তাহিরপুর মোটরবাইক চালক খুনঃপুলিশের তথ্য উদ্ধার

    0
    210

    আমারসিলেট24ডটকম,০১নভেম্বরঃ বিয়ের পাত্রী দেখার কথা বলে মোটর সাইকেল ভাড়া করে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ৪চোর পরিকল্পিত ভাবে খুন করে হাওরে পুতে রাখে শামিম আহমদ(১৮) নামের এক মোটর সাইকেল চালককে।

    পুলিশের অভিযানে মোটর সাইকেল উদ্ধার ও একে একে তিন খুনী ধরা পড়েছে।নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশী তদন্তে ৮ মাসের মাথায় শামিম আহমদ খুনের রহস্য উন্মোচিত হল। এ ঘটনা প্রকাশের পর গোটা তাহিরপুর উপজেলা জুড়ে বইছে এক অজানা আতঙ্ক।

    অপরদিকে,ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা হতে ২টা পর্যন্ত ভাড়ায় চালিত শতাধিক মোটর সাইকেল চালক তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন।সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর,ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় শত শত মোটর সাইকেল চালক শুস্ক মৌসুমে ভাড়ার মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করে যাচ্ছে। ওই এলাকায় প্রথমারের মত এক মোটর সাইকেল চালক খুন হওয়ায় তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।এ ঘটনায় ওই এলাকায় যাত্রী পরিবহনের কাজে নিয়োজিত মোটর সাইকেল চালকদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে প্রতিনিয়ত।

    ঘটনা বিবরণে জানা যায়, তাহিরপুর  উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড়ের ছড়ারপাড় গ্রামের মৃত কালু ফকিরের পুত্র আশিক মিয়া (৩০) ও তার এক সহযোগীকে নিয়ে চলতি বছরের ৯ মার্চ হাওরে মহিষ চুরি করার উদ্দ্যেশ্যে বের হয়।মহিষ চুরি করতে ব্যর্থ হয়ে উপজেলার রঙ্গারচর গ্রামের মৃত আসকর আলীর পুত্র আব্দুর রউফ (৩৫)’র সাথে মোবাইল ফোনে শলাপরামর্শ করে জানায় মহিষ মেলাতে পারেনি।বিকল্প হিসাবে ভাড়া করে মোটরসাইকেল চালককে নিয়ে আসলে গাড়ি বিক্রি করা যাইতে পারে।পরে পরিকল্পনা মাফিক তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে আশিক ও তার সহযোগী  মিলে সদর উপজেলার রঙ্গারচর গ্রামে বিয়ের পাত্রী দেখার কথা বলে শামিমকে তার মোটর সাইকেল সহ আসা-যাওয়া বাবত ৫০০শ’ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে সন্ধায় রউফের বাড়িতে হাজির হয়।

    রউফের বাড়িতে পাত্রী দেখানোর কোন আয়োজন ছিলনা।সময় অতিবাহিত করে রাত হলে শামিমের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরিকল্পিত ভাবে আশিক শামিমের গলায় গামছা পেছিয়ে তাকে শাসরোদ্ধ করে খুন করে ।খুনের ঘটনায় রউফ সহ আরো ২জন সহযোগী ছিলেন বলে জানা যায়। এরপর রাতেই গ্রামের পার্শ্ববর্তী কালনার হাওরে গর্ত করে শামিমের লাশ পুতে রাখে।বর্তমানে সেখানে ১০/১২ ফুট পানি রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়।

    এ ঘটনায় প্রথমে শামিমের পিতা থানায় নিখোঁজ উল্ল্যেখ করে একটি ডায়েরী করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ডায়েরীর বর্ণণা অনুযায়ী কয়েকদিনের মাথায় শামিমের মোটর সাইকেলটি এক চালকের নিকট থেকে উদ্ধার করে এবং রিপন মিয়া (২২) মৃত আসকর আলীর পুত্রকে গ্রেফতার করে।তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে রিমান্ডের পরও তেমন কোন তথ্য উদ্ধার হয়নি। এক পর্যায়ে নিখোঁজ শামিমের পিতা ১৯ মার্চ তার পুত্রকে অপহরণ ও দস্যুতার অভিযোগ এনে থানায় ৩জনকে অভিযুক্ত করে আরেকটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর শামিমের নিখোঁজ রহস্য উন্মোচনে দ্বিতীয় দফায় তদন্তে নামেন থানার উপ-পরিদর্শক (এইআই) শাহ আলম ভুইয়া।

    তদন্তকাজে তথ্য প্রযুক্তিসহ নিবিড় ভাবে সহায়তা করেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন। পরবর্তীতে ঘাতকদের শনাক্ত করা হয়। এর পর তদন্তে শামিমের মোবাইল ফোনের কললিষ্ট ও সিডিআর পর্যবেক্ষণ করে আরো ২ জনকে ঘাতক হিসাবে নতুন করে শনাক্ত করা হয়। এরপর পুলিশের ভয়ে দ্বীর্ঘ দিন পালিয়ে থাকার পর কিছুদিন আগে রউফ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে গত সোমবার রিমান্ডে নিয়ে আসার পর তিনি অকপটে স্বীকার করে নেয় শামিমকে শাসরোধ করে খুন করার পর তার লাশ হাওরে পুতে রাখা এবং রিপনের নিকট গাড়িটি মাসিক ৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়ার বিষয়টি।

    এ ঘটনায় শামিম আহমদ খুনের মুল হোতা  আশিককে নিজ বাড়ি থেকেই ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। এভাবেই উন্মোচিত হয় দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম শামিম আহমদকে শাসরোদ্ধ করে খুন করার মূল ঘটনা।

    তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনিছুর রহমান খাঁনের সূত্রে জানা যায় তিনি বলেন, শামিম আহমদ খুনের ঘটনায় আরো ২ ঘাতককে ধরতে পুলিশী অভিযান চলছে, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই তার হত্যার রহস্যটি উদঘাটন করতে পেরেছি।

    পুলিশ সুপার মোঃ হারুন অর রশীদের সূত্রে জানা যায় তিনি বলেন, শামিমের লাশ উদ্ধারের জন্য স্থানটি শনাক্ত করে দু’এক দিনের মধ্যেই হাওরে ডুবুরি নামানো হবে এরপর যদি লাশ উদ্ধার না হয় তাহলে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত শামিমের লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে ।