তাহিরপুরে বন্যায় খেটে খাওয়া দিন মজুর পরিবারে দূর্ভোগ

    0
    291

     

     

     

     

     

     

     

     

     

     

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বন্যা পরিস্থিত ভয়াবহন রূপ নিয়েছে। এতে করে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ চরম দূর্ভোগের মাঝে আছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ৭দিন ধরে জেলা শহর সাথে উপজেলার সড়কসহ অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। ২০টি বেশী হাটবাজার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যা আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হাওরপাড়ের খেটে খাওয়া দিন মজুর পরিবারের লোকজনের মাঝে অর্থাভাব দেখা দিয়েছে।

    তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে,তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,আনোয়ারপুর-ফতেহপুর,বাদাঘাট-সোহালা সড়কসহ মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির চাপে উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হাওর পাড়ের বাড়ি ঘরে ঢেউয়ের আঘাতে বিভিন্ন গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাওরপাড়ের লোকজনের অন্যতম পেশা মাছ ধরা এবং বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় শ্রমজীবী লোকজন পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত উপজেলার ২৪শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্থরের ১২টি প্রতিষ্ঠানের ভেতর পানি প্রবেশ করেছে। এ সকল বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি শতাধিক গ্রামগুলোর মধ্যে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হলো-বালিজুরী,বড়খলা,আনোয়ারপুর,সোহালা,মাহতাবপুর,পিরিজপুর,দক্ষিণকূল,চিকসা,চানপুর,মাহরাম,নোয়াহাট,পাতারগাঁও,ধরুন্দ,ইউনুছপুর,লক্ষ্মীপুর,চিকসা,টাংগুয়ার হাওর সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামসহ ৫০টি গ্রাম।

    বালিজুরী ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ও দক্ষিণকূল গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন,হঠাৎ করে রাতের বেলা বাড়ি ঘরে ঢলের পানি ঢুকে পড়ে। বর্তমানে পানির মধ্যে আমাদের আতংকে দিনরাত কাটাতে হচ্ছে। অনেক বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

    উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ইকবাল হোসেন জানান,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। পানির কারণে জরুরী বিভাগ দ্বিতীয়তলাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের আমরা সবাই সার্বক্ষনিক চিকিৎসা দিচ্ছি।

    মাটিয়ান হাওরপাড়ের ছিলানী তাহিরপুর গ্রামের জেলে শরিফুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন,মাছ ধরেই কোন রখমে পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টায় থাকি। কিন্তু পানি বেড়ে যাওয়া ও আবহাওয়ার খারাপ থাকার কারণে মাছ ধরতে যেতে পারছিনা। এতে করে পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।

    ফাজিলপুর গ্রামের সাজিদুর রহমান জানান,ঘরের ভেতর পানি এদিকে নদীতে ঢল বালু উত্তোলন করতে পারছিনা। সে কারনে টাকা উপার্যন করতে না পারায় এখন ঋণ করে পরিবার চালাতে হচ্ছে।

    শিক্ষ হাদিউজ্জামান জানান,বন্যার পানিতে তার স্কুল পানি প্রবেশ করেছে। পানি বাড়ার কারনে শিক্ষার্থীরা স্কুলে একবারেই কম আসে। এক প্রকার বন্ধই স্কুল।

    উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন,বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাওরবাসী। আমি প্রতিদিনেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা করে স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের নিয়ে বন্যা আক্রান্ত হাওরপাড় ও মেঘালয় সীমান্তের বন্যায় আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবারের মধ্যে চিড়া,গুড় ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।