কোন্দলে জর্জরিত শ্রীমঙ্গল বিএনপি

    0
    268
    হৃদয় দাশ শুভ,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আওয়ামীলীগের দুর্গ শ্রীমঙ্গল কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে মোটামুটি ভালো ফল করেছিলো বিএনপি সাংগঠনিক অবস্থাও তখন ভালো ছিলো বিএনপির৷ কিন্তু এখন শ্রীমঙ্গলের রাজনীতি আওয়ামী লীগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলার অভিযোগও আছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।
    শ্রীমঙ্গলে যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্র হলো চৌমুহনা চত্বর। গত পাঁচ বছরে এই চৌমুহনায় একটি মিছিলও করতে পারেনি বিএনপি। তাদের কর্মসূচি দলীয় কার্যালয় এ নেতাদের বাসায় ঘরোয়া অনুষ্ঠানের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।
    উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, এখানে বিএনপি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি, অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক। বিভক্তির কারণে কোনো কর্মসূচি সফল হয় না। দলের কোনো কোনো নেতা আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। স্বাভাবিকভাবেই দলীয় কর্মসূচিতে তাঁদের আগ্রহ কম।
    ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও শ্রীমঙ্গলে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির অবস্থান বেশ ভালোই  ছিল। কিন্তু এ অবস্থান লন্ডভন্ড হয়ে যায় ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে জেলাজুড়ে তাণ্ডব চালানোর পর। ওই সময়  বিএনপির কর্মীরা তাণ্ডবে অংশ নেন বলে অভিযোগ আছে। তখনই শুরু হয় পুলিশি ধরপাকড়। নেতা-কর্মীদের ঘাড়ে চাপে নাশকতার মামলার বোঝা। ফলে অনেক নেতা-কর্মী চলে যান আত্নগোপনে ৷ অনেকে বলছেন, আর এ সুযোগেই মাঠ দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ। সেই দখল এখন পর্যন্ত বহাল আছে।
    বিভক্ত মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির একপক্ষে সভাপতি এম নাসের রহমানের সঙ্গে আছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকশি মিসবাউর রহমান,জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এ মুহিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক জিএম মুক্তাদির রাজু প্রমুখ নেতারা।
    অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঙ্গে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ খালেদা রব্বানী,স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী প্রমুখ নেতারা ৷
    এদিকে জেলার এ কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপিতেও,গত ৩০ আগস্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকের স্বাক্ষরে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়৷কমিটি গঠনের পর থেকেই ভিতরে ভিতরে কোন্দল আরও প্রকট আকার ধারন করে,জেলার সাধারন সম্পাদক অনুসারীদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগে একপক্ষ কমিটি প্রত্যাখান করেন এবং সাধারন সম্পাদকের স্বাক্ষরবিহীন কমিটিকে অগঠনতান্ত্রিক বলে আখ্যা দেন ৷
    বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন, দুই পক্ষের কোন্দল ছাড়াও প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত, অতিরিক্ত জামায়াতপ্রীতি, জেলা সভাপতির একচ্ছত্র খবরদারি এবং ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে রাখার কারণেই কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
    শ্রীমঙ্গলে দলটির এহেন অবস্থার ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোছাব্বির আলী মুন্না আক্ষেপ করে  বলেন, “আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন করে মামলা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলার কারণে অনেক নেতার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি”। তিনি আরও বলেন “এ আসনে বিএনপির মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগের অপরাজিত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের সাথে,এ আসনে যেমন আওয়ামীলীগের আব্দুস শহীদের কোন বিকল্প নেই তেমনি বিএনপির জন্যও আলহাজ্ব হাজী মুজিবুর রহমানের কোন বিকল্প নেই, তাই উনাকে বাদ দিয়ে কোন কমিটি তৃনমুল বিএনপি মানবে না “।
    “কোন্দলে জর্জরিত শ্রীমঙ্গল বিএনপির আঁতাত” এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান লাল হাজী  বলেন, “আমরা কারও সঙ্গে গোপন আতাঁত করি না। দলের ভেতরের একটি অংশ এ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দলের ভেতরে কোন্দল থাকতেই পারে, সব বড় দলেই কোন্দল আছে।কমিটি জেলা থেকে দেয়া হয়েছে,তাদের এখতিয়ার আছে তাই কমিটি দিয়েছে৷
    অপরপক্ষের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন,তারা সুবিধাবাদী এবং তারা দলের কোন কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলো না৷গত দুই বছরে তাদেরকে কোন আন্দোলন সংগ্রামে পাওয়া যায় নি,যারা অভিযোগ করছেন তাদের বিগত দিনের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করলেই বুঝতে পারবেন অতীতে তাদের দলে কি অবস্থান ছিল”৷
    অপরদিকে পদবঞ্চিত কয়েকজন নেতা-কর্মী অভিযোগ করে বলেন, “ক্ষমতার বাইরে থেকেও কয়েকজন নেতা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।”
    এদিকে খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের গত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ও  বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মুজিবুর রহমান বলেন,বিএনপিতে কোন কোন্দল নেই,আওয়ামীলীগের দালালরা দলে সমস্যা করছে৷তারেক সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে উনি এক-দুইদিনের ভিতর নতুন কমিটি করে দেবেন,আমাদের দলের মহাসচিব ওই কমিটির নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন নাসের রহমানের একক ক্ষমতাবলে কমিটি দেয়ার কোন অধিকার-ই নাই ৷”
    শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সাধারন সম্পাদক ইয়াকুব আলীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মুঠোফোনের কল রিসিভ করেননি৷
    উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক তুহিন চৌধুরীকে দলীয় কোন্দলের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি  বলেন, বড় দল তাই ছোট-খাটো মতপার্থক্য থাকতেই পারে।আশা করি অচিরেই সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে ৷