খেলাফত কায়েম হলে সাংবাদিকদের জবাই করার ঘোষণা কথিত মাওলানা নোমানীর !

0
1129
খেলাফত কায়েম হলে সাংবাদিকদের জবাই করার ঘোষণা কথিত মাওলানা নোমানীর !
খেলাফত কায়েম হলে সাংবাদিকদের জবাই করার ঘোষণা কথিত মাওলানা নোমানীর !

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী (মাওলানা নোমানী) এক মাহফিলে মুসল্লিদের সহিংসতা করতে উসকানি দিচ্ছেন।এমনকি সাংবাদিকদের জবাই করার অঙ্গিকার ও করেছেন,এই বক্তব্যের অভিযোগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করেছে বলে একটি সুত্রে জানা গেছে।

খেলাফত তথা ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম হলে সব সাংবাদিককে জবাই করার ঘোষণা দিয়েছেন ময়মনসিংহের একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা নোমানী । তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অনেক রক্ত দেয়া হয়ে গেছে জানিয়ে সাম্প্রতিক এক মাহফিলে মুসুল্লিদের বলেন, এখন থেকে রক্ত নেয়া হবে।

মাহফিলটি কবে কোথায় হয়েছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও সেই বক্তার নাম-পরিচয় ঠিকানা পাওয়া গেছে।

সামাজিক মাধ্যমে সেই বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর ময়মনসিংহ থেকে সেই বক্তাকে আটকের তথ্যও পাওয়া গেছে, যদিও এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখন দেননি।

সেই বক্তা মাওলানা নোমানী ময়মনসিংহ নগরীর সানকি পাড়ার ফজলুল হক মারকাযুল উল্লুম মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিক্ষা দেন।

এই মাদ্রাসার নূরানি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, নোমানীর বাড়ি ও জন্ম নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায়। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। ২০১২ সালে তিনি হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন। এর পর থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে আছেন।

মাওলানা নোমানী শহরের সানকিপাড়ায় সরকার রোডের ১১০/২ নম্বর বাড়ি ‘সুখ আলয়’-এ ভাড়া থাকেন বলে জানা গেছে।

কওমি ঘরানার মাওলানা শরীফ উদ্দিন নিউজবাংলার সাংবাদিককে জানান, মাওলানা নোমানী হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন। তবে জেলায় এখন পর্যন্ত সংগঠনটির কোনো কমিটি নেই।

একই কথা বলেছেন মাওলানা নোমানীর মাদ্রাসার মোহতামিম আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংয়ে তো হেফাজতের কোনো কমিটি নেই। তিনি হেফাজতের কোনো নেতা না আমার জানা মতে।’

ধর্মীয় জলসায় মাওলানা নোমানীর বক্তব্য ভাইরাল হলে তার খোঁজে রোববার সানকিপাড়ার সেই বাসায় গেলে তার স্ত্রী বাড়ির ভেতর থেকে বলেন, ‘কারা জানি আসছিল, তাদের সাথে গেছে।’নোমানীর বিষয়ে আরও জানতে প্রশ্ন করলে তার স্ত্রী বলেন, ‘আমি পর্দা করি বাইরের কারো সাথে কথা বলি না।’

ময়মনসিংহে একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নোমানীর সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়েছে।

বিষয়টি কেন স্পষ্ট করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নে সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি না বলে তাহলে আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

পরে এ বিষয়ে জানতে জেলার পুলিশ সুপার আহারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

৩ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে মাওলানা নোমানী যা বলেছেন

ভিডিওতে মাওলানা নোমানী স্পষ্টত তার সমর্থকদের আইন ভঙ্গের প্ররোচনা দিয়েছেন। হত্যা, রক্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহ যদি আমাদেরকে তৌফিক দেয়, আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যদি আল্লাহ তৌফিক দেয় আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত কায়েম করতে পারি, আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, সংবাদ দেখার টাইম পাবি না। সংবাদ দেখার টাইম পাবি না। একটা একটা ধরব আর জবাই করব, জবাই করব ইনশাল্লাহ।’

এ সময় মাওলানা নোমানী হাত দিয়ে জবাই করার বিষয়টি অভিনয় করে দেখান। আর ওয়াজে উপস্থিত শ্রোতারা সবাই উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকেন।

এ সময় অমুসলিমদের বিরুদ্ধেও উসকানি দিতে শোনা যায় কথিত মাওলানা নোমানীকে। তিনি বলেন, ‘অমুসলমান, এখন থেকে আমরাও তইয়ার (তৈরি)। আমাদেরকে ঘাড় ভাঙবি, আমরাও ঘাড় ভাঙব। কারা কারা তইয়ার?’

তিনি বলেন,‘যতদিন বাঁচব, বাঘের মতো বাঁচব। আর যদি মরতে হয় ইনশাল্লাহ দুই চার দশটাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে এরপর মরব ইনশাল্লাহ। সবাই রাজি আছি তো ইনশাআল্লাহ।’

মাহফিলের শ্রোতারা এই পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকলে মাওলানা নোমানী বলেন, ‘তবে রক্ত দিতে হবে, রক্ত, রক্ত। আমার বয়ানই আজকে রক্ত নিয়ে। ও মুসলমান রক্ত দিতে রাজি আছেন ?’

তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘সবাই সবাই। বুঝেন, চিন্তা করে বলেন। ভয় পাচ্ছেন না তো, নাকি? ভয় পাচ্ছেন না তো? রক্ত দেবেন ইনশাল্লাহ ? রক্ত দেবেন তো ইনশাল্লাহ ? রক্ত দিয়েছে কে ? তাহলে মুসলমান, আজকে থেকে ডাইলগ পরিবর্তন। ডাইলগ চেঞ্জ।

‘এখন থেকে আর রক্ত দেব না, অনেক রক্ত দিয়েছি আমরা। রক্ত দিতে দিতে এ জীবন শেষ করে দিল। এখন থেকে সাফ সাফ কথা। এখন থেকে আর রক্ত দেব না। কারা কারা তইয়ার ? রক্ত নেবো, রক্ত নেব, রক্ত নেব ইনশাল্লাহ।’