“কি করি বলে” বান্ধবীকে উপজেলা নির্বাহী কর্তার হুমকি

    0
    248

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: অভিযোগকারী ওই নারী জানান,গত ৮জুন আমার উপর হামলা করা হয়েছে। আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি আছি। তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সময় চেয়েছিলাম। আগামী ১৬ জুন তারিখ সময় দিয়েছেন। আমাকে ০১৮১২৪৮৭৫৮১ হত্যার হুমকি দিয়ে আগামী ১৬জুন সাক্ষ দিতে না আসার জন্য বলে,এই তুই আসবিনা,কি করবি তুই,একবার তোর শিক্ষা হয় নাই,১৬তারিখে আয় তুই দেখনা কি হয়। এমন হুমকিতে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জনানোর পরও উল্টো ওই নারীকে তদন্ত কর্মকর্তা অশালীন কথা বলায় তার কাছে ন্যায় বিচার না পাওয়ার সন্দেহে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করতে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ ও এমনকি তাকে না আসার হুমকির অডিও রেকর্ড মেইলে পাঠিয়েছেন বলে জানান ওই নারী। ওই নারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় তিনি রয়েছেন চরম দুর্বিসন্ধেহে।

    এ নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তি থেকে শুরু করে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিব্রতকর অবস্থায় সুনামগঞ্জে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এমরান হোসেন ঘটনাটির তদন্ত করছেন। তিনি জানান,তদন্ত কাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগকারী আসেননি। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে তার বান্ধবীর আনা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা গত রোববার (০৯ জুন) দুপক্ষকে ডাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসেননি অভিযোগকারী ওই নারী। তিনি মৌখিকভাবে সময় চেয়েছেন। আসিফ ইমতিয়াজ এসে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। অভিযোগ কারী প্রথম তারিখ না আসায় আগামী ১৬জুন সাক্ষ গ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছে।

    তবে ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজ কি সাক্ষ্য দিয়েছেন তা জানা যায়নি।

    এদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজ বান্ধবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক অতঃপর অন্তঃসত্ত্বার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলাকায় তোলপার শুরু হয়। তাহিরপুরসহ জেলার সবকটি উপজেলায় ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজকে নিয়ে সমালোচনা থেমে নেই। বিশেষ করে জেলা প্রশাসন,উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষও এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ। তাই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে কার্যালয়ে না এসে অধিকাংশ সময়ে বাসায় বসে অফিস করছেন ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজ এমনটিই জানা গেছে। এছাড়াও তার ব্যবহৃত সরকারি ফোন নাম্বারটিতে কল দিলেও কেউ পাচ্ছেন না তাকে। অনেক সময় সরকারি নম্বর বন্ধ থাকে। ফলে উপজেলাবাসী তার কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগীতা পাচ্ছেন না। উপজেলাবাসীসহ জনসাধারণ এমন অফিসারকে আর তাহিরপুর দেখতে চান না।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান,বান্ধবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ও অন্তঃসত্ত্বার ঘটনায় এখন উপজেলার আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আমরাও আছি খুবেই লজ্জার মাঝে এই বিয়ষটি নিয়ে। বদলী হলে আমরাও এই দুর্নাম থেকে বাচঁব।

    তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন,বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থার মাঝে আছি। ইউএনওর বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারছিনা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজের মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিপ করেননি।

    জানা যায়,তাহিরপুর উপজেলায় নব-যোগদানকারী ইউএনও তার পূর্বের কর্মস্থল চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় পূর্বে বিয়ে করা স্ত্রীর সাথে ডির্ভোস হয়। কিন্তু শ্বশুর পেশাদার উকিল হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ বিলম্বিত হচ্ছিল চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এডিসি (এলএ) আসিফ ইমতিয়াজের। কিন্তু পরিচিত হওয়া নতুন বান্ধবীর সাথে সংসার করার তর সইছিল না তার। শেষ পর্যন্ত পৃথক বাসা নিয়ে বিয়ে না করেই গোপনে অবিলাস করেন। অসাবধানতাবশত পেটে চলে আসে সন্তান। সব কিছুই গোপন রেখে আসিফ চাইছিলেন অনাগত সন্তানকে গর্ভপাত ঘটাতে। কিন্তু রাজি হলেন না বান্ধবী। এ নিয়ে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দেন সেই বান্ধবী।

    গত ০৩এপ্রিল লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে বিচার চান ওই নারী। এরপর একজন এডিসিকে বিষয়টির তদন্তভার দেয়া হয়। এডিসিকে এ ঘটনা অস্বীকার করেন আসিফ ইমতিয়াজ। পরে চট্টগ্রাম প্রশাসন তাকে বদলির জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করে। পরে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাহিরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাকে বদলি করা হয়। বদলির পরই তার জীবনের কলঙ্কিত ঘটনাটি আরো ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। সর্বশেষ এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।