জামিনের আশ্বাস পেলে খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করবেন!

    0
    211

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৩মার্চঃ “পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আদালতের জামিন পাওয়া সাপেক্ষে কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস পেলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করবেন” বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

    মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবনে নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

    খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও এখনো আমরা ওয়ারেন্টের কপি হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে যেতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস দিতে হবে।”

    তিনি বলেন, “এখানে দুইটি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে বিচারিক আদালতের প্রতি আমরা অনাস্থার আবেদন করেছি। ব্যাপারটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওইটা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালত আইনগতভাবে ও নৈতিকতার দিক থেকে এই মামলার শুনানি করতে পারেন না। কারণ তার বিপক্ষে তো আমরা অনাস্থা দিয়েছি। তার তো নৈতিকতার দিক আছে যে, আমার বিপক্ষে অনাস্থার আবেদন দিয়েছে, দেখি উচ্চ আদালত কি বলে।”

    আরেকটি ব্যাপার হলো, “ওয়ারেন্ট এখনো খালেদা জিয়া হাতে পায়নি। কিন্তু তারপরও যদি আদালতে হাজির হতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়া অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক।”
    “খালেদা জিয়া নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রতিদিন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা তার কার্যালয় ঘেরাও করে রাখছেন। এমনকি সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।”

    খন্দকার মাহবুব বলেন, “তিনি রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে যদি একবার বের হন তাহলে তাকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য তার কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে আমাদের মনে হচ্ছে।”

    তিনি বলেন, “তারপরও আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে এবং সরকার এরকম কোন ঘটনা ঘটাবেন না এবং তিনি যদি জামিন পান তাহলে তার নিজ কার্যালয়ে ফেরত আসতে পারবেন, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন, তাহলে তিনি আত্মসমর্পন করবেন।”

    মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা আদালতের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যেভাবে আচরণ করছে তাতে এই মামলাটি একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।”

    সম্প্রতি খালেদা বিরুদ্ধে পুরানো তিনটি মামলা সচলের জন্য দুদকের আবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

    পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলতে কি বুঝাচ্ছেন, জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, “যখন আস্থা আসবে যে, আমি(খালেদা জিয়া) বের হলে আমাকে মেরে ফেলবে না, আমি যদি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং বিচারক যদি জামিন দেয়, তাহলে আদালতে জামিন পেলে কার্যালয়ে ফেরত আসতে পারব।”

    এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

    অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় আগামী ৪ মার্চ তারেক রহমানকে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ওই একই দিন (৪ মার্চ) ধার্য করা হয়।

    এদিকে আদালতে হাজির না হওয়ায় কাজী সালিমুল হক কামাল ও সরফুদ্দিন আহমেদেরও জামিন বাতিল করা হয়। জামিন বাতিল করে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।

    আদালত জামিন বাতিলের সময় বলেন, “এ মামলার ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে খালেদা জিয়া সাত দিন উপস্থিত ছিলেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে তার জামিন বাতিল করা হলো।”

    ওই দিন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশিদ সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ সময় তিনি বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এতিমদের নামে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা নিজে লাভবান হওয়ার জন্য আত্মসাৎ করেন।”

    চলতি বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুবেদ রায়।
    মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

    এ মামলার অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

    অপরদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।নতুন বার্তা