ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রসেনার সমাবেশে বক্তারা

    0
    391

    দেশকে এগিয়ে নিতে গণকল্যাণমুখী রাজনীতি প্রয়োজন

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৩জানুয়ারী,মুহাম্মদ ফয়সাল শরীফঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত একমাত্র ইসলামী ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ৩ যুগ পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল ছাত্র সমাবেশ ও লাখো কণ্ঠে ইয়া নবী সালাম আলাইকা পাঠ করা হয়। আজ ২৩ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১০ টা হতে অনুষ্ঠিত ছাত্রসেনার ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব আল্লামা এম এ মতিন। ছাত্র সমাবেশ শেষে বিকেল ৩টায় ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো ছাত্র-যুব জনতা গেয়ে উঠেন “ইয়া নবী সালাম আলাইকা”। এসময় দুরূদ-সালামের সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। পরিশেষে এক বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়।

    ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদের অমর্যদা করে মর্যাদাশীল জাতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। দেশে আজ গণতন্ত্র, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই। রাজনৈতিক দলগুলো ও শাসকগোষ্ঠী নিজেদের দলীয় ও গোষ্ঠী স্বার্থে রাজনীতি করায় দেশবাসীর স্বার্থ উপেক্ষিত থেকে গেছে। অথচ এই গরিব দেশে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গণকল্যাণমুখী সমন্বয়ের রাজনীতি বড় প্রয়োজন। তিনি সরকারি দল ও বিরোধী দলকে দল ও গোষ্ঠী স্বার্থ থেকে বেরিয়ে এসে সমঝোতার ভিত্তিতে গণকল্যাণমুখী রাজনীতি করার আহবান জানান। পাশাপাশি সুফিবাদী মানবতাবাদী চেতনার ধারক ও বাহকরাই ইসলামের প্রতীক বলে তিনি উল্লেখ করেন। আল্লামা এম এ মান্নান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একমাত্র জাতীয় ইসলামী রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠন তথা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনাকে শক্তিশালী করতে দেশের সর্বস্তরের ছাত্র জনতার প্রতি আহবান জানান।

    প্রধান বক্তা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব আল্লামা এম এ মতিন পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পদক্ষেপ নেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানান। যুদ্ধপরাধের পাশাপাশি কোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যার অপরাধে মওদুদুীবাদী ও হেফাজতিদের বিচারের জন্য শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের দাবী জানান। নাশকতা কর্মের অর্থের যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের সু-স্পষ্ট ভূমিকা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন-বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এদেশের সুন্নী মুসলমানরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আইএস, আল-কায়েদার মানসপূত্র জামাত-হেফাজতিদের সাথে সরকারের গোপন আতাতের অভিযোগ তুলে ইসলামী ফ্রন্ট নেতা বলেন-সম্প্রতি ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় হেফাজতির কাছে সরকারের অসহায় আত্মসমর্পণ জাতিকে হতবাক করেছে। যারা ইসলামের কথা বলে বোমাবাজি ও কথিত জিহাদের ধোঁয়া তুলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদি তৎপরতায় লিপ্ত তাদের অপকর্মের যথার্থ বিচার দাবী করেন। আজকের দেশিয় ও বৈশ্বিক জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িতরা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং তারা ইসলামের কলংক। এদের প্রশ্নবিদ্ধ তৎপরতার ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ করতে হবে।

    বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব স. উ. ম আবদুস সামাদ সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তারকৃত কথিত জঙ্গিদের ব্যাপারে সরকারের সু-স্পষ্ট বক্তব্য দাবী করে বলেন, কওমী-হেফাজতিরা বিদেশের মাটিতে বসে আজ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কওমী মাদরাসা পরিচালনায় সরকারকে সু-স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় আনার জোর দাবী জানান।

    সম্মেলনে বক্তারা শিক্ষার্থী ভর্তির কোন নিয়ম-নীতি না করার সুযোগে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগামহীন বেতন ও ভর্তি ফি: বাড়ানোর তীব্র নিন্দা এবং ইতিমধ্যে অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থ ছাত্র-ছাত্রীর বেতনের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির আহবান জানান।

    সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতী বলেন, ছাত্র রাজনীতি পেশি শক্তি নির্ভর হওয়ায় চলমান ঘুণে ধরা ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে ছাত্র সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় ছাত্রসেনা। সুন্নিয়ত প্রচারে ও জ্ঞানবান্ধব ছাত্র রাজনীতির পুরোধা ছাত্রসেনার আদর্শিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে তিনি ছাত্র সমাজের প্রতি আহবান জানান।

    ছাত্র সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন রব্বানী। ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- পীরে তরিক্বত আল্লামা আবদুল করিম সিরাজনগরী, আলহাজ্ব শাহ্ আহসানুজ্জামান, আল্লামা সৈয়দ মসিহুদ্দৌলা, আল্লামা আবুল কাশেম নূরী, আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, গাজী এম এ ওয়াহীদ সাবুরী, আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধূরী হারুন, আবু জাফর মুঈনুদ্দীন, সৈয়দ মোজাফফর আহমাদ, এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, অধ্যাপক এম এ মোমেন, আল্লামা মাসউদ হোসাইন আলকাদেরী, কাজী মুহাম্মদ সোলায়মান চৌধুরী, অধ্যক্ষ আলী মুহাম্মদ চৌধুরী, এডভোকেট কাজী ইসলাম উদ্দীন দুলাল, মুহাম্মদ আবদুল মতিন, এম এ মাবুদ, খাজা ফারুক আহমদ, ফিরোজ আলম
    খোকন, মুহাম্মদ আজিজুর রহমান আজিজ, গোলাম মুহাম্মদ ভুইয়া মানিক, মুহাম্মদ আবদুল হাকিম, সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম, মুহাম্মদ আখতার হোসেন চৌধুরী, আবু নাছের মুহাম্মদ মুছা, মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, মুহাম্মদ জাফর আলম সিদ্দিকী, মনজুর মোরশেদ, আজিম উদ্দিন আহমেদ, মুহাম্মদ সাদেকুর রহমান খান, মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, মুহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন, জি এম শাহাদত হোসাইন মানিক, নুরুল্লাহ রায়হান খান, ইসতিয়াক রেজা, ওয়ালিদ হুসাইন, এইচ এম শহিদুল্লাহ, জয়নুল আবেদিন, ইমরান হোসাইন তুষার, কাউসার হামিদ, আমান উল্লাহ আমান, নিজামুল করিম সুজন, কাউসার হামিদ রুবেল, ফয়সাল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

    ছাত্র সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন রব্বানী ছাত্র সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে সহযোগিতাকারী এবং সমবেত ছাত্র জনতার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।