কিশোরগঞ্জের ৯ যুবক লিবিয়ায় খুন এলাকায় আহাজারি

    0
    235

    “দালালের লোভনীয় অফারে এই রকম শতাধিক যুবকের প্রান যাচ্ছে লিবিয়ায় নিঃস্ব হচ্ছে পরিবার”

    সংসারে খানিকটা স্বচ্ছলতা ফেরাতে আদরের সন্তানকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন বাবা-মা। দালালের খপ্পরে পড়ে জীবন বাজি রেখে দেশ ছেড়েছিলেন সন্তান। ইচ্ছে ছিল টাকা উপার্জন করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু কে জানতো জীবনে গতি আনতে গিয়ে বিদেশের মাটিতে এভাবে লাশ হতে হবে। প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঘরে ঘরে যেন কান্নার রোল পড়ে গেছে। গত মঙ্গলবার (২৬ মে) লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত হন ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন। তাদের মধ্যে ভৈরবের আটজন রয়েছেন।

    তারা হলেন, উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মেহের আলীর ছেলে মো. আকাশ, মোটুপী গ্রামের খালপাড় এলাকার আব্দুল আলীর ছেলে সোহাগ মিয়া, কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে মাহাবুব, শ্রীনগর ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের বাচ্চু মিলিটারির ছেলে সাকিব, শুম্ভপুর গ্রামের জানু মিয়া, মামুন মিয়া, সাদ্দাম মিয়া ও মোহাম্মদ আলী।

    লিবিয়ায় নিহত এসব প্রবাসীদের বাড়িতে কান্না থামছে না। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। শেষবারের মতো প্রিয়জনের মুখটাও দেখতে পারল না পরিবারের লোকজন। নিহত আকাশের বড় ভাই মোবারক জানান, দেড় বছর আগে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান আকাশ। সেখানে কাজ করার সময়ে ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের দালাল তানজীরের সঙ্গে লিবিয়ার বেনজি থেকে ত্রিপলি হয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য কথাবার্তা হয়। ইতালিতে পৌঁছার পর তিন-চার লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে তার সঙ্গে চুক্তি হয়। ওই দালালের মাধ্যমে আরও অনেকের সঙ্গে আকাশের ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার খবর তারা জানতে পারেন। এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

    হঠাৎ বুধবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় মোবারকের মোবাইলে ইমুতে একটি ভয়েস ম্যাসেজ আসে। সেখানে লেখা ‘আমাকে বাঁচাও, আমাকে মেরে ফেলবে’। পাচারকারীরা আকাশের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। যদি না দেয় তাহলে তাদের মেরে ফেলবে। এরপর থেকে আর তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। তার মৃত্যুর খবরে স্বজনদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। নিহত সোহাগের বাবা আব্দুল আলী জানান, এক বছর আগে লিবিয়ায় যান তার ছেলে। সেখানে কয়েকমাস থাকার পর ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের পূর্বপাড়ার সোনা মিয়ার ছেলে তানজীরের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকায় চুক্তি হয়। এরপর থেকে তার ছেলের আর খোঁজ মেলেনি। পরে অন্যদের মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান।

    ভৈরব থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) তদন্ত বাহালুল আলম খান বলেন, লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ভৈরবের আটজনের নাম জানা গেছে। আমরা তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    প্রসঙ্গত, লিবিয়ার মিজদা শহরে একটি মানবপাচারকারীর চক্র বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে ইতালি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে তাদের অপহরণ করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। মঙ্গলবার রাতে খুন হন এক মানবপাচারকারী। এরপর তার সহযোগীরা জিম্মি অভিবাসীদের ওপর ক্যাম্পে নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই ২৬ জন বাংলাদেশিসহ মোট ৩০ জন মারা যান। এ ঘটনায় আরও ১১ জন বাংলাদেশি আহত হন। তারা বর্তমানে দেশটির জিনতান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।