তাহিরপুর সীমান্তে চলছে চাঁদাবাজ আজাদের তেলেসমাতি কান্ড

    0
    222

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৯মার্চ,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়াঃ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে ‘জজ মিয়া’ নাটক নাম দিয়ে চাঁদাবাজ আজাদের চলছে তেলেসমাতি কান্ড। উপজেলা সীমান্তের চাঁরাগাঁও,লাকমা,লালঘাট,রজনীলাইন,রাজাই,বারেক টিলা,লাইড়েরগড়সহ একাধিক চোরাইপথ দিয়ে আজাদ মিয়া প্রতিদিন মদ,গাঁজা,হেরুইন, অস্ত্র,কয়লা পাঁচার করতে গিয়ে তার কোন সহযোগী বিজিবির হাতে আটক হলেই শুরু হয় তার তেলেসমাতি। নিজে চোরাই স্পট থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কর্মীদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তৈরি করে জজ মিয়া নাটক নামক একটি কাল্পনিক ঘটনা। যার নায়ক সে নিজেই। এর মূল রহস্য হল আদালতে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৩টি চাঁদাবাজি মামলা। এসকল মামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করাতে না পেরে অবশেষে সুকৌসলে চালিয়েছে এই খেলা।

    আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানাযায়, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক,ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি,চাঁরাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতি সভাপতি জয়ধর আলী আজাদ মিয়ার অবৈধ কর্মকান্ডে বাঁধা দেওয়ায়,তাদের কাছে ৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে।

    এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের ছেলে পারুল খাঁ বাদী হয়ে গত ২৯শে জানুয়ারী সুনামগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-১০/২০১৫ইং ও কয়লা সমিতির সভাপতির ছেলে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২২শে জানুয়ারী কোর্ট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-০৮/২০১৫ইং দায়ের করে চাঁদাবাজ আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে। এছাড়া আজাদের অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজানকে তুলে নিয়ে মারধর করে।

    পরে নির্যাতিত সাংবাদিক রাজু তাহিরপুর থানায় জিডি নং-৬৩১,তারিখ:২০/০৪/১১ইং দায়ের করলে,তাকে উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী করে। সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক মানবকণ্ঠ ও মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়ার কাছে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দেওয়ায় হামলা চালিয়ে ১টি ডিবি ক্যামেরা,আধা ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও নগদ টাকা-পয়সা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।

    এ ঘটনায় সাংবাদিক মোজাম্মেল বাদী হয়ে আজাদ ও সাজ্জাদসহ ১০জনের বিরুদ্ধে গত ২০১৩সালের ১৩ই মে সুনামগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধি আইনের ৪২০/৩৮৫/৩৮০/৩২৫/৩২৪/৩০৭ ও ৩৪ ধারায় মামলা নং-৪৪/২০১৩ইং দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এমতাবস্থায় কোন ওপায় না পেয়ে চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর শুরু করেছে অত্যাচার। নিরীহ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি,কয়লা ব্যবসায়ী কেউ রক্ষা পাচ্ছে না তাদের হাত থেকে। তাইর একান্ত সহযোগী থানার এসআই জামালকে দিয়ে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে করছে হয়রানী। যার ফলে দিনদিন বেড়েই চলেছে তার দাপট। এলাকাবাসী জানায়, চাঁদাবাজ আজাদ ও এসআই জামালের নেতৃত্বে ভারত থেকে অবৈধভাবে কয়লা পাচাঁরের পর বিজিবি ক্যাম্পের নামে ৭০টাকা,আজাদের নিজ নামে ১০টাকা,তার ছোট ভাই সাজ্জাদ মিয়া,শালা তারেক মিয়া,স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের নামে ৫০টাকা চাঁদার উত্তোলন করে আজাদ মিয়া।

