জুড়ীতে চৈত্র সংক্রান্তি “চড়ক পূজা”

    0
    294

    আমারসিলেট24ডটকম,১৬এপ্রিল,সুমনঃ চৈত্র সংক্রান্তির অন্যতম আকর্ষন গাজন/ “নীল পূজা বা চড়ক পূজা”। চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান আকর্ষন ও উৎসব চড়ক পূজা। সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের এটি একটি উৎসব। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের মাগুরায় শ্রী শ্রী মহাদেববাড়ী দেবালয়ে শতাধিক বছর পূর্ব থেকে এ উৎসবের যাত্রা। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে (১ বৈশাখ) ওই পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অত্রাঞ্চলে বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের একমাত্র মিলনমেলা ওই চড়ক পূজা। দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজারো দর্শক ও ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটে এখানে। শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে ওই দিনে স্নান, ব্রত উপবাস প্রবৃতি ক্রিয়া কর্মকে পূন্য জনক বলে মনে করা হয়। তার প্রধান উৎসব চড়ক পূজা। চড়ক গাজন উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ। এ সময়ে শিব সম্পর্কে নানা রকম লৌকিক ছড়া আবৃত্তি করা হয়। যাতে শিবের নিদ্রা ভঙ্গ থেকে শুরু করে বিয়ে, কৃষিকর্ম ইত্যাদি বিষয় থাকে। মেলাতে সাধারণত শূল ফোঁড়া, বান ফোঁড়া ও বড়শি গাঁথা অবস্থায় চড়ক গাছে ঘোরা, আগুনে হাঁটা, প্রবৃতি সব ভয়ংকর কষ্টসাধ্য দৈহিক কলাকৌশল দেখানো হয়। মেলায় বিভিন্ন প্রকার খেলনা, ফলফলাদি ও মিষ্টিদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় হয়। এছাড়া সার্কাস, পুতুলনাচ, ঘুড়ি উড়ানো ইত্যাদি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। ওইদিন আধিবাসি সম্প্রদায় পালন করে বর্ষবিদায় ও বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান “বৈসাবি”। এ ব্যাপারে ক্রিয়া সম্পাদনের ভক্ত/সন্যাসি প্রধান হৃদয় মলি¬ক জানান, এতে ৭ সন্যাসিকে বিশেষ প্রশিক্ষন দিয়ে চড়ক গাছে উঠার উপযোগি করা হয়। উক্ত সন্যাসিগণ ৭ দিন ধরে উপবাস করতে হয়। তাঁদের আশির্বাদ লাভে বিশেষ উপসনা করতে হয়। ইহ জগতের মায়া ত্যাগ করে পরকালের সিদ্ধি লাভে বিশেষ ব্রত পালন করতে হয়। পূজার শেষ দিনে সকাল বেলা সামান্য ফলাহারের মাধ্যমে তারা দিক্ষাগ্রহণ পর্ব শেস করবেন।

    ভক্তের পিঠে বড়শি ফোঁড়া হচ্ছে।
    ভক্তের পিঠে বড়শি ফোঁড়া হচ্ছে।

    এরপর আত্মীয় স্বজনের সাথে সাক্ষাত করে দুপুরের পর থেকে ইহ জাগতিক সকল কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। তার পর অপরাহ্ন বিশেষ ভঙ্গিমায় ৭ সন্যাসির পিঠের চামড়ায় চড়কের বড়শি ফুটিয়ে তার সঙ্গে রশি বেঁধে পর্যায়ক্রমে তাদেরকে চড়কে তুলে ঘুরানো হবে। যে গাছে গাছে চড়ক ঘুরানো হয় সেটা একটি অলৌকিক গাছ(হিন্দু ধর্মমতে)। কথিত আছে চড়ক ঘুরানোর পর ওই গাছটি পানিতে ডুবিয়ে রাখলে আর কেউ খুঁজে পাবেনা। পরের বছর ওই দিন সকালে আপনা আপনি গাছটি পানিতে ভেসে উঠে। এব্যাপারে শ্রী শ্রী মহাদেব বাড়ী দেবালয়ের সভাপতি অমুল্য চন্দ্র মলি¬ক মাষ্টার ও সম্পাদক অটল কৃষান সিংহ শিবেন জানান, অত্রাঞ্চলে বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের একমাত্র অনুষ্ঠান ওই চড়ক পূজা। ১ শ ৮ বছর পূর্বে এখানে আমাদের পূর্ব পুরুষরা এর যাত্রা শুরু করেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় আজও চলমান।