গ্যাস সিলিন্ডার আতঙ্কে গোটা দেশ

    0
    496

    থামেনি লাইসেন্স বিহীন এল পি জি গ্যাস সরবরাহকারী অসাধু ব্যবসায়ীরা

    এম ওসমান,নিজস্ব প্রতিনিধি: বর্তমান সময়ে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে এল পি জি গ্যাস নিয়ে ভয়ংকর সব কথা। সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি করেছে এল পি জি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার। তবুও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই এল পি জি গ্যাস খোলামেলা ভাবে বিক্রি করছেন এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীরা। 

    রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে পরপর সিলিন্ডার বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটলেও সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বড়েছে কিন্তু থামেনি লাইসেন্স বিহীন এল পি জি গ্যাস সরবরাহকারী অসাধু ব্যবসায়ীরা।
    বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছাড়াই ছড়িয়ে পড়েছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। আইন-কানুন না মেনেই শুধু পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির অহরহ দোকানপাট খুলে নির্বিঘেœ ব্যবসা চলছে। এসব দোকানে নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। দেশের প্রতিটি জনবহুল কিংবা আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যবসার কারণে জনজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
    সরেজমিন বিভিন্ন বাজার ও ছোট বড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা না রেখেই বিভিন্ন দোকান পাট ও মার্কেটের ভেতরে সিলিন্ডার রেখে খুঁচরা এলপি গ্যাস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলপি গ্যাস প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নিলেও খুঁচরা ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার মজুদে আইন অনুসরণ করছেন না। বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর ‘দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪’-এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে ‘লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে’ তা উল্লেখ আছে বলে জানা যায়।
    বিধি অনুযায়ী, ১০ (দশটি) গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদকরণে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ ১০টির বেশি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১নং ধারায় বলা আছে, আগুন নেভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুদাগারে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখিতে হইবে। অথচ বিক্রেতারা ব্যবসা পরিচালনার সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করলেও ১০টির বেশি সিলিন্ডারে আবশ্যকীয় সনদ কিংবা আগুন নিভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুদাগারে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ নেই।
    এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতারা জানান, তারা বেশির ভাগই আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে অবগত। তার পরও সঠিক তদারকির অভাবে ঝুঁকি জেনেও তারা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে এবং বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের বিপণন কৌশলে প্ররোচিত হয়েও তারা আইন অনুসরণ থেকে পিছিয়ে আসছেন।
    বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ ছাড়াই স্থানভেদে ১০ থেকে শুরু করে শতাধিক এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দোকানে মজুদ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসবোঝাই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। দেখা গেছে, কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদের আবেদন করলেও সেটি পাওয়ার অপেক্ষা না করেই দোকান ভাড়া নিয়ে সিলিন্ডার বেচাকেনা শুরু করেছেন। 
    বিভিন্ন স্থানে হার্ডওয়্যার-সামগ্রী বিক্রেতা, এমনকি সিমেন্ট ও মনিহারি-সামগ্রীর দোকানেও এলপি গ্যাস বিক্রি চলছে। বিক্রি হচ্ছে মুদি দোকান ও ছোট বড় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দেশে সাধারণত উৎপাদনকারীর কারখানা থেকে ডিলার হয়ে খুঁচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে এলপি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার পৌঁছায়। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারীরা ডিলারদের কাছে সিলিন্ডার সরবরাহের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদের বিষয়টি যাচাই করে থাকেন। কিন্তু সরবরাহ চেইনে সাধারণত এরপর আর তদারকি হয় না। 
    যদিও আইন অনুযায়ী ১০টির বেশি এলপি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার বা গ্যাসাধার রাখলে যেকোনো ব্যবসায়ীর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক। আর সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে প্রায়ই সব ধরনের দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫টি, ১০টি বা তার বেশি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার ক্রয় বিক্রয় করছেন। সম্প্রতি দেশের রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা শহরে সিলিন্ডার বিস্ফোরনে ভয়াবহ আগুনের সুত্রপাত ঘটেছে। আর এ ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে।