করোনা রোগীকে এম্বুলেন্স না দেওয়ায় ইউএন’র উদ্যোগে বে-সরকারী এম্বুলেন্স!

0
848
চা-বাগানে এম্বুলেন্স না দেওয়ায় করোনা রোগীকে সরকারী এম্বুলেন্সে ইউএন'র সেবা
চা-বাগানে এম্বুলেন্স না দেওয়ায় করোনা রোগীকে সরকারী এম্বুলেন্সে ইউএন'র সেবা

“এম্বুলেন্স প্রদানে অবহেলা করায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু দাবী করে চা বাগানে কর্মবিরতী করেছে বাগান শ্রমিকরা”

জহিরুল ইসলাম,শ্রীমঙ্গলঃ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে ফিনলে চা বাগানের চিকিৎসক কর্তৃক নিজেদের বাগানের এম্বুলেন্স প্রদানে অবহেলা করায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু দাবী করে চা বাগানে কর্মবিরতী করেছে বাগান শ্রমিকরা।

আজ শুক্রবার ২৩ এপ্রিল সকাল থেকে শতাধিক চা শ্রমিকরা চা বাগানে জড়িত হয়ে কর্মবিরতী করে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কালিঘাট পোস্ট অফিসের পিয়ন মন্টু তাঁতী (৫৫) মারা যান।

কালিঘাট চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি, কালীঘাট চা বাগানের বাসিন্দা পোষ্ট অফিসের অবসর প্রাপ্ত অফিস সহকারী মন্টু তাঁতী (৫৫) গত বুধবার ২০ এপ্রিল করোনা পজেটিভ হন। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তার শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেলে বাগানে অবস্থিত হাসপাতালে এম্ব্যুলেন্স চাওয়া হয়। কিন্তু বাগান হাসপাতাল থেকে এম্ব্যুলেন্স না দিলে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। কালীঘাট ইউনিয়নের মহিলা সদস্যা জানান, বাগানের ম্যানেজারকে চা বাগানের হাসপাতালের এম্বুলেন্সটি পাঠানোর জন্য অনেক অনুরোধ করি। তিনি আমাকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বলেন।
পরে আমি হাসপাতালের এর চিকিৎসক নাদিরা খানমকে বললে তিনি সোজাসোজি বলেন করোনা রোগীর জন্য এম্বুলেন্স দেওয়া যাবে না। আপনারা রোগীকে সিএনজিতে করে নিয়ে যান। আমরা তাদের অনেক রিকুয়েস্ট করি। পরে আমরা কোন উপায় না পেয়ে শ্রীমঙ্গলের ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি সাথে সাথে একটি বে সরকারী এম্বুলেন্স পাঠান। একই অভিযোগ বাগানের পঞ্চায়েত সদস্য সহ অন্যান্য শ্রমকদের থেকে ও শুনা গেছে।
জানা যায়, রোগীকে মৌলভীবাজার নিয়ে যাওয়ার পর সে মারা যায়। বাগানের এম্ব্যুলেন্সটা দিলে হয়তো আগেই রোগীকে মৌলভীবাজার নিয়ে যাওয়া যেত।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বালিশিরা মেডিক্যাল ডিপার্টম্যান্ট (বিএমডি) এর চিকিৎসক নাদিরা বলেন, এই এম্বুলেন্স করোনা রোগী নিয়ে গেলে অন্যান্য রোগীর জন্য সমস্যা হয়ে যায়। এসব বিষয় আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তারা দেখে থাকেন। এখানে এম্বুলেন্স দেওয়ার বিষয়ে আমার কোন এখতিয়ার নেই। তথ্য নিয়ে জানা গেছে এই ডাক্তার চা বাগানের শ্রমিকদের সব সময় অবহেলার চোখে দেখেন চিকিৎসাপত্রের মেডিসিন বুঝিয়ে দেন না এমনকি কি ভালো করে সম্মানের সাথে রোগীদের সাথে কথা বলেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রাত ১২ টার দিকে করোনা সুরক্ষা টিম সেখানে যান চা বাগানের শ্রমিকরা ঐ ডাক্তারের বিরুদ্ধে সরাসারি নানা অভিযোগ করে আন্দোলনের হুমকি দেয় ।

কালিঘাট চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ সালাউদ্দিন বৃহস্পতিবার রাতে বলেছিলেন, আমাদের হাসপাতালের এম্বুলেন্সে জরুরী জিনিস পত্র থাকায় আমরা অন্য জায়গা থেকে এম্বুলেন্স এনে দিয়েছি। বেশী সময় অতিক্রম করা হয় নি। এই বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন।

শুক্রবার দুপুরে বাগানে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতী সম্পর্কে জানতে তাকে ফোন দিলে তিনি একটি মিটিং এ ব্যাস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম গত কাল মাঝ রাতে বলেন, আমি রাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে মৃতদেহ সৎকারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে এসেছি। করোনা রোগীর জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ যেন আরও গুরুত্ব দিয়ে তাদের জীবন রক্ষার কাজে সহযোগিতা করে সে বিষয়ে আমি অফিসিয়ালভাবে একটি চিঠি পাঠাবো তাদের কাছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগে সমালোচনার ঝড় বইছে। আনিসুল ইসলাম আশরাফি একটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক তিনি তার ফেইজবুকে যা লিখেন তার স্কিনশর্ট তুলে ধরা হল।

ফেইসবুক স্কিন শর্ট

“কালীঘাট চা বাগানে করোনা পজিটিভ এক ব্যক্তির মৃত্যুতে তার পরিবারে অর্থসহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং সাহস ও শান্তনা জোগানোর কাজে রাত ১২টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্যাগ ও সুরক্ষা টিমের সদস্যদের অংশগ্রহণ সত্যি প্রশংসার যোগ্য।
যেখানে কমপক্ষে ৫০ বছর ধরে একটি বাগানে কাজ করেও অসুস্থতায় ওই বাগানের এম্বুলেন্সে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেননি, অথচ ইউএনওর সহযোগিতায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে বিষয়টি মামুলি নয়;শিক্ষার বিষয়।আসুন মাস্ক পড়ি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি অন্যকে সচেতন করি নিজেও সচেতন থাকি এবং সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে ভালবাসতে শিখি।“