চুনারুঘাটে শিক্ষার আলো বিস্তারে “শিখন”

    1
    319

    আমারসিলেট24ডটকম,৩১মে,এস,এম,সুলতান খানঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সুবিধা বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে শিখন কর্মসূচী তৎপর। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে, সেভ দ্যা চিলড্রেন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আরডিআরএস বাংলাদেশ কর্তৃক চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলায় এ কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য মৌলিক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং জাতীয় মৌলিক শিক্ষা কাঠামোতে অবদান রাখাই এ কর্মসূচির শিখন কর্মসূচির অভিষ্ট জনগোষ্ঠী হচ্ছে চর, হাওর, উপকূল ও পাহাড়ি এলাকা সহ দুর্যোগপ্রবণ প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া শিশু এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী।

    আর এরই অংশ হিসেবে চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলার চা-বাগান ও হাওর এলাকার পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু করে। এ দুই উপজেলায় মোট ১০৫টি এনএফপিই (উপানুষ্টানিক প্রাথমিক শিক্ষা) শিখন স্কুল চালু করা হয় যেগুলোর মাধ্যমে প্রায় ৩৩০০ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করবে। প্রতিটি স্কুলে ৮-১০ বছর বয়সী ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী এবং একজন শিক্ষিকা আছেন। শিক্ষিকা ৩-৪ ঘন্টা হাতে-কলমে শিক্ষাদানের মাধ্যমে পাঠদান করিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এনএফপিই কার্যক্রমের শিক্ষার্থীরা ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে এবং ২০১৬ সালে সমাপনী পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এনএফপিই কার্যক্রমের পাশাপাশি ২০১৪ সালের জানুয়ারী থেকে চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলায় মোট ৪৯টি ইপিই (প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা) শিখন কেন্দ্র চালু করা হয় যেগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১৬০০ শিশু প্রাক-প্রাথমিক থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাবে এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে পার্শ্ববতী আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হবে।

    এখানেও প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ থেকে ৬ বছর বয়সী ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সেখানে একজন শিক্ষিকা রয়েছেন, যিনি ৩-৪ ঘন্টা হাতে-কলমে শিক্ষাদানের মাধ্যমে পাঠদান করিয়ে থাকেন। বর্তমানে ইপিই কার্যক্রমের শিক্ষার্থীরা প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে এবং ২০১৬ সালে ২য় শ্রেণি সমাপ্ত করবে। শিখন কর্মসূচির কার্যক্রম দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ৯৫টি গ্রাম জুড়ে বিস্তৃত। চুনারুঘাটে ৫১টি এবং বাহুবলে ১০৩টি শিখন স্কুল ও কেন্দ্র চালু রয়েছে। প্রতিটি স্কুলে একটি করে এসএমসি কমিটি রয়েছে, যারা স্কুলের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করেন। প্রতিটি শ্রেণির শুরুতেই শিক্ষিকাদের জন্য ৮দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রতি মাসে একদিনের রিফ্রেসার্স প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি শিখন কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত কাজ করে করে- প্রতিবছর দুইবার সকল শিক্ষার্থীকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো, বছরে একবার ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ানো ও প্রতিবছরে ২০ সপ্তাহে ২০টি আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়।

    এ ছাড়াও বিনামূলে শিক্ষার্থীদের চক্ষু পরিক্ষা করানো হয়। বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলার শিখন কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি ফিল্ডঅফিস রয়েছে।  অফিসের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন ফিল্ড কো অর্ডিনেটরসহ মোট ১৮জন স্টাফ রয়েছেন। এদের  মধ্যে দুইজন শিক্ষক প্রশিক্ষক, ১২ জন লার্নিং ফ্যাসিলিটেটর একজন সহকারি এডমিন অফিসার ও ২জন সাপোর্ট স্টাফ রয়েছেন। সিলেট বিভাগে ১৪টি উপজেলায় শিখন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে সিলেট বিভাগীয় প্রোজেক্ট কো অর্ডিনেটর ফিল্ড অফিসগুলো তদারকি করেন। প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর মো: শাহ আলম কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, আরডিআরএস বাংলাদেশ আগামী ২০১৬ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষায় একটি ভাল ফলাফল উপহার দিতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।

    ফিল্ড কো অর্ডিনেটর মো: সাজিদুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালে এ দুই উপজেলার অনগ্রসর ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা করার লক্ষ্যে চালু করা হবে “শিখন ক্লাব” নামে আরও একটি কার্যক্রম। উপজেলা শিক্ষা অফিসের পরামর্শক্রমে সে কার্যক্রম শুরু করা হবে। চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলায় শিখন কর্মসূচি সুবিধা বঞ্চিত শিশুদেরকে শিক্ষার আওতায় অর্ন্তভুক্ত করে অত্র এলাকায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করি ও  আশাবাদী।