কোকোর পাচারের সাড়ে ৭ কোটি টাকা ফেরত : মির্জা ফখরুল বলেন ‘নাটক’

    0
    268

    আমার সিলেট ডেস্ক,২৮ আগস্ট : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিদেশে পাচার করা অর্থের আরো প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা দেশে ফেরত এসেছে। এর মাধ্যমে তৃতীয় দফায় ফেরত এলো কোকোর পাচার করা টাকা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুদক আয়োজিত হোটেল রূপসী বাংলায় ‘পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার বিষয়ক’ এক অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামানের কাছে একটি প্রতীকী চেক হস্তান্তর করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

    জানা যায়, সিঙ্গাপুর ওভারসিস ব্যাংক থেকে গত ১৩ আগস্ট ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৭ মার্কিন ডলার বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক রমনা করপোরেট শাখায় জমা হয়। পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট এ অর্থ দুদকের ‘স্টোলেন রিকভারি অ্যাসেট’ হিসাবে জমা হয়। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ টাকা।

    প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আইনি জটিলতা কাটিয়ে কোকোর পাচার করা টাকা দেশে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিদেশে আরো যেসব টাকা পাচার হয়েছে তা ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গতকাল এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৃতীয় দফায় কোকোর টাকা আসার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানায় দুদক। দুদক চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিশেষ অতিথি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদক কমিশনার শাহাবউদ্দিন চুপ্পু প্রমুখ।

    গত বছরের নভেম্বরে প্রথমে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুর ডলার ফিরিয়ে আনে দুদক। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় দুদকের ‘স্টোলেন অ্যাসেট রিকোভারি’ নামের একাউন্টে এ টাকা জমা হয়। এরপর ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফায় লভ্যাংশের ১৫ লাখ পায় দুদক। চলতি মাসের ১৮ তারিখ তৃতীয় দফায় জমা হয় ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

    মুদ্রাপাচার মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে কোকো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি বিদেশী কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে নেয়া ঘুষ ও চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল এজেন্টদের কাছ থেকে আদায় করা কমিশন মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেন।

    বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
    বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

    বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ

    একের পর এক অপকীর্তি, পদ্মা সেতুসহ সরকারের নানা দুর্নীতি ঢাকতে এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গড়ে উঠা চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে সরকার দুদকের মাধ্যমে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে কথিত অথ পাচার “নাটক” করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

    ফখরুল বলেন, জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে হেয় করতে সরকার তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তীহীন মামলা দিচ্ছে। আরাফাত রহমান কোকোর অনুপস্থিতিতে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সে মামলায় বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার কথা বলে ক্রিকেটের অ্যাওয়ার্ড প্রদানের মতো সরকার দুদককে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে চেক হস্তান্তরের ‘নাটক’ করে । তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী সকলের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সকলে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত।

    ফখরুল বলেন সরকারের অপকীর্তি, দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন এখন দানা বেঁধেছে। নির্দলীয় সরকারের দাবি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট চক্রান্তের নানা কৌশল করে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে অপপ্রচার ও অপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে।তিনি বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছি। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছে।

    মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির জন্য কানাডায় মামলা চলছে। এ প্রকল্পে কে কতো পারসেন্ট ঘুষ পাবেন তা পত্র-পত্রিকায় খবর এসেছে। এর জন্য যে মন্ত্রীকে দায়ী করা হয়েছে তাকে প্রধানমন্ত্রী দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজেদের দুর্নীতি, অপকর্ম ঢাকতে, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট এবং নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতে সরকার এ ধরনের মামলা সামনে এনেছে।