গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাড়ে ৪৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

    0
    214

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,জুন: সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জন্য ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। পৌরসভার মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু রবিবার বাজেট ঘোষণা করেন।

    দুুপুর ১২টায় পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাজেট অনুষ্ঠানে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, কাউন্সিলার, প্রিন্ট, ইলেকট্রিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
    বাজেট বক্তৃতার শুরুতে মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন,
    আল্লাহর অশেষ রহমত যে তিনি আমাকে ঐতিহ্যবাহি গোলাপগঞ্জ পৌরসভার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আজকের এই বাজেট পেশ করার তৌফিক দিয়েছেন। আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সম্মানীত পৌরবাসীর প্রতি যাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও দোয়া আমাকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। পৌরবাসী না চাইলে আমি কখনও এখানে আসতে পারতাম না। তাই আমি আমার জীবন পৌরবাসীর সেবার জন্য উৎসর্গ করেছি। আমি আবারও প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি পৌরবাসীর এ ভালোবাসার মর্যাদা রক্ষা করবো- ইনশাআল্লাহ।

    বাজেটে বিভিন্ন সরকারি ও উন্নয়ন সংস্থা থেকে অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ ৫ হাজার টাকা।
    এর মধ্যে অবকাঠামো ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৯৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। বাস ট্রাক টার্মিনাল, যাত্রী ছাউনিসহ বিভিন্ন খাতে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এছাড়া বাগান পার্ক ও ভূমি অধিগ্রহণ/ক্রয়ের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।

    মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, আপনারা অবশ্যই জেনেছেন এই পৌরসভা ইতোমধ্যে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। গত ৫ বছর ধরে আমরা প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভার গর্বিত নাগরিক।
    তিনি বলেন, পৌরসভার ব্যয় নির্বাহের জন্য কর আদায় অপরিহার্য। পৌরবাসী কর আদায় না করলে উন্নয়ন ব্যয় চালানো সম্ভব নয়।
    পৌরসভার সবচেয়ে বড় করখেলাপি উপজেলা প্রশাসন। প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকার কর বকেয়া রয়েছে। এধরনের মোট ১৫ টি প্রতিষ্ঠিানের নিকট পৌরকর বকেয়া রয়েছে।

    মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, অন্য দশটা পৌরসভার মেয়রের মত আমার পথচলা কখনই মসৃণ ছিলনা। আমি গত ১৩ বছর ধরে অত্যন্ত বন্ধুর পথ অতিক্রম করছি। সেই ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে একটি মহল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান কিংবা মেয়র হয়েও আমাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় চরম নাজেহাল হতে হয়েছে।
    আমি মনে করি এই ষড়যন্ত্রের কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু ক্ষতির শিকার হয়েছি তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পৌরসভার। কারণ এর ফলে বার বার পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন, ভালবাসা সহযোগিতায় সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে গোলাপগঞ্জ পৌরসভা লক্ষ্য পানে এগিয়ে চলেছে। মানুষের দেওয়া আমানত রক্ষায় আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি সব সময় সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে সামনে পা ফেলছি। তারপরও মানুষমাত্রই ভুল হয়ে থাকে। আমিও ভুলের ঊর্ধে নই।

    মেয়র বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিয়ে ছিলাম তখন পৌরসভার ১৫ শতাংশ রাস্তা পাকা ছিল। এখন পৌরসভার ৯০ ভাগ রাস্তা পাকা করা হয়েছে।বাজেটে উন্নয়ন খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী, এডিপি, বিশেষ প্রকল্প মঞ্জুরী, দ্বিতীয় নগর পরিচালন অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প মঞ্জুরী, অফিস ভবন নির্মান মঞ্জুরী, উপজেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত মঞ্জুরীর বিপরীতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ৫ হাজার টাকা মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে।

    এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তন্মধ্যে রাস্তা নির্মান, রাস্তা উন্নয়ন ও মেরামত, ব্রিজ/কালভার্ট নির্মান, গণশৌচাগার নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার, ড্রেন নির্মান, মেরামত ও সংস্কার, পানির লাইন স্থাপন, মেরামত ও স্ংস্কার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

    বাস ট্রাক টার্মিনাল, যাত্রী ছাউনি নির্মান, ভূমি অধিগ্রহন/ক্রয় খাতে ১,২৫,০০,০০০ (এক কোটি ২৫ লক্ষ টাকা) টাকার ব্যয় ধরা হয়েছে। মার্কেট নির্মান ও ভূমি অধিগ্রহন/ক্রয়, পার্ক, বাগান নির্মান ও ভূমি অধিগ্রহন/ক্রয় খাতে ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

    এছাড়াও পৌর ভবনের উন্নয়ন/সংস্কার/সম্প্রসারণ, বন্যা নিরোধ প্রকল্প (জরুরী ভিত্তিতে), পৌর ভবন উন্নয়ন/সংস্কার/সম্প্রসারণ, বন্যা নিরোধ প্রকল্প (জরুরী ভিত্তিতে), অডিটরিয়াম নির্মান ও ভূমি অধিগ্রহন/ক্রয়, কমিউনিটি সেন্টার নির্মান ও ভূমি অধিগ্রহন/ক্রয়, কসাই খানা নির্মান/ময়লা আবর্জনা ফেলার ভূমি ক্রয়, গভীর/অগভীর নলকূপ স্থাপন, অসহায় গরীবদের জন্য ঘর নির্মান, মন্দির ও শ্বসান ঘাট উন্নয়ন, ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন ও পরিচালনা ব্যয়, এম্বুলেন্স ক্রয় ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ মোট ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

    বিদ্যুত লাইন স্থাপন ও মেরামত (স্ট্রীট লাইট), রং ল্যাট্রিন সরবরাহ/স্যানিটেশন, পৌর সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ/ বিউটিফিকেশন/ ফোয়ারা,স্টেডিয়াম নির্মান/ মেরামত বাবদ ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

    ধৈর্য্য ধরে বক্তব্য শুনার জন্য মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রমজান মাসের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য ব্যবসায়ী, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকল মহলের তিনি সহযোগিতা কামনা করেন।

    বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী যোগেশ্বর চ্যাটার্জ্জি, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর জহির উদ্দিন সেলিম, গোলাম মোস্তফা মোসা, মোঃ আলাউদ্দিন, ফারুক আলী , নজরুল ইসলাম, সংরক্ষিত ০১,২,৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছোফিয়া বেগম, সংরক্ষিত ০৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেরুন বেগম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-০১ এর গোলাপগঞ্জ জোনাল শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস, গোলাপগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, পৌর নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি ও নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য আবুল কাহের সোয়া মিয়া, মকসুদ হোসেন বাবুল, আব্দুল কাদির, ডাঃ মোঃ শাহিনুর ইসলাম, অমিয় ভূষন পাল, আফতাব উদ্দিন, আজির উদ্দিন মাষ্টার ও প্রবীণ শিক্ষক রফিক উদ্দিন, আব্দুর রশীদ রসাই, টিকরবাড়ী এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বী সমছুদ্দিন সমছু মিয়া প্রমূখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি