জীবনভর কি যানজট যানজট করে চিৎকার করে যেতে হবে?

    0
    229

     কোনদিন কি নিরসন হবার নয়?

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৩ডিসেম্বর,আশিকুল কায়েসঃ ঢাকা শহরের যানজটে পড়ে মূল্যাবান সময় নষ্ট হওয়া আমাদের নিত্যদিনের ঘটনা। অফিস আদালতে কর্মচারী সময় মত পৌঁছাতে না পারলে জবাবদিহীতার শেষ থাকেনা। সামান্য বেতনের বিনিময়ের চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য শত কষ্ট সহ্য করে প্রতিদিনের যানজটকে কপালে ঠেলে দিয়েই একই রাস্তার একই নম্বরের গাড়িতে চেপে বসতে হয়।

    প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের মতো যানজট উপেক্ষা করে প্রাইভেট গাড়ির লাইন বদলানোর মত ঘটনা কর্মচারিদের চেপে বসা পাবলিক বাসের পক্ষে সম্ভব নয়। ভিআইপি জ্যামের ক্ষেত্রে যানবহন চলাচলতো দূরের কথা পুলিশের কড়া নজরদারি ফাকি দিয়ে নিজের কথা চিন্তা করাটাও অসম্ভব। শুধু চেয়ে থাকতে হয় রাস্তার দিকে, অপেক্ষায় থাকতে হয়, আর কত, আর কত সময় হলে ভিআইপিরা এই রাস্তা দিয়ে যাবে। কখন আধঘন্টা, আবার কখনও ঘন্টাখানেকও অপেক্ষা করা লাগে।

    ভিআইপি তো ভিআইপির মতো চলেন, পথচারিরা ভিআইপির সাথে জড়িয়ে জ্যামের কথা উল্লেখ করলে হয়তো তাদেরও ভিআইপি বলে মনে করেন শ্রোতারা। এই ভিআইপ জ্যামটা যে কতটা মানুষের কতটা মূল্যবান মূহূর্ত নষ্ট করে সেকথাগুলো কি ভিআইপরা জানে?
    ঢাকা শহর যানজটে পরিপূর্ণ। মানুষের চলাচলের সুবিধার কথা চিন্তা করে যে যানবহনের সৃষ্টি করা হয়েছে আজ সেই যানবহনের গতিবেগের তুলনায় মানুষের হাটার গতিবেগ অত্যন্ত বেশি। এক ১ ঘন্টা রাস্তা অতিক্রম করতে একজন মানুষের যতটুকু সময় লাগে ঠিক ততোটুকু রাস্তা অতিক্রম করতে একটি যানবহনের সময় লাগে প্রায় দেড়গুণ। আমরা যানজট যানজট নিয়ে চিৎকার করলেও কেউ কি শুনে আমাদের চিৎকারের কথা। মন্ত্রীরা মহোদয়েরা যখন গাড়িতে চড়েন তখন তাদের সামনে থাকেন প্রটোকল বাহিনী, ফলে রাস্তা সহজে পরিস্কার।

    দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে শহর মুখি চাপ, অথচ শহরে মানুষের অবস্থান বেশি হলেও শহরের আয়তন যে সেভাবে দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে সেটা বলা যাবে না। শহরে মানুষের চাপে আশপাশের এলাকা হয়তো উন্নত হচ্ছে, অথচ সকল চাপতো রয়ে যাচ্ছে ঢাকার প্রাণ কেন্দ্রে। যানজটের মূলে রয়েছে সিএনজি, রিক্সা অনিয়ন্ত্রিত দিনদিন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত যানবহন ও প্রাইভেট গাড়ি।

    রাস্তা দিয়ে চলতে গেলেও মানুষে মানুষে আঘাত খাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ হয়ে দু-মুঠো দু-বেলা খাবার খাওয়ার চিন্তা করি, কিন্তু যাদের কাড়ি কাড়ি টাকা আছে, যাদের আছে একাধিক বাসা বাড়ি ও গাড়ি তারা চিন্তা করে এই সম্পদগুলো আরো বাড়াতে। টাকার নেশা আর অযাচিত বিলাসবাহুল্যতা সাধারণ মানুষের দুভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরকার কি- একাধিক গাড়ি রাস্তায় নামানো, পরিবারে যদি ৪ জন সদস্য থাকে কেনই বা প্রয়োজন ৩টি প্রাইভেট কার, বিষয়টি মাথায় আসেনা।

    গ্রামাঞ্চলে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির সুযোগ করতে না পেরে নিম্নবিত্তের মানুষেরা যখন ঢাকায় এসে রিকসার উপর জীবিকা নির্বাহের অবলম্ব হিসেবে চাপিয়ে দেয় তখন বাড়ে আরও চাপ। দুই হাত দুই পা কিংবা কোন দক্ষতা থাকা সত্বেও ঢাকায় এসে বিকল্প কোন কাজের সন্ধান না করে সহজ মাধ্যম মহাজনদের নিকট থেকে রিকসা ভাড়া করে রিকসা চালানোর কাজটা করে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে বিকল হতে থাকে যোগ্যতাগুলো। এমনকি অনেকেই অফিস কিংবা কারখানা থেকে অফিস সময় শেষ করে সন্ধ্যা বেলায় অর্থ উপার্জনের জন্য বেরিয়ে পড়ে শহরের রাস্তায়।

    ফলে একদিকে যেমন অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে চালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকেও চলতি মূলধন আরও বৃদ্ধি করার জন্য মহাজনেরা বেশি রিকসা ক্রয় করার জন্য মূলধন খাটাচ্ছেন।

    ঢাকা শহরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্তভাবে যানজট সৃষ্টির কারণে তিনটি শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছে, ১. সাধারণ মানুষ (যারা শুধু যানজট ভোগ করতে জানে) ২. উচ্চবিলাসী মানুষ (যাদের চাহিদার শেষ থাকে না) ৩. রিকসা চালক (নিম্নবিত্ত হলেও তারা সাধারণ জনগণের আয়ের অনেক ঊর্ধে )।

    আমরা সাধারণ মানুষ হয়ে কালের বিবর্তে পিষ্ট হয়ে যানজট যানজট বলে শুধু চিৎকারই করতে পারবো, যানজট নিরাসনের কথা বলতে গেলে কে শুনতে চাই আমাদের কথা। যে চিৎকার তা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। জীবনভর কি যানজট যানজট করে চিৎকার করে যেতে হবে, কোনদিন কি নিরসন হবে না?

    যানজট নিরাসনে কতিপয় সূত্র : দিনদিন যেভাবে ঢাকায় জনসংখ্যা তার ফলে বেড়ে যাচ্ছে যানবহন। আর এই যটের সৃষ্টি করে যানবহনগুলো। তাই এই যানবহনের বিরুদ্ধে উদ্যোগীমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেটার কারণে যানবহন দ্বারা যানজট মুক্ত ঢাকা নগরী হতে পারে। মানুষেদের চলার সহজ পথ কিংবা পরিস্কার পথের জন্য বিভিন্ন রুল না করে দরকার যানবহন যাতে গায়ে গায়ে না ঘেসে পরিস্কারভাবে চলতে পারে।

    ১. সকল যানবহনগুলোকে ঢাকার বাইরে স্ট্যান্ড দিতে হবে।

    যেমন বাস নং-৭ ও বাস নং-৮ কে স্ট্যান্ড করতে হবে ধামরায়, বিহঙ্গ, মিরপুর ইউনাটটেড সহ যেসকল যানবহন মিরপুরে যাতে অবস্থা না করতে পারে সেজন্য দেখে শুনে ঢাকার বাইরে স্ট্যান্ড দিতে হবে। তাহলে বাসের ঘনত্ব কমানো সম্ভব।
    ২. এলাকা ভিত্তিক নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্সা চলাচলের দূরত্ব সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে।

    ৩. রিকসা ভাড়া মহাজন ব্যবসায়ীর অবসান ঘটাতে হবে। রিক্সার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
    ৪. ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে পরিবারের ক্ষেত্রে সর্বেোচ্চ ২টি গাড়ী ব্যবহার করতে পারবে।

    ৫. অনিয়ন্ত্রিত লেগুনা/মিনিবাস চলাচলে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে।

    ৬. ব্যাপকহারে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফুট অভার ব্রিজ তৈরি করে জনগণের চলাচলের জীবন মান নিশ্চিত করতে হবে।

    ৭. কথায় কথায় ঢাকা শহরের মিছিল সমাবেশ বন্ধ করতে হবে।

    ৮. বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বাসের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রী বহন করা ছাড়া যাত্রী বহন নিষিদ্ধ করতে হবে।

    ৯. ফুটফাতের দোকান সহ রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করতে হবে।

    ১০. ঢাকাকে সম্প্রসারিত করে ঢাকার ভেতরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গুলো স্থানন্তর করতে হবে।

    যানজট নিরাসনে আমরা যতই চিৎকার করিনা কেন, বাস্তবে উদ্যোগমূলক কোন কার্যক্রম সরকার প্রশাসন থেকে বহাল না হলে তা নিরাসন সম্ভব নয়। ফুটপাতের উপর মানুষ ছাড়া মরটর যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সুপ্রিম কোর্টের রুল জারি করলেই মানুষের জীবন ব্যবস্থার চাকা সচল থাকবে না। বুঝতে হবে মটরযান কেন এবং কি কারণে ফুটফাতে উঠতে বাধ্য হচ্ছে। জনসাধারণের জীবনকে উপভোগ্য ও যানজটমুক্ত পরিবেশে চলতে গেলে উদ্যোগী মূলক কর্মকাণ্ডে এগুতে হবে।