ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় মহাসেন

    0
    225
    ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় মহাসেন
    ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় মহাসেন

    চট্টগ্রাম, ১৬ মে : বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় মহাসেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকা এ ঘূর্ণিঝড় মেঘনা মোহনা হয়ে নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম জানান এখন মহাসেন মেঘনা মোহনা হয়ে নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করছে। ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আগামী ৩ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে এ ঝড় বাংলাদেশ উপকূল পার হয়ে মিয়ানমারের দিকে সরে যাবে বলে আবহাওয়াবিদদের ধারণা। তবে এখনও চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। আর মংলা সমুদ্র বন্দরকে এখনও ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
    আবহাওয়াবিদ ছানাউল হক মণ্ডল জানান, এ ঘূর্ণিঝড়ের ব্যস প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার থেকে ৯০ কিলোমটার পর্যন্ত বাড়ছে। তীব্র ঝড়ো হাওয়া ও সাগর উত্তাল থকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলছে। ঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
    ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
    ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘন্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে চট্রগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধ্বসের আশংকাও রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
    আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, মহাসেন উপকূল পার হয়ে গেলে বিপদ সংকেত নামানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। শাহ আলম জানান, সকাল থেকে প্রথম ছয় ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি ৫০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিল। বেলা ১২টার পর এগোনোর গতিও কমে ঘণ্টায় ২০-২৫ মিলিমিটারে নেমে এসেছে। স্থলভাগ পার হওয়ার সময় এখন এগোনোর গতি স্বল্প। পটুয়াখালী দিয়ে অতিক্রমের সময় বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি ঝরায় মাঝারি মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাত ৯টার মধ্যে মহাসেন বাংলাদেশ উপকূল পুরোপুরি পার হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশের উপকূলসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সকাল ৯টার দিকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে মহাসেনের বর্ধিতাংশ।
    ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বের জেলাগুলোতে প্রবল দমকা বাতাসের বৃষ্টি চলছে সকাল থেকে। পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় বহু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভোলা ও বরগুনায় ঝড়ে দুইজন গাছচাপাসহ অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকা ১৫টি জেলার মধ্যে নয়টির অধিকাংশ এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই।