ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে নাঃবিজয়ের মাসেই রায় কার্যকরের প্রত্যাশা

    0
    211

    আমারসিলেট24ডটকম,নভেম্বরঃ ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী বলেছেন, আমার বাবার যদি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে আদর্শিক কারণে হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব কি করবো। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওয়ামি বলেন, ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে হাসান ইকবাল। আজ বুধবার সকাল ১০টার কিছুক্ষণ আগে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর ভেতরে ঢুকে পৌনে ১ ঘণ্টা কামারুজ্জামানের সাথে সময় কাটান তারা।
    সিনিয়র কারাধ্যক্ষ ফরমান আলী বলেন, নিয়মিত সাক্ষাতের অংশ হিসাবে পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। তারা ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে ১১টা ৮ পর্যন্ত ভেতরে ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন স্ত্রী নুরুন্নাহার, চার ছেলে হাসান ইকবাল, আহমেদ হাসান, ইকরাম হাসান, হাসান ঈমাম, মেয়ে আফিয়া নূর, ভাই নাজিরুজ্জামান ও আবদুল্লাহ আল মাহাদী, বোন মোহসীনা বেগম ও ভাগ্নে আবদুল আলিম।
    বাবা সম্পর্কে ইকবাল হাসান ওয়ামি বলেন, বাবা কামারুজ্জামানের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের এটি নিয়মিত সাক্ষাতের অংশ। জেলকর্তৃপক্ষ সাক্ষাতের জন্য তাদের ডাকেনি। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করবেন বলে জানান তিনি। তিনি স্বাভাবিক আছেন। সুস্থ আছেন। সব কাজ স্বাভাবিকভাবেই করছেন। তিনি বিচলিত নন। আমাদেরও বিচলিত না হতে বলেছেন, বলেছেন চিন্তা করো না, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো। তিনি বলেন, বাবা আমাদের এবং দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধরতে বলেছেন। তিনি আমাদের বলেছেন ‘যদি ফাঁসি দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে এটি তার বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতন হবে।
    প্রসঙ্গত গত সোমবার কামারুজ্জামানের আপিলের রায়ে মৃতুদণ্ড বহাল রাখার পর মঙ্গলবার তাকে কাশিমপুর থেকে ঢাকা ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এখন আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেটি হাতে পেলে নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে ট্রাইব্যুনাল। এরপর তা কার্যকর করবে সরকার। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে কারাবিধিও (জেল কোড) অনুসরণ করতে পারে।
    কারাবিধি অনুযায়ী প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ পাবেন। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর জেল সুপার তা বন্দিকে জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে তার মত চাইবেন। ৭ দিনের মধ্যে তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
    ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম রায়ের দিন জানান, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর তা জেলা প্রশাসকের কাছে যাবে। কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করবে। এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর তা ট্রাইব্যুনালে গেলে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করা হবে। এর পর সরকার তা কার্যকর করবে। তবে বিজয়ের মাসেই রায় কার্যকরের প্রত্যাশা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
    ৪৩ বছর আগের আলবদরের সংগঠক কামারুজ্জামান বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি জামায়াতের দ্বিতীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চূড়ান্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটি আপিল বিভাগের তৃতীয় রায়। এর আগে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ওই রায় কার্যকর হয়। এর পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গঠন করা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষীসাব্যস্ত করে শাস্তি দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ওই ৫টি অভিযোগে খালাস চেয়ে আপিল করেছিলেন কামারুজ্জামান। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানি শেষে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছিল।