ঝুঁকি জেনেও হাসিমুখে সেবা দিচ্ছে কমলগঞ্জে তিন স্বাস্থ্যসেবী

    0
    227

    শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জ: বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মূখ সারিতে থেকে লড়াই করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা সংকটের শুরু থেকেই পরিবারের কথা না ভেবে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে সমানতালে কাজ করছেন তিন করোনাযোদ্ধা কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সৌমিত্র সিনহা, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) সুর্নিমল কুমার সিংহ ও মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আশরাফুল আলম।

    করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তারা ছুটে যাচ্ছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। আবার করোনা পজিটিভ আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন।

    একই সঙ্গে হাসপাতালে আসা উপসর্গের রোগীদের নমুনা সংগ্রহের পর সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানোর দায়িত্বও পালন করছেন তারা। তাদের পরিবারের সদস্যরা নিজেরা করোনা আতঙ্কে থাকলেও নমুনা সংগ্রহের এ দায়িত্ব পালনে সম্মতি দেন।

    আর এতে নিষ্টার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন এই তিনজন। তারা বিরামহীন দিন-রাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও আক্রান্তদের নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন তারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সচেতন লেঅকজন যখন নিরাপদে বাসা-বাড়িতে থাকছেন, তখন কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসিমুখে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মহামারীর এই সময়ে দায়িত্ব পালনে নানা প্রতিকূলতা থাকলেও, সেবা দিতে পেরেই গর্বিত তারা।

    মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) সুর্নিমল কুমার সিংহ বলেন, এ রকম মহৎ কাজে জড়িত হয়ে মানুষের সেবা দিয়ে যেতে পারছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি।’মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আশরাফুল আলম বলেন, সরকারি চাকরির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে। এ কারণে আমরা যতœ সহকারে উপসর্গের রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করি। এজন্য বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশী কেউই আমাদের কাছে আসতে চায় না। তাদের ধারণা আমরা যেন করোনাভাইরাস নিয়ে বসে আছি, তখন কষ্ট পাই।

    কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৬ জুন) ৩ জনসহ কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৬৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে মোট ২৭ জনের পজেটিভ রিপোর্ট আসে। সুস্থ হয়েছেন ৭ জন। করোনার সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলেই কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিম নমুনা সংগ্রহ করতে ছুটে যান। ঈদসহ অনেক আনন্দকে পাশ কাটিয়ে দিনের পর দিন জীবনের ঝুুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে এই সংকটময় মুহুর্তে তাঁরা মানবতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা মনে রাখবে চিরকাল কমলগঞ্জবাসী। তাদের ত্যাগ ও অবদান নিঃসন্দেহে অভিবাদন পাওয়ার যোগ্য। করোনাকালে করোনাযুদ্ধের অগ্রসৈনিক এই স্বাস্থ্যকর্মীরা।

    কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডাঃ এম, মাহবুবুল আলম ভূঁইয়ার নির্দেশনায় নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নমুনা সংগ্রহ টিমের সদস্যরা হলেন- মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সৌমিত্র সিনহা, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) সুর্নিমল কুমার সিংহ ও মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আশরাফুল আলম। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ জয়দ্বীপ পাল, আব্দুল আউয়াল ও অভিজিত সিংহ।
    করোনা যোদ্ধারা জানান, সমাজের অনেকেই করোনা রোগীদের পাশাপাশি আমাদেরকেও খারাপ চোখে দেখে, খারাপ মন্তব্য করে। তবুও পরিবারের সবাইকে নিরাপদ রেখে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিজের কর্মক্ষেত্রকে সম্মান করে কাজ করে যাচ্ছি। তারা সবাইকে অনুরোধ করেন বলেন, করোনায় সংক্রমিত হওয়া কোন অপরাধ নয়। করোনা পজেটিভ মানেই মৃত্যু নয়। করোনা রোগীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখান, সামাজিক সচেতনতাই পারে করোনা ভয়কে জয় করতে।
    আলাপকালে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এম, মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই তিনজন সার্বক্ষণিক নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। এছাড়া আরো তিনজন পর্যায়ক্রমে সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করছেন।

    এ পর্যন্ত উপজেলায় ৩৬৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে এ উপজেলায় মোট ২৭ জনের পজিটিভ এসেছে। পজিটিভের মধ্যে মোট ৭ জন সুস্থ আছেন। তারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

    তিনি আরো বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতিমধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড-১৯ এর সুরক্ষা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি বেড নিয়ে আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে।