আমার সিলেট 24 ডটকম,১৭নভেম্বরঃ তারেককে বেকসুর খালাস এবং তারেকের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন আজ রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার প্রায় চার বছর পর এ মামলার রায় হলো আজ । মামলা দায়ের থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়াতেই অনুপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়া। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তারেকের ব্যবসায়িক অংশীদার মামুন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকার করেছেন ।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, এই রায়ে তারেক ন্যায়বিচার পেলেও মামুন তা পাননি। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি দুদকের আইনজীবীরাও। দুদকের প্রধান আইনজীবী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নিশ্চই আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। পুর্ণাঙ্গ রায় না পড়ে কিছু বলব না।একই কথা বলেন দুদকের আরেক আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এজলাস কক্ষেই উল্লাস শুরু করেন। পরে তারা নিচে নেমে আনন্দ মিছিল করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। বেলা ১২টার ঠিক আগে রায় পড়া শুরু করে প্রথামে মামুনের সাজার আদেশ ঘোষণা করেন বিচারক। এরপর তিনি তারেককে বেকসুর খালাস দিয়েই নিজের খাস কামরায় চলে যান।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এ রায় মানি না’। রায়ের পর আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এতোদিন তারেক রতমানের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা প্রচার হয়েছে, এ রায়ের মধ্য দিয়ে তার অবসান হলো। রায়েই প্রমাণ হলো- তারেক দুর্নীতি করেননি, অর্থ পাচার করেননি। আমরা এগিয়ে যাব।মামুনের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন বলেন, মামুনের প্রতি রায়ে অবিচার করা হয়েছে। আর তারেকের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ তো কোনো সাক্ষ্য প্রমাণই হাজির করতে পারেনি।আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, তারেক ন্যায়বিচার পেয়েছেন, তবে মামুন পাননি। তার জন্য আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
উল্লেখ্য, তারেক ও তার বন্ধু মামুনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৬ জুলাই এই মামলার বিচার শুরু হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি দায়ের হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর। গত বছরের জুলাই মাসে অভিযোগপত্র আদালতে দেয়া হয়।চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর বাদি ও আসামি পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়, যা শেষ হয় বৃহস্পতিবার।
মামলাতে অভিযোগ, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন।সিঙ্গাপুরে লেনদেনের পর সেখানকার সিটি ব্যাংকে মামুনের হিসাবে জমা রাখা এই অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তারেক খরচ করেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল।দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার শুনানিতে বলেন, তারেকের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে মামুন অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বাংলাদেশের ব্যাংককে ফাঁকি দিয়ে অর্থ পাচার করে দেন।২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পন্থায় ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
সে সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, মা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তখন ‘হাওয়া ভবন খুলে লুটপাট’ চালিয়েছিল তারেক।মামলায় অভিযোগ করা হয়, বনানীর নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে মামুন ওই অর্থ নিয়েছিলেন।তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তারের পর তারেকের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা হলেও এই প্রথম কোনো মামলার নিষ্পত্তি হলো।জরুরি অবস্থা জারির পর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান।স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তখন থেকে সেখানেই রয়েছেন তারেক। সম্প্রতি সেখানে দলীয় কয়েকটি অনুষ্ঠানেও তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে বলে অনেক পত্রিকায় খবর এসেছে।