জৈন্তাপুরে চোরাচালানের তীর সীমান্তরক্ষী বাহিনী’র বিরুদ্ধে

0
1433
জৈন্তাপুরে চোরাচালানের তীর সীমান্তরক্ষী বাহিনী’র বিরুদ্ধে
জৈন্তাপুরে চোরাচালানের তীর সীমান্তরক্ষী বাহিনী’র বিরুদ্ধে


জৈন্তাপুর সিলেট প্রতিনিধিঃ আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় থেমে নেই চোরাচালন ব্যবসা। গোয়েন্দা বাহিনীর তালিকাভূক্ত ১৩জন চোরাকারবারী ও ৫জন বিজিবি’র সোর্সদের সম্মিলিত কৌশলে বিজিবি ক্যাম্পের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দিন-রাত সমান ভাবেই তাদের চোরাচালান ব্যবসা চালিয়ে আসছে। লাগামহীন সীমান্ত পারাপারে করোনা ভাইরাসের অজানা আতংঙ্কে সীমান্তের বাসিন্ধরা।
সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার ১২৭৪ হতে ১৩০৫ আন্তজার্তীক সীমান্ত পিলার এলাকায় সাপ্তাহ জুড়ে ঘুরে দেখা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলায় ২টি ব্যাটালিয়নের ৫টি বিওপি রয়েছে। এসকল বিওপি’র নির্ধারিত সোর্সম্যান (লাইনম্যান) ও বিওপি’র কিছু সংখ্যাক অসাধু কর্মকর্তা ও ভিআইপি সদস্যদের সহযোগিতায় সীমান্তে কমপক্ষে ১২০ টি চোরাইপথ দিয়ে প্রতিদিন ভারত হতে পণ্য সামগ্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

বিজিবি’র সোর্সদের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চোরাকারবারী দলের সদস্যদের বেশ কিছু সদস্য জানান, জৈন্তাপুর উপজেলার সব কয়েকটি বিওপি’র মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট চুক্তির মাধ্যমে আমরা নিঃসন্দেহে চোরাচালান পরিচালনা করে আসছি। বিজিবি’র সুনির্দিষ্ট সোর্সম্যান (লাইনম্যান), ভিআইপি সদস্য ও ক্যাম্পের কিছু সংখ্যাক সদস্যদের মাধ্যমে সিজারের জন্য মালামাল দিতে হয়।

এছাড়া ভারতীয় শাড়ীর কিট (কাটুন) প্রতি ১ হাজার ৫ শত টাকা, চা-পাতা বস্তা প্রতি ৩ শত টাকা, মোবাইল প্রতি পিছ ৩ শত টাকা, অন্যান্য কসমেট্রিক্স সামগ্রীর কিট প্রতি ১ হাজার টাকা, বিড়ি-সিগারেট কিট প্রতি ৫ শত টাকা, সুপারীর বস্তা প্রতি ১৫০ টাকা, মটরশুটির বস্তা প্রতি ১২০ টাকা, ভারতীয় বড় গরু প্রতি ১ হাজার ৫ শত টাকা, ছোট গরু প্রতি ১ হাজার টাকা, মহিষ প্রতি ২ হাজার টাকা বিজিবিকে দিতে হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সামগ্রী প্রতি চুক্তি মারফত টাকা দিতে হয়। তারা আরও বলেন, সীমান্তে কখন কি হচ্ছে, আর হচ্ছে না তার সব কিছুই বিজিবি’র সদস্যদের নজর এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। একটি গাছের পাতাও যদি সীমান্তের ওপার-এপার হয় বিজিবি জানবেই। সীমান্ত লগডাইন হওয়ার পর হতে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার প্রায় ১২০টি চোরাইপথ সর্বসময় উন্মুক্তই ছিল। আগের তুলনায় আরও বেশি ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
তারা আরও বলেন, সম্প্রতি ৪৮বিজিবি’র কিছুটা কঠিন অবস্থান হলেও ১৯বিজিবির প্রায় ৭০টি চোরাই পথ দিয়ে ভারতীয় পণ্য কমমেট্রিক্স, ভারতীয় আমদানী নিষিদ্ধ নাছির বিড়ি, বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেট, হরলিক্স, শাড়ী, লেহেঙ্গা, টাটা গাড়ীর টায়ার ও ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ ও মাদক সামগ্রী এবং ভারতীয় গরু-মহিষ বাংলাদেশে অবাধে নিয়ে আসছে।

