চরম দারিদ্র্যতায় উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন ঝরে যাচ্ছে লায়লার

    0
    253

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,জুন,শাব্বির এলাহী:মা-বাবা দুজন দিনমজুরী করে ৮ সদস্যের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন। সেখানে জিপিএ-৫ পেয়ে মেয়েকে কিভাবে ভাল কলেজে ভর্তি করবেন এ চিন্তায় দিশেহারা তারা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের দিনমজুর দম্পতির মেয়ে লায়লা আক্তার এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সীমাহীন বাঁধা পেরিয়ে ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীনে লায়লা জিপিএ-৫ পেয়েছে। শুধু কি টাকার অভাবে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে লায়লার?

    লায়লার মা ইয়ারুন বেগম জানান, তিনি ও তার স্বামী ইছমাইল মিয়া দিনমজুরী করে কোন রকমে পরিবারের ৮ জন লোকের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমনও অনেক দিন গেছে যে, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে যে খাবার জুটেছে তা নিজে না খেয়ে ছেলে মেয়েদের খাইয়েছেন। ভাই-বোনের মধ্যে লায়লা সবার বড়।

    লায়লার দাদী সত্তরোর্ধ্ব জলিকা বেগম জানান, নিজেদের ভিটে মাটি না থাকায় চাচার বাড়িতে একটি চালা তুলে কোন রকমে রাতটুকু পার করেন তারা। এত কষ্টের পরেও লায়লার ১ বোন ও ৩ ভাইয়ের সবাই লেখাপড়া করছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে হারিকেন জ্বেলে অথবা চাচার ঘরে বিদ্যুতের আলোয় খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করতে হয়েছে লায়লাকে।

    লায়লা জানায়, টাকার অভাবে কোন সময় প্রাইভেট পড়তে পারিনি। একটি স্কুল ড্রেসেই বছর তিনেক পার হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে গিয়ে ধারদেনা ও নিজের হাঁসমুরগী বিক্রি করতে হয়েছে। ভাল কোন কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষক হওয়ার তার খুব ইচ্ছে। কিন্তু বাধ সেধেছে অর্থ।

    দু’চোখের জল ফেলে লায়লার মা আক্ষেপ করে বলেন, সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে জেনে নারী হয়ে মজুরীতে পরের গরু মাঠে চরাতে গিয়েছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। বড় ক্লাসে কেমন করে পড়াবো মেয়েকে ? এত টাকা কোথায় পাবো ? লায়লা চায় উচ্চশিক্ষা অর্জন করে তার স্বপ্ন পূরণ করতে। শুধু অর্থের অভাবে দারিদ্রতার করাল গ্রাসে মেধাবী এ সন্তানের লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছাকে পিষে ফেলে এ বয়সেই বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তার মা-বাবা। মা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, অনেক কষ্টে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছি। আর পারছি না। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এত টাকা আমি কোথায় পাব? পরিবারে এখন আনন্দের পরিবর্তে বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ। উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশা তার ও তার পরিবারের কাছে চরম বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।

    লায়লা ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও সংসারের জন্য কিছুটা অবদান রাখতে চান, চান ডুবন্তপ্রায় সংসারের হাল ধরতে। এ অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষায় এমন আশ্চর্য্য ফলাফলের পরও তার পরিবার চরম দূর্ভাবনায়। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে পুরণ হতে পারে লায়লার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নসাধ। নতুবা এখানেই থেমে যাবে অদম্য মেধাবী লায়লার শিক্ষা জীবন।লায়লার বাবা ইসমাইল মিয়ার আকুতি যদি সরকার বা সমাজের বিত্তবান কেউ আমাদের কিছু সহযোগীতা করতো তাহলে কলেজে ভর্তি করে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চারিদিকে অন্ধকার দেখছেন লায়লার মা-বাবা।