তাহিরপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধর

    0
    283

    “তাহিরপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই:চাঁদাবাজি মামলার আসামী আজাদকে গণধৌলাই, জরিমানা ও হাতে-পায়ে ধরে সালিশে সমাধান

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,মার্চ,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়াঃ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে শাহ আরোফিনের মেলায় চাঁদা না দেওয়ায় এক ঔষধ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় চাঁদাবাজি মামলার আসামী আজাদ মিয়াকে গণধৌলাই দিয়েছে জনতা। এঘটনাটি ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড়ে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়,আদালতে দায়েরকৃত ৩টি চাঁদাবাজি মামলার আসামী হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া ও তার ছোট ভাই সাজ্জাদ হোসেন শাহ মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাংবাদিকদের নামে চাঁদা উত্তোলন করে।

    এসময় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের মেওয়াখলা গ্রাম থেকে আগত ঔষধ ব্যবসায়ী হানিফ মিয়ার কাছে মেলায় দোকান করার জন্য ২হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আজাদ ও সাজ্জাদ ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করে জোরপূর্বক ১০হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া চিৎকার শুরু করলে মেলায় আগত শতশত ব্যবসায়ীরা এসে আজাদকে ধরে গণধৌলাই দেয়।

    ওই সময় সাজ্জাদ মিয়া কোন রকম নিজের প্রাণ রক্ষা করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আজাদকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে রক্ষা করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে আটক করে রাখে। আর আহত ব্যবসায়ী হানিফ মিয়াকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর রাত ৩টায় শাহআরোফিন মাজার ও মেলা কমিটির দায়িত্বে থাকা লোকজন,পুলিশ, বিজিবি ও উপস্থিত জনতার সামনে সালিসের মাধ্যমে বিচারকরা চাঁদাবাজ আজাদ মিয়াকে ১০হাজার টাকা জরিমানা করেন।

    এসময় আহত ব্যবসায়ী হানিফ মিয়ার পায়ে ধরে আজাদ মিয়া ক্ষমা চাওয়াসহ সকলের কাছের তার অপরাধের জন্য ভুল স্বীকার করে দুইহাত জোরকরে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে নাকে খত দিয়ে রক্ষা পায়। এব্যাপারে শাহ আরোফিন মাজার কমিটির সভাপতি হাজী জালাল উদ্দিন ও উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক দৈনিক ইত্তেফাকের তাহিরপুর উপজেলা প্রতিনিধি আলম সাব্বির বলেন,প্রশাসন ও আমাদের পক্ষ থেকে মেলায় চাঁদা উঠানো নিষেধ থাকার পরও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের নামে চাঁদা উত্তোলন করতে গিয়ে আজাদ মিয়া গণধৌলায়ের শিকার হয়েছে।

    আহত ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া বলেন,সাংবাদিকদের নামে চাঁদা না দেওয়ায় আজাদ ও সাজ্জাদ আমাকে মারধর করে ১০হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। মেলায় আগত খেলনা ব্যবসায়ী রহম আলী,আব্দুল জব্বার, রহিম উদ্দিন,খলিল মিয়া,জাকির মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন,চাঁদাবাজি মামলার আসামী আজাদ ও সাজ্জাদের চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ট কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।

    তাহিরপুর থানার ওসি শহিদুল্লাহ বলেন,জরিমানা আদায় করাসহ হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে আজাদের বিষয়টি সালিশে সমাধান হওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

    উল্লেখ্য,তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও চাঁরাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতি সভাপতি জয়ধর আলীর কাছে ৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করার ঘটনায় চেয়ারম্যানের ছেলে পারুল খাঁ বাদী হয়ে গত ২৯শে জানুয়ারী কোট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-১০/২০১৫ইং ও কয়লা সমিতির সভাপতির ছেলে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২২শে জানুয়ারী কোর্ট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-০৮/২০১৫ইং আদালতে দায়ের করে চাঁদাবাজ আজাদ ও সাজ্জাদ মিয়ার বিরুদ্ধে।

    আজাদ ও সাজ্জাদের অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজানকে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে নির্যাতিত সাংবাদিক রাজু তাহিরপুর থানায় জিডি নং-৬৩১,তারিখ:২০/০৪/১১ইং দায়ের করলে,তাকে উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী করে। সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক মানবকণ্ঠ ও মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়ার কাছে ক্ষতি পূরণ বাবদ ১লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে।

