প্রভাবশালী শ্বশুর-শাশুড়ী থেকে এক কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ

    0
    407

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০জুলাই,ফারুক মিয়া: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার  মিরাশী ইউনিয়নের গোয়াছপুর গ্রামের মৃত আঃ শুকুর মিয়ার মেয়ে শাকিলা সুলতানা রিমা (১৫) নামে এক অসহায় এতিম পরিবারের মেয়ে।দুঃখ ও কষ্ট ছোটকাল থেকে ছড়িয়ে  পড়েছে এতিম কিশোরীটির উপর। সম্পত্তির লোভে পূর্ব শত্র“তার জের ধরে ২০০০ সালে গ্রামের কোন্দলে শাকিলা সুলতানা রিমার বাবাকে হত্যা করা হয়। তখন মেয়েটি শিশু ছিল। তখন মেয়েটির মাতা নাছিমা খাতুন অনেক দুঃখ কষ্টে দিন কাটিয়ে এতিম মেয়েটিকে নিয়ে প্রভাবশালীদের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শাকিলা সুলতানা রিমাকে নিয়ে চলে যায় গাজীপুর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে নানার বাড়িতে। সেই জায়গা থেকে তার বয়স হয় ১০ বছর।

    হঠাৎ করে কিছুদিন যেতে না যেতে ওই শাকিলা সুলতানা রিমার মা নাছিমা খাতুন মেয়েটিকে রেখে একা ফেলে কি করে ২য় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়? এটি এতিম মেয়েটির প্রশ্ন। আরো দুঃখ কষ্টে বেড়ে আসছিল মেয়েটির উপর।

    তখন মেয়েটির বয়স হয় ১৪ বছর। তারপর মেয়েটি তার বাবার পিতৃ সম্পত্তি খোজ করে। মেয়েটির বাবার জমি-জমা রক্ষা করতে চাইলে মেয়েটি নিরুপায় হয়ে বাবার পিতৃ সম্পত্তিতে গিয়ে দেখাশুনা করতে গেলে গোয়াছপুর এসে তার বাবার সম্পদ চাইলে তাহার আপন চাচা আঃ গফুর মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে জোরপূর্বক ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে বলে তাহলে তুমি যদি আমার কথামত তোমার বাবার সম্পত্তি দেখাশুনা করবে বলে তুমি আমাকে স্বীকারোক্তি দিতে হবে। নইলে আমার প্রবাসী ছেলের সাথে তোমার বিয়ের মতামত দিতে হইবে। এই বলে তার চাচা বিভিন্ন ভাবে মেয়েটিকে নির্যাতন করে আসছিল।

    ছেলে শামিম মিয়া বিদেশ প্রবাসে থাকে। গত ২/৩ বৎসর পূর্বে শাকিলা সুলতানা রিমাকে চাচা আঃ গফুর বিভিন্নভাবে প্রলোভন দিয়ে বিদেশে থাকা তার ছেলে শামিমের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ করে বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করে। পরে বিদেশে থাকা অবস্থায়ই মোবাইল ফোনে মেয়েটিকে তার ছেলের সাথে ফোনে বিয়ে দেয়া হয়। এভাবে বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর শাশুড়ী এই এতিম মেয়োটির উপর নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিদেশে থাকা তার স্বামী শামিম মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে শামিম মিয়া বলেন, বাবা-মায়ে যেভাবে চালান সেই ভাবেই তোমাকে চলতে হবে এই আমার আদেশ। সে জানায় আমি বিদেশ থেকে যেদিন দেশে ফিরব তুমি তোমার বাবার সম্পত্তি আমার নামে অথবা আমার বাবার নামে লিখে দিতে হবে।

    এছাড়া ফোন দিলে আমি আর কোন কিছু বলব না বলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রেখে দেন তার স্বামী। এভাবে দুঃখ কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছিল এতিম কিশোরী মেয়েটি। গত কিছুদিন পূর্বে দেখা যায় শ্বশুর শাশুড়ী নির্যাতন করে মেয়েটিকে ঘরের ভিতরে হাত-পা বেঁধে রাখে। তখন মেয়েটি বাথরুমে যাবে বলে বেড়িয়ে এসে তার হাতে থাকা একটি নকিয়া মোবাইল সেট নিয়ে বাথরুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে তার ব্যবহারের মোবাইল থেকে শাকিলা সুলতানা রিমা তড়িৎ গতিতে মোবাইলটির মাঝে একটি মেসেজ লিখে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাশহুদুল কবিরের মোবাইল প্রেরণ করে।

    তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেসেজটি পেয়ে দ্রুত ঘটনাটি দেখে চুনারুঘাট থানার ওসি অমূল্য কুমার চৌধুরীকে বিষয়টি জানালে, তখন চুনারুঘাট থানার এসআই হারুনুর রশীদ একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে শাকিলা সুলতানা রিমাকে উদ্ধার করে ও এসময় শাকিল সুলতানা রিমা জানায়, তার শ্বশুর-শাশুড়ী সহ অনেকেই রিমার হাত থেকে দলিলে টিপসই, দস্তখত নিয়েছে বলে মেয়েটি জানায়। একথা শুনে থানা পুলিশ সাথে সাথে তার দস্তখত ও টিপসই দেয়া দলিলটি উদ্ধার করে মেয়েটির সাথে থানায় নিয়ে আসে। তখন মেয়েটি আরও জানায় যে, স্থানীয় এলাকার চেয়ারম্যান আমাকে একটি জন্ম নিবন্ধন ১৯ বছর বয়স দেখিয়ে ছেলের বাবাকে করে দেন। তখন ইউ/পি চেয়ারম্যান মেয়েটির চাপে পরে নিবন্ধনটি ভূয়া বলে স্বীকারোক্তি দেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান বলেন, আমিতো মেয়েটিকে ১৮ বছর হয়েছে কিনা আমি দেখি নাই, তার চাচা আমাকে ভুল তথ্য দিয়ে একটি নিবন্ধন ১৯ বছর বয়স দেখিয়ে তৈরি করে নিয়ে যায়। সেই নিবন্ধনটি দিয়ে বিয়ের কাজ করা হয়।

    পরে চুনারুঘাট থানায় এসে হাজির হয়ে ওই অসহায় পরিবারের এতিম মেযেটি শাকিলা সুলতানা রিমা বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় ৩/৪ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগটি চুনারুঘাট থানার এস.আই হারুনুর রশীদ যাচাই-বাছাই করে ঘটনাটি সত্যতা নিশ্চিত করেন। পুলিশ জানায়, পূর্বে মেয়েটির বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে সম্পত্তির লোভে হত্যা করা হয়েছিল ও বিভিন্নভাবে মেয়েটিকে বারবার নির্যাতন করে আসছিল মেয়েটির চাচা-চাচী ও তার স্বামী। শাকিলা সুলতানা জানায়, আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানাই। আইনের ফাঁক থেকে আমার বাবার হত্যাকারীরা বেড়িয়ে এসেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার চাই। হত্যা মামলার আসামীরা হলেন- তোতা মিয়া, ফজল মিয়া, দুলা মিয়া, সুরুজ মিয়া সহ আরো অনেকে। ঘটনার পর থেকে শাকিলার শ্বশুর শাশুড়ী পলাতক রয়েছে।

    শাকিলা সুলতানা রিমা তার বাবার হত্যাকারী ও শ্বশুর-শাশুড়ী এবং স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।