গার্মেন্টসের জন্য বাইরে কম মূল্যে জমি চাচ্ছেন মালিকরা

    0
    228

    আমারসিলেট24ডটকম,০৪মেঃ আধুনিকশ্রমবান্ধব পোশাক কারখানা স্থাপনের জন্যরাজধানী ঢাকার বাইরে কম মূল্যে জমিচাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা। এজন্য তারা গত কয়েক বছর ধরে সরকারের কাছে আবেদনজানিয়ে আসছেন। গার্মেন্ট শিল্প নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ এবং গার্মেন্টকারখানার জন্য ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বিষয়টি সরকারেরও নজরেএসেছে। সরকার কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, তবে এটাকে প্রয়োজনের তুলনায়অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৈরি পোশাকেরকারখানাগুলো ঢাকার বাইরে না নিয়ে গেলে কমপ্লায়ান্স বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।আর এতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতেও বাধা কাটবে না।

    গার্মেন্টগুলো ঢাকার বাইরেনিয়ে গেলে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়া ঢাকা অনেকটা চাপমুক্ত হবে বলে মনেকরছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্প ও রাজধানী ঢাকাকে বাঁচানোরস্বার্থে কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপনিতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আলাদা কয়েকটি শিল্পপার্ক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী নেতারা।
    সরকারইতোমধ্যেই মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ৫শ’ একর জমির ওপর গার্মেন্ট পল্লী গড়েতোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেনবাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গত বুধবার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একসভায় তিনি এ তথ্য জানান। ওই সভায় ঢাকার সকল শিল্প-কারখানা রাজধানীর বাইরেনিয়ে যাওয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজীআকরাম উদ্দিন আহমেদ।
    গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতিআবদুস সালাম মুর্শেদী ইনকিলাবকে বলেছেন, এই মুহূর্তে তৈরি পোশাক শিল্পবাঁচাতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরকার ঢাকারবাইরে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ শিল্প পার্ক যেখানে আমাদের কারখানাগুলোস্থানান্তর করতে পারি। ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা না গেলে প্রায় অর্ধেককারখানাতেই কমপ্লায়ান্স বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
    এদিকেঢাকা শহরে নতুন কোনো শিল্প-কারখানা করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেনঅর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সম্প্রতি এক প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনিবলেছেন, আগামীতে ঢাকা শহরে নতুন কোনো শিল্প-কারখানা করা যাবে না, তবেব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যাবে। যদি শিল্প-কারখানা করতে হয় তবে ঢাকা শহরেরবাইরে করতে হবে। ঢাকায় শিল্প স্থাপনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান আরও স্পষ্টকরেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। সম্প্রতি এক প্রাকবাজেট আলোচনায় তিনি বলেছেন, আগামীতে ঢাকা ও এর আশপাশে শিল্প কারখানা স্থাপনকরলে দ্বিগুণ কর দিতে হবে। ঢাকার বাইরে কারখানা স্থাপনে বিশেষ প্রণোদনাদেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
    তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেইবাংলাদেশের অবস্থান। সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা এবং কোন কোন ক্ষেত্রেক্রেতাদের শুল্কছাড়ের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ইতোমধ্যে বিশ্বে জায়গাকরে নিয়েছে। ’৭০-এর দশকে ঢাকার বিভিন্ন ভবন ভাড়া করে উদ্যোক্তারাগার্মেন্টস চালু করেছেন। সময়ের সাথে এ খাতের ব্যাপক উন্নতি হলেও অনেকউদ্যোক্তার কারখানাটি এখনো এই ব্যস্ত শহরেই রেখে দিয়েছেন। আর এ কারণেবসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মেগাসিটি ঢাকা। ইতোমধ্যে এশিয়ার দ্বিতীয়নিকৃষ্টতম শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে শহরটি। বিভিন্ন মহল থেকে নানা সময়তাগাদা দেয়া হলেও এ বিষয়ে সাড়া দেননি উদ্যোক্তারা। এমনকি এসব কারখানারকাঠামোগত উন্নয়ন, অগ্নিনিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকেরকাক্সিক্ষত মান উন্নয়নের তেমন কিছুই হয়নি। মানহীন ভবন ও কাজের অনুপযোগীপরিবেশের কারণেই ঘটেছে রানা প্লাজার ভবন ধস ও তাজরীনের মতো অগ্নিকা-েরঘটনা। যা ডেকে এনেছে হাজারেরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যু এবং এতে ব্যাহত করেছেআন্তর্জাতিক বাজারে এদেশের সম্ভাবনাময় খাতের পথচলা। গার্মেন্ট কারখানায়কমপ্লায়ান্স (কর্মপরিবেশ) নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রচ- চাপে টনকনড়ে ব্যবসায়ীদের। অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরে তারা ঢাকার বাইরে কারখানাস্থাপনে জমি চাইছে। সরকারও কিছুটা সারা দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এইউদ্যোগ আগে নিলে বর্তমান কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো না বাংলাদেশকে।
    বুয়েটেরএকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণ এইপোশাক কারখানা। যে কারণে বছরে প্রায় ৪৫ কোটি শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আর্থিকক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।
    রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে গড়েউঠেছে পোশাক কারখানা। যে কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে রাজধানীতে মানুষের চাপ।বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঢাকা। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামত, রাজধানী থেকেগার্মেন্ট কারখানা অবিলম্বে সরানো হোক।
    ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ীরাজধানী ঢাকায় অবস্থিত কারখানাগুলোর অধিকাংশই পুরনো। সাভারের রানা প্লাজাধসে ১,১৩৫ জন শ্রমিকের প্রাণহানির পর সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা শহরের ৩৫শ’ কারখানা ভবন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে বেশকিছু কারখানা ভবনত্রুটিপূর্ণ। তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সেরপরিদর্শনে অনেকগুলো কারখানাতেই ত্রুটি পাওয়া গেছে। বুয়েটের অনুসন্ধানী দলদুই তৃতীয়াংশ কারখানাকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
    রাজধানীরএমন কোন এলাকা নেই যেখানে পোশাক কারখানা নেই। রামপুরা, বাসাবো, বনানী, উত্তরা, তেজগাঁও, মিরপুর, শ্যামলী, যাত্রাবাড়ি, গুলশান, বাড্ডা, ইস্কাটন, মৌচাক, মালিবাগ, শংকর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব পোশাক কারখানাঅবস্থিত। কোন কোন উদ্যোক্তা ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাইরে কারখানাস্থাপন করলেও রাজধানীর কারখানাটি এখনো রেখে দিয়েছেন। আবার অনেক উদ্যোক্তাঅর্ডারের চাপ সামলাতে ঢাকার কারখানাগুলোতে সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করান।রাজধানীতে কারখানা থাকার কারণে শ্রমিকের থাকার যেমন সমস্যা হচ্ছে, সাথেসাথে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাও বাড়ছে।
    বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামবলেন, আমরা কেউ ঢাকায় থাকতে চাই না। সরকারি সহায়তা পেলে উদ্যোক্তারাকারখানা সরিয়ে নেবে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সরকার গার্মেন্টস পল্লীস্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেখানে জমিরদাম বেশি ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার থেকে জমি কেনার জন্য আমাদের কম সুদেদীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিলে আমরা এ সুবিধা ভোগ করতে পারবো। কারণ অনেক ছোট ও মাঝারিউদ্যোক্তার পক্ষে সরকার নির্ধারিত দাম দিয়ে জমি কেনা সম্ভব নয়। তিনিজানান, গার্মেন্টস পল্লী বাস্তবায়ন হলে চারশ’ উদ্যোক্তাকে রাজধানী থেকেসরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।সুত্রঃইনকিলাব