জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবীতে আমরণ অনশনের ৩৯ ঘন্টা

    0
    433

      সেঁজুতি শোণিমা নদী ॥ Rumi sq more pic

    শহীদ রুমী স্কোয়াড এর জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবীতে আমরণ অনশনের ৩৯ ঘন্টা।  

    জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবীতে ২৬ মার্চ রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শহীদ রুমী স্কোয়াডের ডাকে শুরু হওয়া আমরণ অনশন কর্মসূচি পার করলো এর ৩৯ তম ঘন্টা। গণজাগরণ মঞ্চের ২১ ফেব্রুয়ারির মহাসমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামাত-শিবিরের নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ২৬ মার্চ পর্যন্ত যে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিলো, সরকার সেটি না মানায়, এবং এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায়, শহীদ রুমী স্কোয়াডের সাত তরুণ এই অনশন কর্মসূচীর সূচনা করেন। ২৭ মার্চ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত স্বতপ্রণোদিত হয়ে এই অনশনে যোগ দিয়েছেন আরো ৭ জন; অনড় এই দাবীতে অনশনে যোগদানকারীর সংখ্যা এখন মোট ১৪ জন। শহীদ রুমি স্কোয়াডের পক্ষ থেকে সংহতি সমাবেশের আহবানে পাওয়া গেছে বিপুল সাড়া, সাংগঠনিক পর্যায় থেকে সারা দেশ থেকে ২৬ টি সংগঠন তাদের সংহতির কথা প্রকাশ করেছেন আমাদের সাথে। যার মধ্যে ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে আছে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দেশ বিদেশের অসংখ্য মানুষ সংহতি প্রকাশ করেছেন আমাদের সঙ্গে, যার একটি বড় অংশ যার যার অবস্থান থেকে এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
    সকাল দশটায় অনশনরত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাত তরুণের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ আলিফ প্রধান এবং সাফি নামের একজন ব্লগার, সন্ধ্যার পর এই তালিকায় যুক্ত হন একটি এফ এম রেডিওতে কর্মরত সাকি ফারজানা এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী এইচ আই হামজা। ঐ রাতেই এই অনশনে আরো যুক্ত হন জাহঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বাগতম সাহা নীল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসির মোরশেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ। শহীদ রুমী স্কোয়াড এর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ২৯ মার্চ সকাল থেকে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষাথী অনশন কর্মসূচির সূচনা করবেন।
    ২৬ মার্চ রাতে এই কর্মসূচির সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সংহতি প্রকাশ করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্কোয়াড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অধিকার মঞ্চ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন বোধন, পরবর্তীতে আরও সংহতি প্রকাশ করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ডক্টরস ফর হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পাঠচক্র, জাগরুক গণ পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু চেতনা পরিষদ, বিপ্লবীদের কথা, সেক্টর ১৩, ফাঁসির মঞ্চ, তারুণ্য তের, রাস্তা, জেনারেশন এফ, দেশ মৃত্তিকা, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গন, গণসংহতি আন্দোলন, রাগমা, আমরা, মাতৃভূমি সামাজিক সংগঠন, হৃদয়ে সীতাকুন্ডু, বটতলা নাট্যদল এবং ব্ল্যাক স্কোয়াড
    । এছাড়াও এসএমএসের মাধ্যমে সিলেট গণজাগরন মঞ্চ থেকে জানানো হয়েছে সংহতির কথা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে সংহতির কথা। নেত্রকোণা থেকে ১২ জন জানিয়েছেন এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তারা টানা অবস্থান করছেন জেলা শহীদ মিনারে; দ্রুতই তারা অনশনে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালীরা জানিয়েছেন এই দাবীর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শুক্রবার রাত থেকে পরদিন শণিবার দুপুর পর্যন্ত ১২ ঘন্টা প্রতীকি অনশনে অংশ নেবেন তারা।
    ২৭ মার্চ, ২০১৩ তারিখ রাত ১০ টার দিকে গণজাগরন মঞ্চের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ইমরান এইচ সরকার এবং গণজাগরণ মঞ্চের সাথে যুক্ত ছাত্রনেতারা অনশনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসেন। সেখানে তারা গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে জনতার এই প্রাণের দাবীকে উপজীব্য করে শহীদ রুমি স্কোয়াড সহ মূল মঞ্চের সম্পূরক এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর এই আন্দোলন সংশ্লিষ্ট গণতান্ত্রিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান নেতাদের এই উদ্যেগকে স্বাগত জানায় শহীদ রুমি স্কোয়াড।

    কর্মসূচী:
    শহীদ রুমি স্কোয়াডের আমরণ অনশনের কর্মসূচী চলবেই এছাড়াও শহীদ রুমি স্কোয়াড আগামীকাল ২৮ মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫ টায় সর্বাত্মক সংহতি সমাবেশের আহবাগ জানাচ্ছে। এই সমাবেশে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা, বু্িদ্ধজীবি, পেশাজীবি, সকল ছাত্র ছাত্রী এবং সকল মানুষকে – যারা মনে করেন যুদ্ধপরাধীদের সংগঠন জামায়ত-শিবির নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, প্রতিরোধ করা প্রয়োজন তাদের এখানে এসে সংহতি জানানোর জন্য আহবান করা হচ্ছে। এছাড়াও যারা এই কর্মসূচীতে সশরীরে অংশগ্রহণ করতে চান তাদেরকে শহীদ রুমি স্কোয়াডের সঙ্গে যোগাযোগের আহবান জানানো যাচ্ছে। এছাড়া সারা দেশে যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই কেউ যদি এই কর্মসূচীতে অংশ নিতে চান তাদেরকে স্কোয়াডের সাথে যোগাযোগের আহবান জানানো হচ্ছে।
    এছাড়াও, গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ২৮ মার্চ সন্ধ্যা সাতটায় জাদুঘরের সামনে অনশনস্থলে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করছে শহীদ রুমী স্কোয়াড। এই সম্মেলনে দেশের প্রধান গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলো।

    যুদ্ধাপরাধী সংগঠন এবং তাদের সহযোগী হিসেবে জামাত-শিবিরের রাজনীতি স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমরা জানি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সেটি যে কোন মুহুর্তে, যে কোন উপায়েই সম্ভব। আর তাই আমাদের এই প্রাণের দাবীর পক্ষে আমাদের অবস্থান অনড়, এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে অহিংস উপায়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কঠোর প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি আমরণ অনশনকেই। আমাদের আশা এতে সবার সমর্থন আমরা পাবোই।

    আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে তাই আমরা আজ বলতে চাই, বিজয়, নাহলে মৃত্যু- একমাত্র এই এই পথেই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। আর তাই অহিংস উপায়েই দাবী আদায়ের সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নিয়ে আজ আমরা রাজপথে; আশা আছে বিজয়ের, তবে মৃত্যুর ভয়ে এখন আর ভীত নই আমরা কেউ।