জীবনের চার ভাগের একভাগই জেলে কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু

    0
    468

    ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম দিয়ে শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনা পর্যন্ত সারাজীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটতে হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
    ঐতিহাসিক ৭ মার্চ মঙ্গলবার সংসদে এই তথ্য তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে তার ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পাওয়া বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

    ৫৪ বছর বয়সের জীবনে বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন, যা তার মোট জীবনের সিকিভাগ।

    এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাতদিন কারাভোগ করেন, বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তার জেলে কাটে পাকিস্তান আমলে।

    তার বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, কারাগারে থাকার কারণে তার ছোট ভাই-বোনরা বাবার সংস্পর্শ খুব কমই পেয়েছিল।

    ভাই শেখ কামালের একটি ঘটনা শেখ হাসিনা লিখেছেনও। তার ভাষায়, শেখ কামাল আব্বাকে কখনো দেখে নাই, চেনেও না। আমি যখন বারবার আব্বার কাছে ছুটে যাচ্ছি, আব্বা আব্বা বলে ডাকছি, ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে…ও হঠাৎ আমায় জিজ্ঞেস করল, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলে ডাকি।

    তোফায়েল জানান, জাতির পিতা স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ১৯৩৮ সালে সর্বপ্রথম কারাগারে যান। ওই সময় তিনি সাত দিন কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি পাঁচ দিন কারাগারে ছিলেন। একই বছর ১১ সেপ্টেম্বর কারাগারে গিয়ে তিনি মুক্তি পান ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি। এ দফায় তিনি ১৩২ দিন কারাভোগ করেন।

    আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল আবারও কারাগারে গিয়ে ৮০ দিন থেকে মুক্তি পান ওই বছরের ২৮ জুন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি আবারও ২৭ দিন কারাভোগ করেন।

    ১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টানা ৭৮৭ দিন বঙ্গবন্ধু কারাগারে ছিলেন।

    ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে যেতে হয়েছিল বলে জানান তোফয়েল। এ দফায় বঙ্গবন্ধু ২০৬ দিন কারাভোগ করেছিলেন।

    ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারির পর বঙ্গবন্ধু ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। এসময়ে একটানা এক হাজার ১৫৩ দিন তাকে কারাগারে কাটাতে হয়।

    এ সময়ই বঙ্গবন্ধু একটানা সব চেয়ে বেশি সময় (৩ বছরের বেশি) কারাভোগ করেন।

    ১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আবারও গ্রেপ্তার হয়ে ওই বছরের ১৮ জুন মুক্তি পান। এ দফায় তিনি কারাভোগ করেন ১৫৮ দিন।
    এরপর ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৬৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন।
    বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত ছয় দফা দেওয়ার পর এর পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করতে গিয়ে কয়েক দফায় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন।

    তোফায়েল বলেন, ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৯০ দিন কারাভোগ করেন।

    এরপর ১৯৬৬ সালে ৮ মে আবারও গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান শেখ মুজিব।

    এসময় তিনি এক হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। কারামুক্তির পর তাকে ছাত্র-গণ সংবর্ধনায় তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়।

    ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে।

    “তাকে পাকিস্তানের মিয়ানালী কারাগারে একটি সেলের মধ্যে রাখা হয়। এ দফায় তিনি ছিলেন ২৮৮ দিন,” বলেন তোফায়েল।

    রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের এসব তথ্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল।

    আলোচনায় তিনি ঐতিহাসিক সাতো মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বিডিনিউজ