চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেই ভিজিট নিচ্ছেন ডাক্তাররাঃপাঠাচ্ছেন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আর লিখে দিচ্ছেন নিম্নমানের ওষুধ!

    0
    262

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫জুলাই,আশরাফুল ইসলামঃহবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অব্যবস্থাপনার কারনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে না পারলেও সেবার নামে প্রতারনা ও হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া যায় প্রতিদিন। জোর করে রোগী দেখার ফিস গ্রহন করছেন কমপ্লেক্সের চেম্বারে বসে। এছাড়াও, রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে পাঠানো হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। তারপর, লিখে দিচ্ছেন অখ্যাত কোম্পানীর নিুমানের ওষুধ। রোগে-অসুখে বিপদগ্রস্থ মানুষ নিরুপায় হয়ে গ্রহন করছেন ডাক্তারদের পরামর্শ। এছাড়াও, কর্মদিবসের কর্মঘন্টায় বেশীরভাগ চিকিৎসকদের পাওয়া যায় হাসপাতালের নিকটবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে কর্তব্যরত। মূমূর্ষু রোগীদের প্রাইভেট চেম্বারে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। ফলে, অত্র উপজেলার ৬ লক্ষাধিক মানুষ বি ত হচ্ছেন সরকারী চিকিৎসাসেবা থেকে।

    সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন চেম্বারে বসেন অন্তত ১০জন চিকিৎসক। রোগীদের লম্বা লাইন থাকলেও ডাক্তাররা খোশগল্পে মেতে থাকেন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে। ওষুধ কোম্পানীগুলোর মেডিকেল প্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেধে দিলেও এসব প্রতিনিধিরা সবসময় ডাক্তারদের ঘিরে বসে থাকেন এবং মাঝে মাঝে নিজেদের ওষুধ লেখার জন্য ডাক্তারকেও পরামর্শ দিতে শুনা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অখ্যাত ওষুধ কোম্পানীর মেডিক্যাল প্রতিনিধিদের কয়েকজন কোন কোন চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ার সুবাদে লিখিয়ে নিচ্ছেন নিুমানের ওষুধপত্র। এছাড়াও, অতিরিক্ত কমিশন পাওয়ার লোভে নিুমানের ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে ডাক্তারদের সখ্যতা সর্বজনবিদিত। ভূইফোড় ওষুধ কোম্পানীতে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের চাকুরী পাইয়ে এবং এগুলোর ওষুধ লিখে রোগীদের সাথে প্রতারনা করার অভিযোগ উঠলেও টনক নড়ছেনা প্রশাসন ও লোভী ডাক্তারদের। দেখা যায়, প্রতিটি চেম্বারের প্রত্যেক ডাক্তার হাসপাতালে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র লিখে দেওয়ার নির্ধারিত ফিস বা ভিজিট গ্রহন করছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা অসহায় রোগী অথবা তাদের সহযোগীরা নির্দিষ্ট ফিসের কম দিলে চিকিৎসকরা ছুড়ে ফেলে দেন টাকাগুলো। এমন একজন ভূক্তভোগী বলেন, ‘সরকারী হাসপাতাল জাইন্যা হই আমরা আইচলাম, অত টেকা ফিস লাগে যে আমরারে কেউ কইচে না’। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগী বলেন, সাহায্য চাইলেই চেয়ারম্যান, মেম্বরেরা আমরারে হাসপাতালে আইতে কইন, অখন যে বড় নোট ছাড়া চিকিৎসা হয়না ইটা তো কইয়া দেইন না’।  এসবের পাশাপাশি, উক্ত হাসপাতারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুদ থাকলেও চিকিৎসকরা রোগীদের পাঠিয়ে দেন বেসরকারী ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে এবং ডায়াগনোসিসের রোগী ধরার জন্য ডাক্তারের আশেপাশে বিচরন করেন বিভিন্ন শ্রেনীর দালালেরা। আর, নির্দেশমত ঔষধ  না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন শতশত অসহায় মানুষ। অন্যদিকে, জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সহকারীদের বাসা থেকে অনুরোধ করে আনতে হয় মুমুর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য। ফলে, একদিকে অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি, অন্যদিকে বিপদে পড়া রোগীরা ক্লিনিকের দারস্থ হয়ে এবং বাধ্য হয়ে অহেতুক খরচ করছেন কয়েকগুন বেশী। অব্যবস্থাপনার দরুন, শক্তিশালী জেনারেটর পড়ে আছে সিড়ির নীচে, এটা কয়েক বছর ধরে অচল। তাই, বিদ্যুতের লোডশেডিং এর সময় মোমবাতি জালিয়ে চলে ৩০ হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত হাসপাতালটি। রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত মানহীন খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা বলা বাহুল্য।

    গত ৮ম জাতীয় সংসদে বিএনপি জোট সরকারের আমলে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সংযুক্ত ভবন যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩০ থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার কথা থাকলেও আজ প্রায় দুই যুগের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও খোলা হয়নি নতুন ভবনটির দরজা। ইতোমধ্যে, নতুন ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে এবং এর অব্যবহৃত সকল জিনিসপত্র নিলামে তোলা হয়েছে। নিজেদের দূর্নীতে ও অসততা ঢেকে রাখতে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি ও তহবিল সংকটের দোহাই দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। মোটকথা, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং এর সুচিকিৎসা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সরকারী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বি ত চুনারুঘাট উপজেলাবাসী প্রশাসনের সুনজর আশা করছেন ও হাসপাতালটির রোগমুক্তি কামনা করছেন।