মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

    0
    252

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১২জানুয়ারীঃ দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী  বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিতে চাইলেও তাতে বাধা দিচ্ছে বিএনপি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামাত জোট সারা দেশে যে ঘৃন্য ও পৈশাচিক সন্ত্রাস চালায়, তা কোনো দিন বিস্মৃত হওয়ার নয়। তিনি আরও বলেন, তাদের এ নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সাথেই কেবল তুলনা করা যায়।

    বর্তমান মহাজোট সরকারের ২ বছর পূর্তিতে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি ভাষন শুরু করে রাত ৮টায় শেষ করেন। তার এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন(বিটিবি), বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচার করা হয়েছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস-বোমাবাজি উপেক্ষা করে সেদিন আপনারা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামাত নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। মানুষ শান্তিতে থাকবে, হাসিমুখে জীবনযাপন করবে, তা ওদের সহ্য হয় না। উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতেই ওই কর্মসূচি ডাকা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রী আদালত হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারাদেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
    সেদিনের অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপির অবরোধ ও ভয়বহতা বর্ণনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান জানান, পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

    এছাড়া ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি ট্রেন ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়েছিল।  তিনি বলেন, জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে, অমানবিক কষ্ট দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি নেত্রী নাটক করে ৬৮ জনকে নিয়ে আরাম আয়েশে ৯২ দিন অফিসে থাকেন।
    হত্যাযজ্ঞ ও তা-বের হুকুম দেন। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জনসমর্থন পায়নি বলে ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন নাকে খত দিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বলেও মন্তব্য করে সংসদ নেতা বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচার কাজ চলছে। যারা আপনাদের আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে, জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে, সে অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। নাশকতায় জড়িতদের ছাড় না দেয়ার ঘোষণাও আবার দেন শেখ হাসিনা।
    প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুর কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে তিনি বলেন, সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে।

    তিনি বলেন,এখন শুরু হয়েছে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি আরও বলেন, এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি- জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। সেভ দ্যা চিলড্রেনের মাতৃসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম, ভারতের ১৪০ এবং পাকিস্তানের ১৪৯তম।

    তিনি আরও বলেন,অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিকস অ্যান্ড পিসের বিশ্বশান্তি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম, ভারতের ১৪৩তম এবং পাকিস্তানের ১৫৪তম। ইকোনমিস্টের ইনটেলিজেন্স ইউনিটের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম আর পাকিস্তানের অবস্থান ১০৮তম।
    শেখ হাসিনা বলেন, গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের ৫ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বের খুব কম দেশই একটানা এতো দীর্ঘ সময় ধরে ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। অচিরেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

    অর্থ বাজেট বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বিএনপি-জামায়াতের শেষ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। এখন বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। তিনি আরও বলেন, ৫ কোটি মানুষ নিম্ন-আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছেন। দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। ২০০৬ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। তা এখন ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
    মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেড় কোটি মানুষের চাকরি দিয়েছি। বিদেশে কর্মসংস্থান বিষয়ে মহাজোট নেতা বলেন, আমাদের সময়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ ২০০৬ সালে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

    একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রফতানি আয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াট। ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করেছে। ৪৪ লাখ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবো ইনশাআল্লাহ।
    শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৫ সালে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক ২ হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ১৬টির কাজ চলছে।

    যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, এ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ অচিরেই শেষ হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুর কাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মাসেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে।

    তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক ২% হারে অবদান রাখবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিল্প স্থাপনা বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
    শেখ হাসিনা বলেন, মাওয়া, শিবচর ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তুলবো। মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও কেরানীগঞ্জ জেগে উঠবে নতুন উদ্যমে। আমার সরকার নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে। নারায়ণগঞ্জের ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হবে।

    ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও যশোরে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। বিভাগীয় শহরে সিলিকন সিটি স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়াও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল তথ্য বাতায়ন চালু করেছি, যা আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারে এখন ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। থ্রিজি সেবা চালু করা হয়েছে। এবছরই ফোর জি চালু করা হবে। এসময় দেশের ৮ হাজার পোস্ট অফিসকে ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তরের কাজ এগিয়ে চলছে বলেও জানান তিনি।

    তিনি  বলেন, গত ৭ বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। বাংলাদেশে এখন মোবাইল সিম গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজারের বেশি। আশা করছি ২০১৬ সালেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হবে। রাশিয়ার সহায়তায় ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প- রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
    খাদ্যে দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, মৎস্য উৎপাদন বেড়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে চতুর্থ। আমরা এখন চালও রপ্তানি শুরু করেছি। শিক্ষার উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে এনেছিল। দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ।
    আওয়ামী লীগ সরকার ৭ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৯২ কোটি বই বিতরণ করেছে। বছরের প্রথমে নতুন বই তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, এবছরের পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭২২টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। প্রাথমিক থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং সরকারি করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকরি। দেশে ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ চালু করা হবে জানিয়ে শিক্ষাখাতে নানা সফলতার কথা তুলো ধরেন তিনি।
    শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। মানুষ বিনামূল্যে ৩২ পদের ওষুধ পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। আরও ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৬.৫ বছর, এখন বেড়ে হয়েছে ৭১ বছরের বেশি। শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হারও হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, নতুন ১১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু করা হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী ১ লাখ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সব দরিদ্র পরিবারের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ করা হবে।
    নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছি। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভ বাজেট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।  বাংলাদেশ এবারও লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে নারীর অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
    শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম’ এর সম্মানসূচক ‘ডব্লিউআইপি ২০১৫’ পদক পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদকে সব কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। বিরোধীদলকে ধন্যবাদ, তারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত দিচ্ছেন, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারিদের ৬০ বছর করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সামরিক-অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ১২৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও  ব্যাপক পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি।
    প্রসঙ্গত বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। ভোটারবিহীন আখ্যায়িত করে ওই নির্বাচনে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধও বলে আসছে তারা। এ কারেণ গত বছর সরকারের এক বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০১৫ সালে ৪ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ ডেকেছিল বিএনপি জোট। ৩ মাসের ওই অবরোধে নাশকতায় শতাধিকত মানুষের মৃত্যু হয়, পোড়ানো হয় বহু গাড়ি ও স্থাপনা।