জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যা তুলে ধরতে মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

0
355
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যা তুলে ধরতে মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যা তুলে ধরতে মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

আমার সিলেট ডেস্কঃ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা বা ব্যাখ্যা তুলে ধরতে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই নির্দেশ দেন। এদিকে ভেজাল বা লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘ওষুধ আইন ২০২২’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

এছাড়া মন্ত্রিসভা আধুনিক ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম শিল্পপণ্য উৎপাদনের শক্তিশালী ভিত তৈরির লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২’-এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের শুল্ক বিভাগের যোগাযোগ স্থাপন এবং বাণিজ্য সহজ করতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন এ্যান্ড মিচুয়াল এ্যাসিস্ট্যান্স ইন কাস্টমস মেটার্স’ শীর্ষক চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের একথা বলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা বা ব্যাখ্যা তুলে ধরতে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এরই মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) চেয়ারম্যান তো প্রেসে বিস্তারিত বলেছেনই।

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলে কি দেশেও কমবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলো নিয়ে তো ইতিপূর্বে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এটা একটা টেকনিক্যাল বিষয়। স্বল্প পরিসরে আমি ব্যাখ্যা দিলে অনেক প্রশ্ন আসবে, উত্তরও হয়ত দেয়া যাবে না। এজন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে বলে দেয়া হয়েছে। তাদের আবার ব্রিফ করতে বলা হয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, সরকার যে যুক্তিতে দাম বাড়িয়েছে এটা তারা করতে পারে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ জিনিসগুলোই আলোচনা হয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয় বা বিপিসিতে বলা হয়েছে তারা যাতে দ্রুত বিষয়গুলো পরিষ্কার করে।

সরকার কি জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলো মন্ত্রণালয় ব্রিফিংয়ে সব ক্লিয়ার করবেন। খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, মূলত তারা পুরো বিষয়টি মন্ত্রিসভাকে বিস্তারিত জানিয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভা কোন মতামত দেয়নি, তবে বলে দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয় যাতে এ বিষয়টি ক্লারিফাই করে মানুষের সামনে তুলে ধরে।

ভেজাল বা লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ উৎপাদনে ১০ বছরের জেল ॥ ভেজাল বা লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘ওষুধ আইন, ২০২২’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা অনেক বড় আইন। এটার অনেক বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ মেনশন করা আছে, বিশাল। এই আইনে ১০৩টা ধারা রয়েছে।

খসড়া আইনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওষুধ প্রশাসন কিভাবে হবে, ওষুধ প্রশাসনের কার্যক্রম কী হবে, ওষুধ প্রশাসন মান কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, এটার একটা এক্সিকিউটিভ বডি থাকবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয়, মজুদ, বিতরণ ইত্যাদির জন্য কিভাবে লাইসেন্স দেবে, ফি কত হবে, লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা কী থাকবে- এগুলো তারা ঠিক করবে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স আবার যদি কেউ ভুলত্রুটি করে বা অন্যায় কিছু করে, কিভাবে তার লাইসেন্স স্থগিত করা যাবে সেটাও এই আইনে উল্লেখ করা আছে। কেউ যদি তার লাইসেন্সের বাইরে কিছু উৎপাদন করে তাহলে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া যাবে সেগুলো উল্লেখ করা আছে।

তিনি বলেন, একটা অর্ডিন্যান্স হয়েছিল ১৯৮২ সালে, ‘ড্রাগ অর্ডিন্যান্স ১৯৮২’, আর ১৯৪০ সালে একটা ড্রাগ এ্যাক্ট ছিল। ওই দুইটাকে এক করে এখন এটা আপগ্রেড করা হলো। আর ১৯৮৪ সালে ছিল ওষুধ নীতিমালা, ওটা একটা বড় গাইডলাইন হিসেবে কাজ করেছে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়াই যদি কিছু করে তাহলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া যাবে।

