তারেক কন্যা সম্পর্কে মুরাদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের অভিযোগে ৪ জেলায় মামলা

0
486
তারেক কন্যা সম্পর্কে মুরাদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের অভিযোগে ৪ জেলায় মামলা

আমার সিলেট ডেস্কঃ সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ও উপস্থাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দীন হেলাল ওরফে নাহিদ হেলালের বিরুদ্ধে গাজীপুর, সাতক্ষীরা, বরগুনা ও ঝিনাইদহে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার আদালতে এসব মামলা দায়ের করা হয়।

বুধবার ২২ ডিসেম্বর দুপুরে গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনজুর মোর্শেদ প্রিন্স বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। গাজীপুরের চীফ মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়সারুল ইসলাম মামলাটি তদন্তের জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন ডিবিতে পাঠিয়েছেন।

মামলার বাদী মনজুর মোর্শেদ জানান, ডিজিটাল মিডিয়া উপস্থাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ ওরফে নাহিদ হেলাল গত ১ ডিসেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের এক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সেখানে মুরাদ হাসান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, নারীবিদ্বেষী মর্যাদাহানিকর ভাষা ব্যবহার করেছেন। যা পরবর্তীতে মুরাদের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে প্রচার করা হয়। অশালীন মিথ্যাচার এবং নারীবিদ্বেষী ও নারীর প্রতি এই অবমাননামূলক বক্তব্য সকল নারীর জন্য মর্যদাহানিকর। এছাড়া জাতীয়বাদী শক্তিকে আহত করে মানসম্মান নষ্ট করেছে।

তিনি আরও জানান, বক্তব্যের ভিডিওটি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ফলে সমাজের সর্বমহলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মূলত উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য ও বক্তব্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবার এবং তার কনিষ্টতম সদস্য ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে সমাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে অপমান অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই ভিডিওটি প্রকাশ হয়। যা সার্বিকভাবে জিয়া পরিবারসহ সমগ্র নারী সমাজের জন্য মানহানিকর এবং অপমানজনক।

অপরদিকে মুরাদ বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৮ নং অনুচ্ছেদের তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী সাংবিধানিক শপথ গ্রহণ করেছিলেন, তা ক্রমাগতভাবে নানাবিধ বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে ইতিমধ্যে লঙ্গন করেছেন। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৫০৫-ক/৫০৯ ধারার বিধানে সুবিচার পাওয়ার জন্য মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার আইনজীবী গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, গাজীপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ডিবিকে তদন্তের জন্য দিয়েছেন। তদন্ত শেষে আদালতের মাধ্যমে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও উপস্থাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দীন হেলাল ওরফে নাহিদ হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার ২২ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলি আদালত এ মামলাটি দায়ের করেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ এখলেচার আলী বাচ্চু।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, ১ নং আসামি ডা. মুরাদ হাসান বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২ নং আসামি চট্রগ্রামের পটিয়া পৌরসভার তিন নং ওয়ার্ডের এটিএম আবুল কাশেমের ছেলে মুহাম্মদ মহিউদ্দীন হেলাল নাহিদ ওরফে নাহিদ হেলাল একজন মিডিয়া উপস্থাপক। গত ১ ডিসেম্বর উপস্থাপক নাহিদ হেলাল মুরাদ হাসানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। যা পরবর্তীতে এক নম্বর আসামি তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে প্রচার ও প্রকাশ করেন।

মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেছেন, এক নম্বর আসামি সাক্ষাতকার প্রদানকালে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়া পরিবার এবং ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নারীবিদ্বেষী এবং যে কোনো নারীর মর্যাদাহানিকর ভাষা ব্যবহার করেন।

বাদীর পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ। মামলার ধারা ১৫৩-ক/৫০৫-ক/৫০৯ পেনাল কোর্ড। বিচারক মো. হুমায়ুন কবীর মামলাটি গ্রহণ করে আদেশ পরে দেবেন বলে জানিয়েছেন। মামলার বাদী এখলেচার আলী বাচ্চু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতি মন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে বরগুনার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুহাম্মদ মাহবুব আলম মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী ও বরগুনা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন জানান, মামলায় সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও উপস্থাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হালিম, জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদ মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জুয়েলসহ ১৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার বাদী অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও উপস্থাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ। একজন আইনজীবী হিসেবে এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে নৈতিক দাযদায়িত্ব থেকে মামলাটি করেছি।

এ বিষয়ে মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াসি মতিন বলেন, মামলাটি বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গ্রহণ করেছেন। সেইসাথে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি তদন্তের পর আমরা ন্যায়বিচার পাব।

ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাস হাসান এমপিসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরাম ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মিলন বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, ডা. মুরাদ হাসান এমপি ও তার সহযোগী মুহাম্মদ নাহিদ হেলাল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও পরিবারের কনিষ্টতম সদস্য ব্যরিস্টার জাইমা রহমানকে সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে অপমান অপদস্থ করার জন্য ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এতে করে জিয়া পরিবারের সাথে সমগ্র নারী সমাজের মানহানি এবং অপমান করা হয়েছে। আসামিরা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ এবং প্রচারের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ঘৃনা-বিদ্বেষ সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন। ফলে ১৮৬০ সনের পেনাল কোডের ১৫৩-ক/৫০৫-ক/৫০৯ ধারার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ মামলায় বাদী নিজেসহ অ্যাড. আব্দুল আলীম, অ্যাড. রাকিবুল হাসান ও অ্যাড. রিয়াজুল ইসলাম স্বাক্ষী হয়েছেন।