তাহিরপুরে দুই সহোদরের উপর অতিষ্ট এলাকাবাসীঃঅভিযোগ চাঁদাবাজি

    0
    244
    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫মার্চ,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়াঃসুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানী দুই সহোদর চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়ার চাঁদাবাজির শেষ কোথায়? এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিক সমাজসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ৩টি চাঁদাবাজি মামলা,থানায় একাধিক মামলা ও জিডি এন্টিসহ ইভটিজিং,শিশু বলৎকার,গৃহবধু ছিনতাইয়ের চেষ্টায়,দালালির ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ছাড়াও বিভিন্ন দফতরে একাধিক অভিযোগ থাকার পরও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। যার ফলে তাদের দাপট দিনদিন বেড়েইে চলেছে। তাদের অত্যাচারে সাংবাদিক,জনপ্রতিনিধি,ব্যবসায়ী,দিনমজুর, বালি-পাথার শ্রমিক থেকে শুরু সর্বস্তরের জনসাধারণ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। থানার এসআই জামালের প্রত্যক্ষ মদদে দুই সহোদর চাঁদাবাজরা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে এলাকায় ওপেন চাঁদাবাজি,ব্ল্যাকমেল,মদ-গাঁজা,হেরুইন,ইয়াবা,কয়লা ও অস্ত্র পাচাঁর। দুই সহোদরের কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিদিন জাতীয় অনলাইন ও দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সংবাদের ঝড় উঠেছে। আদালতে দায়েরকৃত ৩টি চাঁদাবাজি মামলা ও একাধিক অভিযোগ সূত্রে জানায়,তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক,উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি,চাঁরাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতি সভাপতি জয়ধর আলীর কাছে ৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের বিশিষ্ট সুধী ব্যবসায়ী বদ মিয়ার ছেলে চোরাচালানী চিহ্নিত চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া। এঘটনায় চেয়ারম্যানের ছেলে পারুল খাঁ বাদী হয়ে গত ২৯শে জানুয়ারী কোট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-১০/২০১৫ইং ও কয়লা সমিতির সভাপতির ছেলে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২২শে জানুয়ারী কোর্ট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-০৮/২০১৫ইং দায়ের করে চাঁদাবাজ আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে। আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য তাহিরপুর থানায় পাঠায়। এমতাবস্থায় ওই থানার এসআই জামাল উদ্দিন চাঁদাবাজি মামলার আসামী আজাদকে বোগল দাবা করে ওপেন ঘুরছে। যার ফলে বেড়ে গেছে তার আজাদ মিয়ার অত্যাচার। আজাদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়া বাদাঘাট বাজারে ব্লু-ফিল্ম চালাতো। জুয়া খেলা,মদ,গাঁজা সেবন ও রাস্তাঘাটে মেয়েদের ইভটিজিং করা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। একারণে তাকে গলায় জুতার মালা পড়ানোসহ এলাকাবাসী অনেকবার গণধৌলাই দিয়েছে। তার কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে আজাদ মিয়াকে তার বাবা বদ মিয়া তেজ্য করে দেন। পরে সে এলাকা ছেড়ে সিলেট চলে যায়। দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে এসে সীমান্তে গড়ে তুলে একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট। লাকমা,লালঘাট,টেকেরেঘাট,চানপুর,চাঁরাগাঁওসহ আরো একাধিক পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে অবৈধভাবে হাজার,হাজার বস্তা কয়লা পাচাঁর শুরু করে। এবং বিজিবি ক্যাম্পের নামে ৭০টাকা,তার নিজের নামে ১০টাকা,তার ছোট ভাই সাজ্জাদ মিয়া,শালা তারেক মিয়া,স্ত্রী মনোয়ারা বেগম,ছেলে অপুসহ স্থানীয় প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের নাম ব্যবহার করে ২০টাকা চাঁদার উত্তোলন করে। এছাড়া পাহাড়ীছড়া থেকে কুড়ানো বাংলা কয়লা থেকে প্রতিটনে ১শত টাকা,মদ-গাজা পাচাঁরের জন্য সপ্তাহে ২হাজার টাকা,চুরি করে ভারতে লোক উঠনোর জন্য জনপ্রতি ৩শত টাকা,যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের জন্য প্রতি বারকি নৌকা থেকে ১শত টাকা,এনদীতে সেইভ মেশিন চালানোর জন্য প্রতি মেশিন থেকে ২শত টাকা,নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের জন্য প্রতি নৌকা থেকে ১হাজার টাকা এবং এলাকার বিভিন্নস্থানে প্রতিরাতে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে এসআই জামালকে নিয়ে প্রতিবোর্ড থেকে ৫শত টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করে। আজাদের অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজানকে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে নির্যাতিত সাংবাদিক রাজু তাহিরপুর থানায় জিডি নং-৬৩১,তারিখ:২০/০৪/১১ইং দায়ের করলে,তাকে উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী করে। সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক মানবকণ্ঠ ও মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়ার কাছে ক্ষতি পূরণ বাবদ ১লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দেওয়ায় হামলা চালিয়ে ১টি ডিবি ক্যামেরা,আধা ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও নগদ টাকা-পয়সা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এঘটনায় সাংবাদিক মোজাম্মেল বাদী হয়ে আজাদ ও সাজ্জাদসহ ১০জনের বিরুদ্ধে গত ২০১৩সালের ১৩ই মে সুনামগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধি আইনের ৪২০/৩৮৫/৩৮০/৩২৫/৩২৪/৩০৭ ও ৩৪ ধারায় মামলা নং-৪৪/২০১৩ইং দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য আজাদ ও সাজ্জাদ সাংবাদিক মোজাম্মেলকে প্রাণ নাসের হুমকি দেয়। এঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর থানায় একাধিক জিডি এন্টি করা হয়। এরপরও আপোষ না করায় কোন উপায় না পেয়ে থানার এসআই জামালের পরামর্শে ও সার্বিক সহযোগীতায় আজাদ তার ছেলে অপুকে দিয়ে এসিড নিক্ষেপের নাটক সাজিয়ে সাংবাদিক মোজাম্মেলের নামে মিথ্যা মামলা দেয়। ২০০৮সালের ১৪ই নভেম্বর চাঁদা চাওয়ার ঘটনায় ছাত্রদল নেতারা বাদাঘাট বাজারে আজাদ ও সাজ্জাদকে গণধৌলাই দেয়। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ২৫/০৪/২০১১ইং ০৫.৯০৫…০৬.০৩.০৩১.২০১১নং স্মারকে আজাদ ও সাজ্জাদকে তাহিরপুরের ইউএনও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। ২০০৭সালের ৬আগষ্ট স্থানীয় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামে জমি রেকর্ডের নামে ঘুষ বাণিজ্য করায় তাহিরপুর থানার দূর্নীতি মামলা নং-৩,ধারা-১৬২/১১৪ দঃবিঃ এর আসামী সেটেলম্যান্ট অফিসার মোহাম্মদ আলী হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করলে,চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া লেজ গুটিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আজাদ মিয়া ও তার ভাই সাজ্জাদ মিয়ার চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজাহিদ উদ্দিন আহমদ গত ০৪/০৫/২০১১ইং জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বড়ছড়া কয়লা আমদানী কারক সমিতির অর্থ সম্পাদক ব্যবসায়ী কুদ্দুছ মিয়ার কাছে চাঁদা চাওয়ায় আজাদ ও সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি মামলা নং-১১৫/২০১১ইং দায়ের করেন। তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী হাজী এলাহি বক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের কাছে ২০হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ায়,স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ গত ১১এপ্রিল ২০১২ইং তারিখে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানান। ২০০৪সালে এক শিশুকে বলৎকারের ঘটনায় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই নির্যাতিত শিশুর মা। এছাড়া রাতের আধাঁরে মোটর সাইকেল চালকের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হলে আজাদ ও সাজ্জাদ সালিশে নাকে খত দিয়ে রক্ষা পায়। এব্যাপারে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান বলেন,এসআই জামালের সহযোগীতায় চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া সীমান্তের স্মাগলিং পয়েন্টগুলোতে দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তার করে মদ,গাঁজা,হেরুইন,অস্ত্র পাচাঁর করাসহ পুলিশ,বিজিবি ও সাংবাদিকদের নামে চোরাচালানীদের কাছ থেকে মাসোহারা,সাপ্তাহিক ও দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করে যাচ্ছে। চারাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতির সভাপতি জয়ধর আলী,ব্যবসায়ী হাসিম মিয়া,নজরুল ইসলামসহ আরো অনেকে বলেন-চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া নিজেকে র‌্যাবের অফিসার,কখনো বিজিবির সিও,আবার কখনো বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সীমান্তের নদীপথ,বাংলা কয়লা,পাথর,বালি থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করাসহ মাদক ও হুন্ডির ব্যবসা করছে। কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং এক সঙ্গে চলাফেরা করছে। যার ফলে তার অত্যাচার দিনদিন বেড়েই চলেছে। সীমান্তের লালঘাট গ্রামের দিনমজুর কালাম,টেকেরঘাট গ্রামের শহিদ মিয়া ও বানিয়াগাঁও গ্রামের সিরাজ মিয়াসহ আরো অনেকে বলেন,সন্ত্রাসী আজাদ মিয়ার কথা মতো কয়লা,অস্ত্র ও হেরুইন পাচাঁর না করায় এসআই জামালকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে হয়রানী করছে। এব্যাপারে চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া দাপটের সাথে বলেন,আমরা এত কিছু কিন্তু কেউ আমাদের কিছু করতে পারেনা। আর পত্রিকায় লিখলে কি হয়। কোন সাংবাদিক আমাদেরকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাইজ করে ফেলব এটা কোন ব্যাপারই না। কারণ পুলিশ ও বিজিবি আমার কথা উঠে বসে। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন-আজাদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত দুইটি চাঁদাবাজি মামলা তদন্ত করা হচ্ছে,তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই সহোদর চাঁদাবাজের হাত থেকে অসহায় মানুষকে রক্ষা করতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেছেন তাহিরপুর উপজেলাবাসী।