কোন প্রতিষ্ঠান প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিক্রির জন্য ওষুধ মজুদ করতে পারবে না। তিনি বলেন, সরকারী ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ এগুলো কোনভাবেই যেন আর্থিক লেনেদের মধ্যে না আসে। লাইসেন্স ছাড়া কোন ওষুধ আমদানি করা যাবে না। কেউ আনতে পারবে না কোন রকম ওষুধ।

খসড়া আইনে বড় ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়া আইনে ৫৪ থেকে ৭৫ ধারা পর্যন্ত প্রায় ২২টা ধারাতে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এগুলো একটা পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে যে, এত ধারাতে শাস্তি না দিয়ে এটাকে গ্রুপ করে অল্প কয়েকটিতে আনা যায় কিনা।

এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কেউ যদি ওষুধ আমদানি করে তাহলে তার ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। যদি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ উৎপাদন, রফতানি, বিক্রয়, বিতরণ, মজুদ অথবা প্রদর্শন করে তাহলে তাকেও একই শাস্তি পেতে হবে।

ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয়, মজুদ করলেও ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১০ বছরের জেল। সরকারী ওষুধ চুরি করে যদি কেউ বিক্রি করে তাহলে তারও ১০ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা হবে। প্রত্যেক জেলা সদরে একটা করে আদালত থাকবে। ড্রাগ অথরিটি তদন্ত করবে, যেহেতু এটা টেকনিক্যাল বিষয়। তদন্তটা তারা করবে।

নতুন শিল্পনীতি অনুমোদন ॥ আধুনিক ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম শিল্পপণ্য উৎপাদনের শক্তিশালী ভিত তৈরির লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশীয় কাঁচামাল ও সম্পদের সুষম ব্যবহার করে শিল্পোয়নের পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করবে এ নীতি।

তাছাড়া, খাতভিত্তিক উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমানের উৎকর্ষ সাধনের জন্যই এ শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ শিল্পনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সক্ষম শিল্পপণ্য উৎপাদনের শক্তিশালী ভিত তৈরি হবে।

তিনি বলেন, এ নীতিগ্রন্থে ২০টি অধ্যায় রয়েছে। এটি রফতানিমুখী শিল্পের উন্নয়ন-বহুমুখীকরণ, সেবা খাতের উন্নয়ন, আইসিটিভিত্তিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, শিল্প খাতের অবকাঠামো শক্তিশালী করতে, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বেসরকারী বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে নীতিমালাটি বেশ ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া, অবকাঠামোগত বাধা দূর করাসহ মানবসম্পদ উন্নয়নেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাণিজ্য সহজ করতে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি ॥ দুই দেশের শুল্ক বিভাগের যোগাযোগ স্থাপন এবং বাণিজ্য সহজ করতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন এ্যান্ড মিচুয়াল এ্যাসিস্ট্যান্স ইন কাস্টমস মেটার্স’ শীর্ষক চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য সার্বিয়ায় ভিসামুক্ত যাওয়া-আসা নিশ্চিতে দেশটির সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

চুক্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে এ চুক্তি হচ্ছে। মূলত দুই দেশের শুল্ক বিভাগের যোগাযোগ স্থাপন ও বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য এটা করা হয়েছে। এর ফলে পাঁচটি সুবিধা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে, দুই দেশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ সুসংহত হবে, পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য ও চোরাচালান প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে, গোয়েন্দা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা দেয়া যাবে এবং শুল্ক বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সৌদি আরবের কাছ থেকে আমরা কো-অপারেশন নিতে পারব।

সার্বিয়ার সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তির বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেক দেশের সঙ্গে এ রকম চুক্তি করছি। সার্বিয়ার সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হলো কূটনৈতিক বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট যাদের থাকবে, তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভিসা নিতে হবে না। এ চুক্তি সই হলে সার্বিয়া যেতে বাংলাদেশী কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা লাগবে না। একই নিয়ম সার্বিয়ার কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।জনকণ্ঠ থেকে