    এছাড়া পাহাড়ীছড়া থেকে কুড়ানো বাংলা কয়লা থেকে প্রতিটনে পুলিশের নামে ২শত টাকা,আজাদের নামে ১শ টাকা,মদ-গাজা পাচাঁরের জন্য সপ্তাহে ২হাজার টাকা,চুরি করে ভারতে লোক উঠনোর জন্য জনপ্রতি ৩শত টাকা,যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের জন্য প্রতি বারকি নৌকা থেকে ১শত টাকা,এ নদীতে সেইভ মেশিন চালানোর জন্য প্রতি মেশিন থেকে ২শত টাকা,নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের জন্য প্রতি নৌকা থেকে ১হাজার টাকা এবং এলাকার বিভিন্নস্থানে প্রতিরাতে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে এসআই জামালকে নিয়ে প্রতিবোর্ড থেকে ৫শত টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করছে। চাঁদাবাজির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গত ২৫.০৪.২০১১ইং তারিখে ০৫.৯০৫…০৬.০৩.০৩১.২০১১নং স্মারকে আজাদ ও তার ভাই সাজ্জাদকে তাহিরপুরের ইউএনও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

    উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজাহিদ উদ্দিন আহমদ গত ০৪.০৫.২০১১ইং জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। বড়ছড়া কয়লা আমদানী কারক সমিতির অর্থ সম্পাদক ব্যবসায়ী কুদ্দুছ মিয়ার কাছে চাঁদা চাওয়ায় আজাদ ও সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি মামলা নং-১১৫/২০১১ইং দায়ের করেন। বালিজুরী হাজী এলাহি বক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের কাছে ২০হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ায়,স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ গত ১১এপ্রিল ২০১২ইং তারিখে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানান। ২০০৭সালের ৬আগষ্ট স্থানীয় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামে জমি রেকর্ডের নামে ঘুষ বাণিজ্য করায় তাহিরপুর থানার দূর্নীতি মামলা নং-৩,ধারা-১৬২/১১৪ দঃবিঃ এর আসামী সেটেলম্যান্ট অফিসার মোহাম্মদ আলী হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করলে,চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়।

    এছাড়াও ২০০৪সালে এক শিশুকে বলৎকারের ঘটনায় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই নির্যাতিত শিশুর মা। রাতের আধাঁরে মোটর সাইকেল চালকের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এব্যাপারে আবুল হোসেন খান বলেন,এসআই জামালের সহযোগীতায় চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া আধিপত্য বিস্তার করে মদ,গাঁজা,হেরুইন ও অস্ত্র পাচাঁর করাসহ র‌্যাব,পুলিশ,বিজিবি ও সাংবাদিকদের নামে সীমান্তের চোরাচালানীদের কাছ থেকে মাসোহারা,সাপ্তাহিক ও দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করেছে। তাদের কোন লোক ও অবৈধ মালামাল আটক করলেই তৈরি করে নানা কাহিনী।

    চারাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতির সভাপতি জয়ধর আলী বলেন-চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া নিজেকে র‌্যাবের কমান্ডার,কখনো বিজিবির সিও পরিচয় দিয়ে এসআই জামালকে দিয়ে চাঁদাবাজি,ব্ল্যাকমেল করাসহ মাদক ও হুন্ডির ব্যবসা করছে। লালঘাট গ্রামের দিনমজুর কালাম,টেকেরঘাট গ্রামের শহিদ মিয়া ও বানিয়াগাঁও গ্রামের সিরাজ মিয়া বলেন,সন্ত্রাসী আজাদ মিয়ার কথা মতো কয়লা,অস্ত্র ও হেরুইন পাচাঁর না করায় এসআই জামালকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে হয়রানী করছে।

    এব্যাপারে চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া দাপটের সাথে বলেন,আমাদেরকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মামলা দিয়ে সাইজ করে ফেলব। এসআই জামাল বলেন,আজাদ ভাই আমার বন্ধু তাই এক সাথে চলাফেরা করি। সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন-আজাদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত চাঁদাবাজি মামলাগুলো তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদাবাজ আজাদ ও তার সহযোগী এসআই জামালের হাত থেকে অসহায় মানুষকে রক্ষা করতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেছেন তাহিরপুর উপজেলাবাসীর ভুক্তভোগী অসহায় জনসাধারণ।