গরুর গোশত খেতে হলে পাকিস্তান-আরব দেশে চলে যেতে হবে

    0
    265

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২২মেঃ ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি এক অভিনব পরামর্শ দিয়েছেন সংখ্যালঘুদের খ্যাদ্যাভাস নিয়ে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘গরুর গোশত খেতে হলে পাকিস্তানে বা আরব দেশে চলে যেতে হবে।’

    হিন্দি গণমাধ্যম ‘আজতক’ আয়োজিত ১২তম ‘মন্থন’ নামক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ‘অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন’ নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মোদি সরকার দ্বৈত মনোভাব নিয়ে চলছে। সরকার সংখ্যালঘুদের কথা বলছে, কিন্তু বাজেটে ৫৬১ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রে গরুর গোশত নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৫ লাখ মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গরীব মুসলমানদের জন্য মোদি সরকারের কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেই।’

    আসাদউদ্দিন ওয়াইসি’র এ ধরণের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি গরুর গোশত নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি একটি শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘যদি কেউ গরুর গোশত খেতে না পেয়ে মারা যায়, তাহলে তিনি পাকিস্তানে বা আরব দেশে চলে যান। তার এ দেশে কোনো জায়গা নেই। ভারতে গরুর গোশত পাওয়া যাবে না।’

    ওয়াইসি অবশ্য বলেন, ‘গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী গরুর গোশত খেয়ে থাকেন, তাহলে তাকেও কি পাকিস্তানে পাঠানো হবে?’

    ইন্ডিয়া টুডে’র কন্সাল্টিং এডিটর রাজদীপ সারদেশাই বলেন, ‘গোয়ায় বসবাসকারী খ্রিস্টান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের যেসব মানুষ গরুর গোশত খায়, তাদের কি পাকিস্তানে পাঠানো হবে?

    নরেন্দ্র মোদি বলে থাকেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ কিন্তু সরকারে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব অনেক কম।’

    এসব প্রশ্নে, মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি কী জবাব দিয়েছেন তা জানা যায় নি।

    মুসলিম ভোট ব্যাংক প্রসঙ্গে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘আমি মুসলমানদের নেতা। আমি শুধু এটাই বলতে চাই, মোদি সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করছে না কেন? আমরা চাই সাচ্চার কমিটি এবং রঙ্গনাথ মিশ্র কমিটির সুপারিশ কার্যকরী করা হোক।’

    প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু গরুর গোশত নিষিদ্ধ করা নিয়ে মন্তব্য করেন, ‘আমি নিষিদ্ধ হওয়ার সম্পূর্ণ বিরোধী।’

    বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু বলেন, ‘আমি গরুর গোশত খাওয়ার মধ্যে কোনো ভুল কিছু দেখি না। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে গরুর গোশত খাওয়া হয়, তারা কি সব খারাপ মানুষ?’

    তিনি বলেন, ‘গরুর গোশতে সস্তায় প্রোটিন পাওয়া যায়। ভারতের বহু মানুষ বিশেষ করে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, কেরালাসহ কয়েকটি রাজ্যের অনেক মানুষ গরুর গোশত খেয়ে থাকেন। এসব জায়গায় গোশত বিক্রি নিষিদ্ধ নয়।’

    তিনি বলেন, ‘আমি কয়েকবার গরুর গোশত খেয়েছি। যদি কোনো অনুষ্ঠানে খওয়ার সুযোগ আসে তাহলে আমি আবার খাব। একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের খাওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।’

    বিচারপতি কাটজু’র মতে, গরুর গোশত নিষিদ্ধ করা হলে অনগ্রসর, সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব দেখানোর জন্য বিশ্বে আমাদের উপহাসের পাত্র হতে হবে। মহারাষ্ট্রে গরু জবাই নিষিদ্ধ হওয়ায় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন।

    ভারতের বিজেপি শাসিত গোয়া রাজ্যে ২৬ শতাংশ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। এখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টন গরুর গোশতের চাহিদা রয়েছে। গত মার্চে তারা রাজ্য সরকারের কাছে গরুর গোশতের জোগান বাড়াতে জোরালো আবেদন জানায়। চাপে পড়ে রাজ্যের পশুপালন মন্ত্রণালয় মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক থেকে গরু আমদানি করার নির্দেশ দেয়।ইরনা