হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের প্রতিবাদেও জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও প্রগতিশীল পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদসহ ২৭টি সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল সংগঠনসহ ২৭টি প্রগতিশীল সংগঠন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হরতালের ঘোষণা দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
সংবাদ সম্মেলনে নাসির উদ্দীন ইউসুফ মূল বক্তব্য পাঠ করেন। পরে হরতালসহ আগামী দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়া হেফাজতে ইসলামী নামের সংগঠন কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আয়োজিত ঢাকা অভিমুখে যে লংমার্চের ডাক দিয়েছে, এর প্রতিবাদে ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা হরতালের পক্ষে নই। তবে অনন্যোপায় হয়ে আমরা এ কর্মসূচি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, জামায়াত হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে এবং এতে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করছে।’ জামায়াত সমর্থন দেওয়ায় লংমার্চে সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ব্লগারদের তথ্যপ্রমাণ ছাড়া যেভাবে নাস্তিক ঘোষণা করা হচ্ছে ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অন্যদিকে, সাঈদীকে চাঁদে দেখানোসহ জামায়াতের যেসব ব্লগার ইসলামের প্রতি অবমাননাকর তত্পরতা চালাচ্ছে, তাদের আটকের ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে যেসব ব্লগার যুক্ত ছিল, তাদের রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হচ্ছে এবং যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে তাদের হাজির করা হচ্ছে, পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও এভাবে হাজির করা হয়নি।’
শাহরিয়ার কবির ঘোষণা দেন, কাল সন্ধ্যায় শুরু হতে যাওয়া ২৪ ঘণ্টার হরতাল তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবেন এবং এই হরতাল পালনের সময় কোনো ধরনের গাড়ি পোড়ানো হবে না। যদি কেউ পোড়ায় বা পোড়ানোর কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায়দায়িত্ব জামায়াত ও বিএনপিকে নিতে হবে। এ ছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনকে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি।
শাহরিয়ার কবির বলেন, গত হরতালের সময়গুলোতে পরিবহন শ্রমিকেরাই জামায়াতের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, অনেক শ্রমিক মারা গেছেন। হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিহত করার জন্য তিনি পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানান।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছেন। তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন, লংমার্চে তাঁরা তাঁদের যানবাহন ব্যবহার করতে দেবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কবির বলেন, ২৪ ঘণ্টার হরতালে সারা দেশের রাজপথ, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আজ সন্ধ্যা ছয়টায় হরতালের সমর্থনে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া, আগামীকাল সারা দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল হবে।