চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হোক রাজনৈতিক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

    0
    218

    আমারসিলেট24ডটকম,ফেব্রুয়ারী,লুৎফুর রহমান তোফায়েলআগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে দেশে শুরু হচ্ছে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ছয় দফায় অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম দফা আসছে আগামী বুধবার। পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। যেসব উপজেলায় এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি এখানকার সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ব্যস্ত রয়েছেন আগাম প্রস্তুতি নিয়ে। এজন্য সাজ সাজ রব বিরাজ করছে উপজেলাগুলোতে। গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী আমেজ। অনেক এলাকায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ না হওয়ায় ভোটাররা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে অপেক্ষা করছেন এই নির্বাচনের।

    উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মূলত স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। এজন্য এখানে রাজনৈতিক বিষয়টা আলোচনার বাইরেই থাকার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন নিয়েই নির্বাচন অংশ নেন প্রার্থীরা। এজন্য পুরোদস্তুর একটি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় প্রার্থীদের মধ্যে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য এটা নেতিবাচক নয়। বরং গণতন্ত্র চর্চার জন্য তা ইতিবাচকই মনে হয়।

    দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এজন্য নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।

    তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুন:প্রবর্তন এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট। এছাড়া বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়েও তৎপর ছিল রাজপথে। এসব আন্দোলনে সংঘাত-সহিংসতার মাত্রা ছিল অস্বাভাবিক। জনমনে ছিল সীমাহীন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। তিন চার মাসের হরতাল, অবরোধ ও বিক্ষোভে আন্দোলনকারীদের সাথে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে বিপুল পরিমাণ রক্তপাত ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যৌথ বাহিনীর অভিযান। এসব সহিংসতা, সংঘর্ষ ও অভিযানে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। হরতাল-অবরোধের কারণে অর্থনীতিতে নেমে আসে স্থবিরতা। জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠে। যা ছিল গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। এটাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরাট দূরত্বের সৃষ্টি হয়। তখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। জাতিসংঘসহ অন্যন্য সংস্থাগুলো সমোঝতায় বসার জন্য সব রাজনৈতিক পক্ষে বার বার অনুরোধ করে। এবং এখনো বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র নতুন নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

    গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন ও সহিংসতায় দেশে যে এক অনাকাংক্ষিত  পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে মুক্তি চাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কেটে গিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। কারণ সব দলই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যেটা গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ ছোট বড় সব দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এবং নিজেদের পছন্দ মতো প্রার্থী মনোনীত করছে। দলের কেন্দ্রীয়-স্থানীয় নেতারা এসব নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণ করছেন। এটা রাজনৈতিক সম্প্রীতি সুদৃঢ় হওয়ার পথে একটি মাইল ফলক হিসেবে মনে করা যায়। তাই চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের একটিই প্রত্যাশা, যে সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে এর আলোকে আগামী দিনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে উঠুক রাজনৈতিক সম্প্রীতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি সরকারের শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। শান্তি ফিরে আসুক সবুজ শ্যামল প্রিয় এই দেশটাতে।