কুলাউড়া-শাহ্বাজপুর রেল লাইনে চলবে আবার ‘লাতুর ট্রেন’

    0
    287

    আজ উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬জুন,এ.বি.এম নূরুল হকঃ হাকালুকি হাওর, চা, রাবার ও আগর বাগান অধ্যুষিত এ অ লের রেলপথ যাত্রীদের দূর্ভোগ অবশেষে লাঘব হচ্ছে। আবারো চালু হচ্ছে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘লাতুর ট্রেন’। আজ (৭জুন) রোবাবর এ রেল লাইটি উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘদিন থেকে ট্রেনটির উপকারভোগীদের দাবী বার বার উপেক্ষিত হলেও এবার একনেকের বৈঠকে এ প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ায় রেল পথটি চালুর বিষয়ে আশার স ার হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

    এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা কুলাউড়া – শাহ্Ÿাজপুর রেল লাইনটি চালুর লক্ষ্যে গত (২৬মে ) মঙ্গলবার একনেকের বেঠকে ৬৭৮কোটি ৫১ লাখ টাকা অনুমোদনের খবরে মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলউড়া, বড়লেখা ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রায় ১০ লাখ মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।

    ওই দিন বিকেলে এমন খবর এলাকায় পৌঁছালে সন্ধ্যায় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও হুইপ আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন কে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। সূত্র জানায়, কুলাউড়া, রেলওয়ে জংশন ষ্টেশন থেকে শাহ্Ÿাজপুর পর্যন্ত ৪২ দশমিক ৩৯ কিলোমটিার দীর্ঘ লাইনে চলাচলকারী ট্রেনের নাম  ছিলো ‘লাতুর ট্রেন’। এক সময় এ রেল লাইন দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ পর্যন্ত মালামাল বহন করা হতো।

    এ রেল লাইনে কুলাউড়া, জুড়ী, দক্ষিনভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহ্Ÿাজপুর স্টেশন ছিলো। এ স্টেশনগুলোকে কেন্দ্র করে সরব ছিলো ব্যবসা বাণিজ্য। ওই সময় ১৮৯৬সালের ৪ডিসেম্বর এ লাইনটিকে রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সে সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্ত:দেশীয় ট্রাফিক চলাচলে এ সেকশনটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে ১৯৫৮-১৯৬০ সালের পূর্বে ব্যবহৃত  (সেকেন্ড হ্যান্ড) ৬০ পাউন্ড রেল, কাঠের ও স্টিলের স্লিপার দিয়ে ওই সেকশনের রেল লাইন পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু সময়ের আবর্তে ব্যবহার অযোগ্য, স্লিাপারের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপর্যাপ্ত ব্যালাস্টের কারণে সেকশনটি ইঞ্জিন ও রেলগাড়ির ভার বহণে অক্ষম হয়ে পড়ে। সে সময় ট্রেনের গতিবেগ ঘন্টায় ১৫ কিঃমিটার নামিয়ে আনা হয়।

    তারপরও ঘন ঘন ট্রেন দূর্ঘটনা, কাঠের স্লিপার, সেতুসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংস্কারের অভাব, লোকসান এবং ১৮৯৬ সালে নির্মিত স্টেশন ভবনগুলো ও ঝুঁকিপূর্ন হওয়াসহ নানা কারণ দেখিয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই তৎকালীন সরকার লাতুর ট্রেনটি বন্ধ করে দেন। ফলে, স্থানীয় ২টি জেলার ৪টি উপজেলার প্রায় ১০লাখ উপকারভোগী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ পড়েন চরম বিপাকে। দীর্ঘদিন থেকে অরক্ষিত থাকায় বেহাত হয়ে যায় ওই রেল লাইনের ভূমি। রেল পাত, স্লিপার, নাট-বল্টু, পাথরসহ রেললাইনের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এরপর রেল লাইনটির সংস্কারসহ ট্রেন চলাচল চালুর দাবীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেন।

    ২০০৯ সালের স্থানীয়দের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে টনক নড়ে, সংশ্লিষ্টদের। তখন রোডটি চালূর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রেলওয়ে বিভাগে আন্তরিক হন এবং তা চালুর সম্ভাব্যতা নিয়ে যাচাই বাচাইয়ের জন্য উদ্যেগী হন। ভারতীয় পরামর্শক দল ‘ইরকনের’ সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে পজেটিভ পরামর্শ পাওয়ায় ওই রেল লাইনটি চালুর সম্ভাবনা দেখা দেয়। স্থানীয় ২জন সাংসদ রেল লাইনটি চালুর বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা করেন। ওই সময় যোগাযোগ মন্ত্রীও তাদেরকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তারপরও বন্ধ থাকে এর কার্যক্রম। অবশেষে ২০১৩সালের ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা সফরে এলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে হুইপ আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন রেললাইনটি পুনরায় চালুর দাবী জানান। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে রেললাইন চালুর ঘোষনাও দেন। একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই রেল লাইনটি চালুর জন্য ৬৭৮ কোটি  ৫১লাখ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৭৫পাউন্ড রেল দিয়ে কুলাউড়া -শাহ্Ÿাজপুর সেকশনের ৪২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার রেল লাইন পূনর্বাসন। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার রুট লাইন এবং ৩দশমিক ৩৫কিলোমিটার লুপ লাইন রয়েছে। ৬টি স্টেশন ৯টি ভবণ পূনঃনির্মান, ২০টি সেতু মেরামত অথবা পুনঃনির্মান, ১৩টি সেতু নির্মাণ, রেল ক্রসিং নির্মাণ, প্রয়োজনীয় ভবণ নির্মাণ, ৪টি বি ক্লাস স্টেশন নন ইন্টারলকড কালার লাইট সিগন্যাল সিস্টেম এবং আধুনিক টেলিযোগ ব্যবস্থা স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য আনুসাঙ্গিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশগুলোও আধুনিকরণ করা হবে। যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের রেলপথ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এসকাপ কর্তৃক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের উদ্যেগ নেয়া হয়েছিল ।

    বাংলাদেশ সরকারও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ও আ লিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রয়োজনীয় উদ্যেগও নিয়েছিলো সরকার। ২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর সরকার ইন্টার গভর্নমেন্টাল এপ্রিমেন্ট অন দ্য ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক নীতিগতভাবে অনুমোদন করে তাতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের ৩টি রুট প্রস্তাব করা হয়েছে।

    এর মধ্যে কুলাউড়া -শাহ্বাজপুর রেললাইনটিও রয়েছে। জাতীয় সংসদ সরকার দলীয় হুইপ ও বড়লেখা, জুড়ী আসনের এমপি শাহাব উদ্দিন তার প্রতিক্রিয়ায় কুলাউড়া -শাহ্Ÿাজপুর রেললাইন চালুর লক্ষ্যে একনেকের বৈঠকে অনুমোদন হওয়ায় স্থানীয় জনগনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চা, রাবার ও আগর শিল্পের এ এলাকাটি ব্যবসা বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে আর সরকার পাবে বিপুল পরিমান রাজস্ব।