টেন্ডার নিয়ে তান্ডব সাবেক এমপির বাড়িতে বোমা হামলা  

    0
    276

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪মার্চ,এম ওসমানঃ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্র্রায় ১০ কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নিতে যশোরে ব্যাপক বোমাবাজি করেছে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। তারা যশোর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর বাড়িতেও বোমা হামলা এবং তার ছেলেকে পিটিয়ে আহত করেছে।

    তবে ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক গ্রুপ জড়িত থাকায় সরকারি কর্মকর্তারা বিস্তারিত জানাতে চাইছেন না। এমনকি ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত, ঘটনার সময় কয়জন আহত হয়েছেন, তাও বলতে চাইছেন না কেউ।

    যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের একটি ছাত্রাবাস ও একটি ছাত্রীনিবাস তৈরির জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর টেন্ডার আহ্বান করে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ১০ কোটি টাকার এ কাজ করতে ইচ্ছুক ঠিকাদারদের জন্য মোট তিনটি সরকারি দফতরে টেন্ডার বাক্স খোলা হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় টেন্ডার ড্রপিংয়ের শেষ সময় ছিল।

    শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের পাশেই সকালে ওয়ার্কার্স পার্টি অফিসে অবস্থান করছিলেন দলটির জেলা সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু।

    তিনি জানান, যশোর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর ছেলে মাশুক হাসান জয় ও হাবিব হাসান বাবু সকাল ১০টার দিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেন্ডার ড্রপ করতে যান। এ সময় ওই দপ্তরটিতে অবস্থানরত অজ্ঞাত যুবকরা টেন্ডার ড্রপে বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে হাবিব হাসান বাবু তার কয়েক সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে ফের টেন্ডার ড্রপ করতে যান। এ সময় সেখানে অবস্থানরত সন্ত্রাসীরা বাবুর ওপর চড়াও হয়। শুরু হয় বোমাবাজি। প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে দুই পক্ষই বোমা মারতে থাকে। এক পর্যায়ে খালেদুর রহমান টিটোর ছেলেরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের ধাওয়া করে পাশের ষষ্ঠিতলা পাড়ার মধ্যে নিয়ে যায়। এ সময় খালেদুর রহমান টিটোর বাড়িতে অন্তত তিনটি বোমা মারা হয়। এর মধ্যে দুটি বোমা বাড়ির মধ্যে গাড়ির গ্যারেজের কাছে বিস্ফোরিত হয়। অন্যটি বিস্ফোরিত হয় বাড়ির গেটে।

    শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন বলেন, ‘অফিসের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিছু ঘটে থাকলে তা বাইরে। সেখানে পুলিশ আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলুন।’

    এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘কতজন ঠিকাদার টেন্ডার জমা দিতে পেরেছেন তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তিন স্থানে রক্ষিত টেন্ডার বাক্স দুপুর ৩টার দিকে খোলা হবে।’

    ঘটনা জানতে যশোর জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

    জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের সিনিয়র এএসপি রেশমা শারমিন বলেন, ‘আমি অন্য কাজে ব্যস্ত আছি। ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না।’

    কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাছ আলী বোমাবাজির কথা স্বীকার করে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর লোকজনই দুটি বোমা মেরেছে।’

    এক প্রশ্নের জবাবে ওসি দাবি করেন, যারা টেন্ডার জমা দিতে চেয়েছিল, তারা সবাই জমা দিতে পেরেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

    সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো অভিযোগ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা ঠিকাদারদের টেন্ডার ড্রপ করতে দেবে না এটি জানতে পেরে আমি সকালেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেননি। এরপর আমার দুই ছেলে টেন্ডার ড্রপ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়ে। সন্ত্রাসীরা আমার ছোট ছেলে বাবুকে চাকু মেরেছে। আমার বাড়িতে বোমা হামলা করেছে।’

    জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মুস্তাক বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, দুটি কাজের একটি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিতকুমার নাথ এবং আরেকটি জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি আলী রেজা রাজুর লোকেরা নেবে বলে অন্যদের টেন্ডার ড্রপ করতে বাধা দেয়। পরের ঘটনা জানি না। বোমাবাজির সময় আমি শহরের অন্য প্রান্তে ছিলাম।’

    যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত নাথ বলেন, ‘আমি কোনো টেন্ডারবাজির মধ্যে নেই। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স আমার আছে। কিন্তু গত ১৮-২০ বছর আমি ঠিকাদারি করি না।’

    ‘ঘটনার ব্যাপারে টিটো ভাইয়ের ছেলে জয় আমার সঙ্গে ফোনে দু’বার যোগাযোগ করেছে। কিন্তু আমি তো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না।