চোরাকারবার নিয়ন্ত্রন করছেন জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজারের ১৪জন ব্যবসায়ী যারা স্থানীয় ভাবে মাড়য়ারী ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তাদের নাম প্রকাশ হয়েছে।

অপরদিকে বিজিবি’র সোর্স হিসাবে পরিচয় দিয়ে উপজেলা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আলুবাগান গ্রামের কবিরাজ ফারুক, আদর্শগ্রামের জয়নাল আবেদীন, ৪নং বাংলা বাজারের জামাল আহমদ, কেন্দ্রী গ্রামের মির্জান আহমদ রুবেল। ৪৮বিজিরি এসব সোর্সদের গ্রুপ লিডার হিসাবে নিয়ন্ত্রন করছে কেন্দ্রী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য ও জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আহমদ আলীর ছেলে মির্জান আহমদ রুবেল (৩০)।

অপরদিকে ১৯ বিজিবির জৈন্তাপুর রাজবাড়ী বিওপির সোর্স হিসাবে ঘিলাতৈল গ্রামের আব্দুল করিম উরফে বেন্ডিজ করিম (৪৮)। এছাড়া লালাখাল বিওপি বিজিবি সোর্স হিসাবে নিয়ন্ত্রন করছেন কালিগঞ্জ গ্রামের আব্দুর রহিম উরফে রহিম উদ্দিন (৫২) তার ভাই তাজ উদ্দিন (২৫), লালাখাল গ্রামের সামসুজ্জামান সেলিম। এখানে তাজ উদ্দিন বিভিন্ন সময় নিজেকে বিজিবির সদস্য, কোন কোন সময় বিজিবির এফএস, কোন কোন সময় নিজেকে বিজিবির ভিআইপি সদস্য বলে এলাকায় পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। তাদের লাইনের টাকা যদি আমাদের মত কোন ব্যবসায়ী না দেয় তাহলে আমাদের মালামাল বিজিবিকে দিয়ে আটক করে নেয় চক্রটি। চোরাকারবার উপজেলার হরিপুর বাজার হতে নিয়ন্ত্রন হয় বলে ছোট খাট কোন ব্যবসায়ী এ লাইনে পা বাড়ালেই তার উপর নেমে আসে ধরা মারা।

কারন হিসাবে তারা উল্লেখ করেন, এই ১৪ মাড়োয়ারী সদস্যরা নাকি বর্তমান প্রবাসী মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ, সেক্টার কমান্ডার, র‌্যাব-৯ সিও, ১৯ ও ৪৮ বিজিবির সিও, টুআইসি, স্থানীয় আওয়ামীলীগ, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন সাংবাদিক গনের সাথে সমন্বয় করে থাকেন। এজন্য তাদের নিয়ে আসা মালামাল আটক হয় না।
এদিকে সচেতন মহল দাবী জানিয়ে আসলেও চোরাকারবার কোন ভাবে বন্ধ হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ হতে সীমান্ত বন্ধ ঘোষনা করা হলেও একদিন ও সীমান্তের চোরাচালান বন্ধ হয়নি। সচেতন মহলের দাবী চোরাকারবারীদের কারনে সীমান্ত এখন নিরাপদ নয়। ইতোমধ্যে উপজেলার সীমান্তের বাসিন্ধাদের মধ্যে তীব্র জর সর্দ্দির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে লালাখাল বিওপি, জৈন্তাপুর বিওপি এরিয়ায় নিয়ন্ত্রন হীন ভাবে চোরাকারবার দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে ভারতের মহামারি জৈন্তাপুর দিয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে সারা দেশে। এ সকল ঘটনায় অজানা করোনা ভাইরাসের আতংঙ্কে রয়েছে সীমান্তে বাসিন্দারা।