড। তাদের রয়েছে দুইজন গডফাদার। এরা বিএসএফ ও বিজিবি ক্যাম্প ম্যানেজ করার কথা বলে চোরাচালানীদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক চাঁদা নিচ্ছে।

    তারা নিজেদেরকে কখনো র‌্যারের সোর্স কখনো সাংবাদিক আবার কখনো থানার দালাল পরিচয় দিয়ে এসব কর্মকান্ড করছে। এলাকাবাসী জানায়,উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা-টেকেরঘাট সীমান্তের ৮টি চোরাইপথ দিয়ে পাচাঁরকৃত কয়লার প্রতি বস্তায় ৯০টাকা,ভারতীয় কাঠ(ফালি)থেকে ৫০টাকা,বাংলা কয়লা(কুড়ানো কয়লা)প্রতিটনের ১০০টাকা,মদ-গাজা,হোরোইন-ইয়াবা পাচাঁরের জন্য সাপ্তাহিক ২-৩ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে লাকমা গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে চোরাচালানী শহীদ মিয়া,একই গ্রামের ইদ্রিস আলী ও আব্দুল হাকিম ভান্ডারী। পাচাঁরকৃত কয়লা ইঞ্জিনের নৌকায় বোঝাই করে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে থেকে পাটলাই নদী দিয়ে পরিবহনের জন্য প্রতিটন কয়লা থেকে ৩০০টাকা,বাংলা কয়লা প্রতিটনে ১০০টাকা ও এলাকায় মদ-গাঁজা ও নাসির উদ্দিন বিড়ির ব্যবসার জন্য সাপ্তাহিক ২ থেকে ৪ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে দুধের আউটা গ্রামের মাতাল নূরজামাল তার ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া।

    বাগলী ও চাঁরাগাঁও সীমান্তের ১২টি পথ দিয়ে একই ভাবে কয়লা ও মদ-গাজা, হেরোইন পাঁচার ও চাঁদা উত্তোলন করে চাঁরাগাঁও এলসি পয়েন্টের মাতাল জলিল মিয়া। লাউড়েরগড়ের যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারতে গিয়ে অবৈধ পাথর আনার জন্য প্রতি বারকি নৌকা থেকে ১০০টাকা,ওই সীমান্ত দিয়ে মদ-গাজা পাঁচারের জন্য সপ্তাহে ৫হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে লাউড়েরগড় গ্রামের বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী জজ মিয়া ও আমিনুল ইসলাম। লালঘাট সীমান্তের ৫টি চোরাই পথ দিয়ে কয়লা,মদ-গাজা পাঁচার ও ভারতে লোক উঠানোর জন্য একই ভাবে চাঁদা উত্তোলন করে বিজিবির উপর হামলাকারী লালঘাট গ্রামের সন্ত্রাসী আব্দুল হাই ও কালাম মিয়া। এদেরকে নিয়ন্ত্রন করছে বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের সুধি ব্যবসায়ী বদ মিয়ার দুই ছেলে আজাদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়া। তাদের এসব কর্মকান্ডের কারণে যাদুকাটা নদীতে বিএসএফের তাড়া খেয়ে বারকি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এক শ্রমিক ও এক চোরাচালানীকে ধরে বিএসএফ নিয়ে যাওয়াসহ প্রতি বছর ঘটছে এধরণের দূর্ঘটনা। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় বারবার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরও চাঁদাবাজদের দৌড়াত্ব বেড়েই চলেছে। এব্যাপারে চাঁদাবাজ সাজ্জাদ মিয়া বলেন,আমাদের কথায় বিজিবির কমান্ডিং অফিসার,পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক উঠে বসে। পত্রিকায় লিখে তোদের মতো সাংবাদিকরা আমাদের দুই ভাইয়ের চাঁন্দাবাজি বন্ধ করা দূরের কথা,একটা লোমও ছিড়তে পারবিনা। বেশি বাড়াবাড়ি করলে চাঁন্দাবাজির মামলায় ফাঁসাইয়া দিমু। দুই সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় ফাসাইয়া বাপ ডাকাইছি। সীমান্ত চোরাচালানীদের গডফাদার আজাদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়ার বিরোদ্ধে আদালতে গত ২০১১সালের ২৯শে ডিসেম্ভর চাঁদাবাজি মামলা নং-১১৫/১১,ধারা-৩৮৫/ ৫০০/৫০১/৫০২/১০৯ দন্ডবিধি ও ২০১৩সালের ১৩ মে চাঁদাবাজির পিটিশন মামলা নং-৪৪/১৩,ধারা-৪২০/৩৮৫/৩৮০/৩২৫/৩২৪/৩০৭ ও ৩৪ধারায় মামলা হওয়াসহ যৌথবাহিনীর কাছে বলৎকারের অভিযোগ,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

    এছাড়াও তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর থানায় একাধিক জিডি এন্টি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ভাবে আজ পর্যন্ত চোরাচলানী ও চাঁদাবাজদের বিরোদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দিন বলেন,সীমান্তের চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির পক্ষ থেকে জোড়ালো ভূমিকা নেয়া হচ্ছে। সীমান্তের কোথাও কোন অনিয়মের সংবাদ পাওয়া মাত্রই আমারা তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।