জাতীয় চারনেতা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে মারফত ও হাশেমের মৃত্যুদণ্ড

    0
    392
    জাতীয় চারনেতা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে মারফত ও হাশেমের মৃত্যুদণ্ড
    জাতীয় চারনেতা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে মারফত ও হাশেমের মৃত্যুদণ্ড

    ঢাকা, ৩০ এপ্রিল : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতে দেওয়া দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর আগে এই দুজনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার ওই রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।
    পলাতক এই দুই আসামি হলেন দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধা।
    রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হয়েছে।
    এ নিয়ে এ মামলায় তিনজন মৃত্যুদণ্ড পেলেন। অপরজন হলেন রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন।
    বেঞ্চের অপর পাঁচ বিচারপতি হলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, নাজমুন আরা সুলতানা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও মো. ইমান আলী। হাইকোর্টের রায়ে পলাতক দুই আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেমকে খালাস দেওয়া হলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। ১৭ এপ্রিল দশম দিনের মতো শুনানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুনানি শেষ হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও এ মামলায় নিয়োজিত প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক শুনানি করেন। আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।
    রাষ্ট্রপক্ষ নিয়োজিত আইনজীবী আনিসুল হক বলেন, আজকে এই রায়ের মধ্য দিয়ে চার নেতা হত্যার বিচার সমাপ্ত হয়েছে। হাইকোর্ট যাদের খালাস দিয়েছেন, আপিল বিভাগ তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। বিচারিক আদালতেও তাঁদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। তাঁরা তো পলাতক। তাঁদের খুঁজে বের করা হবে।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একই বছরের ৩ নভেম্বর রাতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরসূরি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদদীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
    ওই বছরের ৪ নভেম্বর তত্কালীন উপকারা মহাপরিদর্শক আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁর নেতৃত্বে চার/পাঁচজন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করেন। গুলি করে নেতাদের হত্যা করা হয়। পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
    ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে পলাতক আসামি রিসালদার (ক্যাপ্টেন) মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়।
    পরে ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মারফত আলী শাহ ও আবুল হাশেম মৃধাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের। এ ছাড়া চারজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ থেকে অব্যাহতি পান। আপিল না করায় অপর আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।
    এই আট আসামি হলেন কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) কিশমত হাশেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
    তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিল অনুমতি চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে এবং হাইকোর্টের রায়ে অব্যাহতি পাওয়া দুই আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
    এর প্রায় ২২ মাস পর রাষ্ট্রপক্ষ সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে গত বছরের ১ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেয়। এতে আসামিদের খালাস করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল ও বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখার আরজি জানানো হয়। পরে ৪ নভেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে শুনানি শুরু হয়। জেলহত্যা মামলায় হাইকোর্টে অব্যাহতি পাওয়া চারজন—সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।