ঝিকরগাছা ভূমি অফিস চাঞ্চল্যকর দুর্নীতি ফাঁস

    0
    574

    সহকারী কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকিতে থানায় জিডি

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫ডিসেম্বর,এম ওসমান: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা ভূমি অফিসের চাঞ্চল্যকর দুর্নীতি ফাঁস হয়ে পড়ায় একজন ভূমিসহকারীকে মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দাবী করে ঝিকরগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী পারভীন নাহার। জিডি নং- ৫৭৬ তাং ১৩/১০/২০১৫ইং। প্রতিকার না পেয়ে তিনি গত ১৭/১০/২০১৫ইং তারিখে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানাগেছে।

    এদিকে ঘটনার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ কিংবা জেলা প্রশাসন হুমকি দাতাকে চিহিœত করা কিংবা আইনের আওতায় আনতে পারেনি বলে অভিযোগ। ফলে, চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগচ্ছেন পারভিন নাহার ও তার পরিবার। বিভিন্ন সময়ে এক অজ্ঞাত মোবাইল ফোনের অব্যাহত হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত সহকারী কর্মকর্তা পারভীন নাহার ও তার স্বামী অধ্যাপক মোঃ শাহাজান আলী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া তিন ছেলে-মেয়ে।

    তিনি বর্তমানে উপজেলা আবাসিক কোয়াটার ৭/৮ ‘শান্তিনীড়ে’ আতংকিত দিন কাটাচ্ছেন বলে উদ্বেগের সাথে জি,ডিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত বেশ কিছু দিন ধরে ০১৭৫৩-৭৯৮৩৪০, ০১৭৪৩-০৬৭৪৮১, ০১৭৪২-৯৯৪৯১৫, ০১৯৫৯- ৯৫৫৮৮৩ ও ০১৯৫৭- ৩৮২৭৭৭ নম্বর থেকে ০১৭১৮- ০৯২০৯০ নম্বরে বিরামহীন ভাবে তাকে অশ্লীল গালিগালাজ ও জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে বলে জিডিতে উল্লেখ করেন তিনি।

    ফলে, “নিরাপত্তাহীনতার কারণে তার সরকারী কাজে দায়িত্ব পালনে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে ইত্যাদি”। এদিকে কি কারণে এবং কে বা কারা তাকে মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সুনির্দ্দিষ্ট কোন অভিযোগ না করলেও “ঘরের শত্রু বিভীষণ” এমনটায় সন্দেহ করছেন তিনি।

    উল্লেখ করা যেতে পারে সম্প্রতিক ঝিকরগাছা উপজেলা ভূমি অফিস, ঝিকরগাছা ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিস এবং বাঁকড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘিরে চাঞ্চল্যকর একাধিক দুর্নীতির খবরাখবর বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে-হচ্ছে। আলোচিত ঘটনার মধ্যে ঝিকরগাছা শহরের “চুরিপট্টিতে” একটি ‘বিতর্কিত’ সম্পত্তিতে সুপার মার্কেটসহ বহুতল ভবন নির্মাণে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বাধা প্রদানের নির্দেশ দেন।

    ওই নির্দেশে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের থানা পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার শর্তে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ছাড়িয়ে নিয়ে জান। এপর্যায়ে মালিক পক্ষ বিজ্ঞ আদালতের কৌশলীর ‘মতামতের’ ভিত্তিতে রহস্যজনকভাবে নির্মাণ কাজের অনুমতি পেয়েছেন বলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী ও উপ-সহকারী কর্মকর্তা সূত্র জানান।

    বিজ্ঞ কৌশলীর ‘অস্পষ্ট স্বাক্ষরিত স্থানে কোন সীল ও পরিচিতি কোড নম্বর না থাকায় ইউনিয়ন ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সচেতন মহলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়’। একটি বিশ্বস্ত সূত্রের দাবী, সহকারী কর্মকর্তা পারভীন নাহার বিজ্ঞ কৌশলীর মতামতের প্রতি ‘সম্মতি’ না দিয়ে সরকারের স্বার্থ রক্ষায় লিখিত মতামত দেওয়ায় একটি স্বার্থন্বেষী মহল তার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। ওই মতামতের প্রতি সম্মতি দেন সদ্য যোগদানকারী সহকারী কর্মকর্তা নুরুল আমিন। পারভীন নাহারের বদলির এটিও একটি কারণ হতে পারে বলে জানাগেছে।

    তবে মোবাইল ফোনে হুমকির সাথে এসব ঘটনার যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবী রাখে। অপর দিকে বাকড়া ইউনিয়নের মাটশিয়া জেল নং- ১৬০, খতিয়ান নং- ১১০৯, দাগনং- ১৮৬২ ও পৃথক খতিয়ান নং- ১১৩৯, ১১৩৬ দাগ নং- ১০৬২,১০৬৩,১০৬৪ বুজারত- ৩৫৪ ডিপি-৬১৬, হাল- ১২৯৩ দাগসহ অন্যান্য বিভিন্ন দাগের একই মালিকানাধীন সম্পত্তির বাদী ঊষা রাণী বসুর নামজারী কেসসহ অন্যান্য তথ্য গোপন করে কথিত ভিপি তালিকা দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের নামে বার্ষিক ইজারা বন্দোবস্ত প্রদান করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণনগর মৌজার জেএল নং ৬৮, নামপত্তন কেস নং ৫৭৩//১০/১১ বাদী সালাউদ্দীন ও নামপত্তন কেস নং ১৪০১//১০/১১ বাদী শিউলী বেগম একই সম্পত্তি দুজনের নামে জারি কেস মুলে নামপত্তন হয়।

    এই ঘটনা জানাজানি হলে জনমনে কৌতুহল সৃষ্টির পাশাপাশি খোদ সহকারী ও উপ-সহকারী কর্মকর্তা ছাড়াও উপজেলা ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।

    এসব ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় পরস্পরকে দায়ী করা হয়। এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পারভীন নাহার দীর্ঘদিন ধরে পৌর ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন।

    তাকে গত ১৭/০৯/২০১৫ইং তারিখে উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের গদখালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়। গদখালী ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে তার স্থলাভিষক্ত হন সহকারী নুরুল আমীন।