টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত

    0
    237

    আমারসিলেট24ডটকম,০৫এপ্রিলঃ অপরাজিত জয়ের ধারা অক্ষুন্ন রেখে এবারের টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছে অন্যতম শিরোপা প্রত্যাশি ভারত। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলংকার প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের তুলে নিয়ে আসে ধোনি বাহিনী। প্রত্যাশিত এই জয়ের ফলে নিজেদের শিরোপা জয়ের দাবিকে আরো জোরালো করে নিল সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান সংগ্রহ করে। সর্বোচ্চ ৫৮ রান সংগ্রহ করেন অধিনায়ক ডু পে¬সিস। অপরাজিত থেকে ৪৫ রান সংগ্রহ করেন জেন পল ডুমিনি। ভারতের হয়ে তিন উইকেট লাভ করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। জবাবে ৫ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহের মাধ্যমে জয়ের লক্ষ্য পূরণ করে ভারত। অপরাজিত ৭২ রান সংগ্রহ করেন বিরাট কোহলি। অজিনকা রাহানে সংগ্রহ করেন ৩২ রান। বেউরান হেনড্রিকস লাভ করেন দুই উইকেট।

    প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই প্রোটিয়াস শিবিরে আঘাত হানে ভারত। দলের ওপেনিং বোলার ভুবনেশ্বর কুমার ডু পে¬সিসকে বিদায় করেন ব্যক্তিগত ৬ ও দলীয় ৯ রানের মাথায়। বলটি প্রোটিয়া ওপেনার ডি ককের ব্যাটে আলতো ছোয়া লেগে সরাসরি আশ্রয় নেয় উইকেট রক্ষক ধোনির হাতে। নি:সন্দেহে একটি ব্রক থ্রু ভারতীয়দের জন্য। তবে আম্পায়ারের ওই আউটের সিদ্ধান্তে খুব একটা সন্তুষ্ট মনে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানকে। টেলিভিশন রিপে¬তেও আউটটি খুব একটা যুথসই মনে হয়নি। তবে ওই উইকেটটি লাভের মাধ্যমে দারুণ আত্মবিশ্বাস লাভ করে ভারত। দমেনি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরাও। প্রথম উইকেটটি হারানোর পর কিছুটা রক্ষনাত্মক মেজাজে খেলার মাধ্যমে অবশ্য প্রথমিক বিপর্যয় সামলেই নিয়েছিল হাসিম আমলা ও ফাফ ডুপেসিস জুটি। পাওয়ার পে¬তে সুযোগটিকে শেষদিকে কাজে লাগিয়ে হাসিম আমলা ১৬ বলে পৌছে যান ২২ রানে। সেই সঙ্গে দলকে টেনে নিয়ে যান ৪৪ রানে।
    অবস্থা বেগতিক দেখে স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের হাতে বল তুলে দেন ভারতীয় অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি। নিরাশ করেননি অশ্বিন। ওভারের প্রথম ক্যারম বলেই তিনি সরাসরি বোল্ড আউট করে ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠতে থাকা হাসিম আমলাকে। আমলা চারটি বাউন্ডারী হাকিয়ে ২২ রান সংগ্রহ করেন আমলা। এরপর অধিনায়ক ডুপেসিস ও পল ডুমিনি সম্মিলিত ভাবে উইকেট সামলে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তবে রান সংগ্রহের গতি ছিল কিছুটা স্লথ। পরে অবশ্য রানের গতি বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয় তারা। ফলে আফ্রিকানদের থামাতে আবারো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন অশ্বিন। বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ৪১ বলে ৫৮ রান সংগ্রহকারী প্রোটিয়া অধিনায়ককে। পে¬সিসের ওই ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫টি চার ও ২টি ছয়ে। অবশ্য অধিনায়ক যখন সাজঘরে ফিরছিলেন তখন প্রোটিয়াসদের দলীয় সংগ্রহ পৌছে যায় ১১৫ রানে। এরপর ডুমিনির সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন সাবেক অধিনায়ক এবিডি ভিলিয়ার্স। তবে অফ ফর্মে থাকা আফ্রিকান ওই ব্যাটসম্যানকে খুব একটা সুবিধা করতে দেননি সেই অশ্বিন । ব্যক্তিগত তৃতীয় উইকেট হিসেবে ভিলিয়ার্সকে (১০) ফিরিয়ে দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ডুমিনির অপরাজিত ৪৫ ও ডেভিড মিলারের ২৩ বলে ভর করে ৪ উইকেটে ১৭২ রান করতে সক্ষম হয় আফ্রিকানরা। ডুমিনি ৪০ বলে ১টি চার ও ৩টি ছয়ের সম্মিলনে ৪৫ ও মিলার ১২ বলে ২টি চার ও একটি ছয় হাকিয়ে অপরাজিত ২৩ রান সংগ্রহ করেন। অশ্বিন চার ওভার বল করে ২২ রানের বিনিময়ে লাভ করেন এক উইকেট। ৩৩ রান দিয়ে একটি মাত্র উইকেট নেন ভুবনেশ্বর কুমার।
    ১৭৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে আফ্রিকান ব্যাটিংয়ের জবাব দিতে গিয়ে ভারতীয়দের সুচনাটা মন্দ হয়নি। দলটি তাদের প্রথম উইকেটটি হারায় দলীয় ৩৯ রানে ৩.৫ ওভারে। ওপেনার রোহিত শর্মা হেন্ড্রিকসের শিকার হিসেবে ডু পে¬সিসের হাতে বন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরে যাবার আগে ১৩ বলে ৪টি চার ও একটি ছয় হাকিয়ে সংগ্রহ করেন ২৪ রান। ভারতীয় দল যখন ৭৭ রানে তখন হারায় দ্বিতীয় উইকেট। এবার আজিনকা রাহানে ব্যক্তিগত ৩২ রানে সাজঘরে ফিরেন পার্নেলের শিকার হয়ে। তার ব্যাটের বলটি তালুবন্দি করেন ডি ভিলিয়ার্স। রাহানে তার ইনিংসটি সাজান ২টি চার ও একটি ছয়ে।
    এরপর বিরাট কোহলি ও যুবরাজ সিং নতুন করে হাল ধরেন ভারতীয় দলের। সংযমি ব্যাটিং দিয়ে তারা ধীরে ধীরে লক্ষ্য অর্জনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল ভারতীয়দের। ইতোমধ্যে হাফ সেঞ্চুরি পুর্ণ করে ফেলেন কোহলি। ৩৫ বলের মোকাবেলায় ওই মাইলফলক অতিক্রম করেন কোহলি। কোহলির ওই সফলতার পরই দলকে ১৩৩ রানে পৌছে দিয়ে ব্যক্তিগত ১৮ রানে মাঠ ছাড়েন যুবরাজ সিং। তিনি ১৭ বলে ২টি চারের সহায়তায় ওই রান সংগ্রহ করেছেন।
    যুবরাজের বিদায়ের পর সুরেশ রায়না মাঠে এসেই উত্তাপ ছড়িয়ে দেন। দ্বিতীয় বলে ছয় হাকিয়ে রানের গতি বাড়িয়ে দেন তিনি। ফলে ভারত খুব দ্রুতই এগিয়ে চলে আরেকটি জয়ের পথে। ব্যক্তিগত ২১ রান সংগ্রহ করে রায়না যখন ক্রিজ ছাড়েন তখন জয় থেকে মাত্র ৬ রান দুরে ভারত। ধোনিকে ছায়া সঙ্গী করে ওই পথ অতিক্রম করতে বেগ পেতে হয়নি কোহলিকে। এক রানের লক্ষে শেষ ওভারের প্রথম বলটি বাউন্ডারী ছাড়া করে ভারতকে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌছে দেন ম্যাচ সেরা কোহলি। ৪৪ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকা কোহলি তার ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৫টি বাউন্ডারী ও ২টি ওভার বাউন্ডারীতে। আর এর ফলশ্রুতিতে তিনিই হয়েছেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ।