জৈন্তাপুরে পাখি নিধনের উৎসব সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ নিশ্চুপ

    0
    287

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭সেপ্টেম্বর,রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর প্রতিনিধিঃ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ঐতিহ্য বিশ্ব ব্যাপি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। খাসিয়া পান সুপারী, স্বচ্ছ পানি, চা-বাগান, সারী নদীর সৌন্দর্য্য, তৈল-গ্যাস, শ্রীপুর পাথর কোয়ারী, পিকনিক সেন্টার, সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র গুলো পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এছাড়া জৈন্তাপুরে রয়েছে প্রাচীন রাজপরিবারের দর্শনীয় স্থান সমুহ সহ রয়েছে অনেক গুলো বিলও হাওর। সেই বিল গুলোতে সারা বৎসর সহ শীত মৌসুমে আগমন হয় অতিথি পাখির। ভাদ্র মাস হতে শীতের মৌসুমের আবাস শুরু হয় উত্তরপূর্ব সিলেটের জৈন্তাপুর. গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের মানুষের মধ্যে। ভোর সেনালী সকালে দেখা মিলে কুয়াশার। শীতকে মৌসুমকে কেন্দ্র করে এক শ্রেনীর মানুষ মেতে উঠে অতিথি পাখি নিধনে বা শিকারে। শীত শুরুর আগেই জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের বিভিন্ন হাওর এলাকায় ফাঁদ পেতে বন্য প্রাণী ও অতিথি পাখী শিকার উৎসব শুরু হয়। শিকারিরা পাখি শিকার করে বাজারে এনে চড়া দামে বিক্রি করে।
    সরজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলা দরবস্ত বাজার, হরিপুর বাজার, চিকনাগুল বাজার, চতুল বাজার, গোয়াইঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাজার গিয়ে দেখা যায়- ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করে চোখ বেঁধে বা কানা করে বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জনের সাথে আলাপকালে জানা যায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ভাবে তারা ফাঁদ পেতে, কিংবা ছোট মাছের মধ্যে পটাশ মিশিয়ে ঝোঁপ জঙ্গলে রেখে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি শিকার করে আসছে।

    এলাকাবাসী জানান শীত মৌসুমে যখন জৈন্তার বিভিন্ন বিলে অতিথি পাখির আগমন ঘটে সে সময় সুযোগ সন্ধানী পাখি শিকারীরা যেন উৎসবে মেতে উঠে। বিল এলাকায় ঘুরে কয়েক জন পাখি শিকারীদের সাথে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন শহর হতে শখের নেশায় শত শত টাকা খরচ করে তারা পাখী শিকার করেতে আসেন। শখ বলে কথা তাই মাঝে মধ্যে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর দেখা পড়লে ঝমেলা এড়াতে কোন না কোন ভাবে লিয়াজো করে পাখি শিকার করি।

    এছাড়া তারা আরও বলেন স্থানীয় শিকারীদের কারনে অনেক সময় তারা পাখি শিকার করতে পারে না। তবে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা সীমান্তবর্তী হওয়ার কারনে বিলে গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি সহ আ লিক পাখি পাওয়া যায়। ফাঁদ কিংবা জ্বাল পেতে বন্যপ্রানী শিকার করে থাকে বলে জানান। জৈন্তাপুর উপজেলা ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার দরবস্ত, হরিপুর ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে রয়েছে বেশ কয়েকটি হাওর। এগুলো মধ্যে বেদু হাওর, বড় হাওর, বুজি হাওর, ডেঙ্গার হাওর, কেন্দ্রী হাওর, ডিবিরহাওর, চাতলারপাড় হাওর, গোয়ালজুরি, পুটিজুরি, বড়জুরি, ফাবিজুর, গাছজুরি হাওর। শীত শুরুর পূর্ব হতে না হতে এই হাওর গুলোতে আগমন ঘটে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির। তারমধ্যে পাতিহাঁস, বালীহাঁস, ডাউকপাখি, সাদবক ও কানাবক এর বেশী আগমন ঘটে।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিপুর, চিকনাগুল ও দরবস্ত বাসিন্দা বলেন- আমাদের এলাকায় বিভিন্ন উৎসবে, বিয়ে সাদিতে, জাইমদের বাড়ীতে দাওয়াতে এমনকি ছোট খাট অনুষ্টানে পাখি না খাওয়ালে যেন উৎসবের অনন্দের ঘাটতি থেকে যায়। তাই এ অ লে পাখির চাহিদা একটু বেশি। বাজারে চাহিদা থাকায় শিকারীরা তাদের ধরে আনা পাখি গুলো বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর চোঁখ এড়াতে এবং চড়া দামে বিক্রির জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা শিকারিদের নিকট হতে অল্প দামে পাখি সংগ্রহ করে এনে বাজারে বিক্রি করে।
    বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন- সিলেটে শীতকালে মূলত পাখি শিকার হয়। আর এগুলো সিলেট মহানগরী সহ আশপাশে উপজেলার বাজার সমুহে এগুলো বিক্রিয় করা হয়। অনেক সময় প্রশাাসনের নাকের ডগাতেই এটা করা হয়। এই অবস্থায় পাখি শিকারের আইন কার্যকর করতে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। যে সমুস্ত এলাকাতে এসব পাখি শিকার করা হয় সে সমস্ত এলাকাকে বিশেষ করে তরুন যুব সমাজকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখি শিকার বন্দ করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
    সারি রেঞ্জের বিট অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন- আমরা প্রতিনিয়তই এসব পাখিদের রক্ষার্থে কাজ করে আসছি। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ও পাখিদের রক্ষা করে থাকি। আমারা তথ্য পেলে যে কোনো জায়গায় কিংবা গোদামে বন্যপ্রাণী আটকে রাখে আমরা উদ্ধার করে থাকি। অন্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমাদের জনবল সংকটের অভিযান কিছুটা কম পরিচালিত হয়।