    চাঁদা না দেওয়ায় হামলা চালিয়ে ১টি ডিবি ক্যামেরা,আধা ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও নগদ টাকা-পয়সা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এঘটনায় সাংবাদিক মোজাম্মেল বাদী হয়ে আজাদ ও সাজ্জাদসহ ১০জনের বিরুদ্ধে গত ২০১৩সালের ১৩ই মে সুনামগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধি আইনের ৪২০/৩৮৫/৩৮০/৩২৫/৩২৪/৩০৭ ও ৩৪ ধারায় মামলা নং-৪৪/২০১৩ইং দায়ের করেন।

    এই মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাঁদাবাজ আজাদ ও সাজ্জাদ সাংবাদিক মোজাম্মেলকে প্রাণনাসের হুমকি দেয়। এঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর থানায় একাধিক জিডি এন্টি করা হয়। এরপরও মামলা আপোষ না করায় কোন উপায় না পেয়ে সম্প্রতি তাহিরপুর থানা থেকে ডিবিতে বদলিকৃত বিতর্কিত এসআই জামালের পরামর্শে ও সার্বিক সহযোগীতায় আজাদ মিয়া তার ছেলে অপুকে আগুন দিয়ে পুড়ে সাংবাদিক মোজাম্মেলের নামে মিথ্যা এসিড মামলা দেয়।

    এসব ছাড়াও ২০০৫সালে ৩ জুলাই সীমান্তের রাজাই এলাকায় চোরাই কয়লা থেকে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে স্থানীয় জানতার হাতে ও ২০০৮সালের ১৪ই নভেম্বর বাদাঘাট বাজারে চাঁদাবাজির ঘটনায় ছাত্রদল নেতারা আজাদ ও সাজ্জাদকে গণধৌলাই দেয়। তাছাড়া এলাকার বিভিন্নস্থানে চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ২৫/০৪/২০১১ইং ০৫.৯০৫…০৬.০৩.০৩১.২০১১নং স্মারকে আজাদ ও সাজ্জাদকে তাহিরপুরের ইউএনও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

    ২০০৭সালের ৬আগষ্ট স্থানীয় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামে জমি রেকর্ডের নামে ঘুষ বাণিজ্য করায় তাহিরপুর থানার দূর্নীতি মামলা নং-৩,ধারা-১৬২/১১৪ দঃবিঃ এর আসামী সেটেলম্যান্ট অফিসার মোহাম্মদ আলী হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করলে, চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া পালিয়ে যায়।

    আজাদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়ার চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজাহিদ উদ্দিন আহমদ গত ০৪/০৫/২০১১ইং জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বড়ছড়া কয়লা আমদানী কারক সমিতির অর্থ সম্পাদক ব্যবসায়ী কুদ্দুছ মিয়ার কাছে চাঁদা চাওয়ায় আজাদ ও সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি মামলা নং-১১৫/২০১১ইং দায়ের করেন।

    তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী হাজী এলাহি বক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের কাছে ২০হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ায়,স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ গত ১১এপ্রিল ২০১২ইং তারিখে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানান। ২০০৪সালে এক শিশুকে বলৎকারের ঘটনায় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই নির্যাতিত শিশুর মা।

    এছাড়া রাতের আধাঁরে মোটর সাইকেল চালকের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হলে আজাদ ও সাজ্জাদ সালিশে নাকে খত দিয়ে হাতে-পায়ে ধরে রক্ষা পায়। এছাড়া মেয়েদের ইভটিজিংয়ের অপরাধে দুজনকে গলায় জুতার মামলা পড়িয়ে এলাকা গুড়ানো হয়।

    আজাদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়ার বিরুদ্ধে হেরুইন,ইয়াবা,অস্ত্র ও মদ-গাঁজা পাঁচার করাসহ আদালতে ৩টি চাঁদাবাজি মামলা,থানায় একাধিক মামলা ও জিডি এন্টিসহ ইভটিজিং,শিশু বলৎকার,গৃহবধু ছিনতাইয়ের চেষ্টায়,দালালির ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ছাড়াও বিভিন্ন দফতরে একাধিক অভিযোগ থাকার পরও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনদিন তাদের দাপট বেড়েইে চলেছে।

    তাদের অত্যাচারে সাংবাদিক,জনপ্রতিনিধি,ব্যবসায়ী,দিনমজুর,বালি-পাথার শ্রমিক থেকে শুরু সর্বস্তরের জনসাধারণ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। আজাদ ও সাজ্জাদের চাঁদাবাজি ও অত্যাচারের হাত থেকে অসহায় মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেছেন তাহিরপুর উপজেলাবাসী।