গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করবে ট্রাইব্যুনাল

    0
    435

    ঢাকা, ১৭ এপ্রিল : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান দিয়েছে। এখন যে কোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে আজ বুধবার তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় প্রসিকিউটররা আসামিপক্ষের বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি এবং সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তারপরই মামলাটিকে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় নেয়া হয়। তারও আগে গত সোমবার এ মামলার বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।
    প্রসিকিউটররা জানান, জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্য করা এবং হত্যা নির্যাতনে বাধা না দেয়ার ৫ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মূলতা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি হত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী হিসেবে তার নামটিই রয়েছে সবার ওপরে।
    ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, গোলাম আযমের পক্ষে মোট ১২ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা ১১ কার্যদিবসে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলেও আসামিপক্ষ মাত্র একজন সাফাই সাক্ষীকে হাজির করতে পেরেছে। গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী।
    জানা যায়, মোট পাঁচ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬১টি ঘটনায় গত বছরের ১৩ মে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র, সহযোগিতা, উস্কানি ও হত্যাযজ্ঞে বাধা না দেয়া এবং নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে।
    বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী গোলাম আযম ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন, যাদের সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭১ থেকে ৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এ জামায়াত নেতা। ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি।
    ইতিমধ্যেই তিনটি মামলার রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে প্রথম রায়ে জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন এবং তৃতীয় রায়ে দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের মামলাও রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ।