জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট উপজেলার সাধারন ভোটারদের ভাবনা

    0
    320

    ‘হড্ডা-হাড্ডি লাড়াই হবে ইমরান-সেলিম এর মধ্যে’

    রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি: বাজারে বহুতে মাতামাতি করের (অনেকে বলাবলি করছেন) ভোটও ঝামেলা ওইবো। তাঁরা কর ভোটও বোমা মারতে পারে, মাইর ওইতে পারে। কিন্তু আমার মনে ওয় এখন যে নিরাপত্তা দেওয়া ওর মাঠে সেনাবাহিনী সহ অন্য বাহিনীরা কাজ করছে এতে বোমা মারা কিংবা ঝামেলা করার কোনো সুযোগ নাই। কথা গুলো বলছিলেন জৈন্তাপুরের দরবস্ত বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী জামিল আহমদ।
    গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা হয়। দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সব প্রার্থীরই ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন বাজার এবং সড়কে দেখা গেছে। ভোটাররা বলছেন, উপজেলা গুলোতে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থক কিংবা দলীয় ভোট রয়েছে মোট ভোটের অর্ধেক। বাকী অর্ধেক সাধারণ ভোটার। সাধারণ ভোটাররা যে দিকে ঝুকনেবেন সে প্রার্থীই সিলেট-৪ আসনে বিজয়ী হবেন। ভোট কেন্দ্রে কোনো ঝামেলার খবর ছড়িয়ে পড়লেও ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে। জৈন্তাপুর উপজেলা সদর এলাকায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও থুবাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটো কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে জৈন্তাপুর সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ভারতের কয়লা খনি কিংবা পাথর খনিতে বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যবহৃত বিস্ফোরক পাওয়ার জেল, ডেটোনেটর উদ্ধার করেছিল বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিস্ফোরক উদ্ধার ও জব্দের ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতংক রয়েছে।

    তাঁরা বলছেন, নির্বাচনের সহিংসতায় এসব বিস্ফোরক ব্যবহৃত হতে পারে। এর ভয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে। সিলেট-৪ আসন থেকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ ইমারন আহমদ, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন এ.টি.ইউ তাজ রহমান, বাংলাদেশ বিপ্লবি ওয়াকার্স পার্টির কোদাল প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন মনোজ কুমার সেন মলয় ও বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন হাতপাখা প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন মাওলানা জিল্লুর রহমান। চিকনাগুল বাজারের ব্যবসায়ী কুতুব আলী বলেন- নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের দুই প্রার্থীর মধ্যে হড্ডা হড্ডি লড়াই হবে। অন্য প্রার্থীদের সুর তেমন পাওয়া যার না। ইমরান-সেলিম দুই প্রার্থীর মধ্য থেকেই একজন আগামী সাংসদ নির্বাচিত হবেন।

    নির্বাচনে যেই জয়ী হোক তাঁর কাছে সাধারণ মানুষ চায় সুখে দুখে যেনো পাশে থাকেন। উপজেলার প্রধান দাবী বলতে গিয়ে তিনি বলেন আমরা অনেক দিন থেকে গ্যাস সংযোগের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। কত সরকার এল গেল কিন্তু আমরা এখনও গ্যাসের কোনো লাইন পায়নি। আগামীতে যে নির্বাচিত হবেন তার কাছে প্রধান ও প্রথম দাবী জৈন্তাপুরের সর্বত্র গ্যাসের সংযোগ। গোয়াইনঘাট মামার বাজার এলাকার বাসিন্দা করিম আহমদ এবারই প্রথম বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন তিনি বলেন আমাদের আসনের প্রত্যেক উপজেলায় বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক এলাকা রয়েছে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। আগামী সাংসদের কাছে আমাদের দাবী থাকবে এসব প্রাকৃতিক পর্যটন বহুল এলাকা গুলোর উন্নয়ন ও পর্যটক বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার। বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম নিজেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক জানিয়ে বলেন বর্তমান সরকারের সময়ে এলাকার বেশ উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট থেকে শুরু করে, শিক্ষা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। নৌকার সমর্থনে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। উন্নয়নের ধারবাহিকতা ধরে রাখতে আবারও নৌকার প্রার্থীকে এলাকারবাসিরা বেছে নেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
    জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ বলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ও তার সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থীর পথসভা করতে বাধা নিষেধ দেওয়াসহ নির্বাচনের এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে সরকার দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু এরপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং ভোট কেন্দ্রে সাধারণ ভোটরার উপস্থিত হলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচিত হবেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন গত মঙ্গলবার জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সিনিয়র সহ সভাপতিকে বিনা মামলায় গ্রেফতার করে নিয়েছে পুলিশ।

    এদিকে দুই উপজেলার সাধারণ ভোটারদের নিজেদের শিবিরে টানতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী, প্রার্থীদের স্ত্রী-সন্তানসহ নেতাকর্মী সাধারন ভোটারদের কাছে কাক ডাকা ভোর হতে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খনিজ সম্পদে ভরপুর সিলেট-৪ আসনে বেশির ভাগ সাধারন ভোটারা মনে করছে “ইমরান আহমদ ও দিলদার হোসেন সেলিম হড্ডা-হড্ডি লাড়াই হবে। বেশির ভাগ সাধারন ভোটারদের মতে এপর্যন্ত সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম তথা ধানেরশীষ এগিয়ে রয়েছে। ৩০ তারিখের নির্বাচনের ফলাফলই শেষ কি হয় বলে দেবে।