কিছু একটা করব হাওরবাসীর জন্যঃরাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ

    0
    241

    “সুনামগঞ্জের মানুষের কান্না শুরু হলে আমার এলাকায় ও কান্নার প্রস্তুতি নিতে হয়,আপনাদের সুনামগঞ্জ আর আমার কিশোরগঞ্জ এর মধ্যে  মিল আছেঃরাষ্ট্রপতি এডভোকেট আলহাজ্জ মোঃ আব্দুল হামিদ”

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৮এপ্রিল,জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জের মানুষের কান্না শুরু হলে আমার এলাকায় কান্নার প্রস্তুতি নিতে হয়। কারন এখান কার সব হাওর ডুবে যাওয়া পর আমার এলাকায় কিশোরগঞ্জে সব পানি গিয়ে গড়িয়ে পরে। আপনাদের সুনামগঞ্জ আর আমার কিশোরগঞ্জের ইটনা,মিটামইন,অষ্টগ্রাম, হাওর এলাকার সাথে মিল আছে। আমি আপনাদের কাছে সু-দিনে আসতে চেয়ে ছিলাম। দূ-র্দিনে নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ওই সময়ে সুনামগঞ্জ এসেছিলাম। দেশ স্বাধীন করেই ঘরে ফিরেছি। সেই স্মৃতিময় স্থানে বারবার আসার চেষ্ঠা করেও তা সম্ভব হয়নি।

    তিনি বলেন,এবার কারো দাওয়াতে নয়,নিজের তাগিদে  দুর্যোগকালীন সময়েই সেই দিনের মত দূ-সময়েই আসলাম। সেই দিনও দেশ স্বাধীন করেছি পিচপা হয় নি। এবারও পিচপা হবো না কিছু একটা করব হাওরবাসীর জন্য। আবারও আসব তবে এমন দূর্যোগের সময় নয় আনন্দের দিনে আসতে চাই। আমার ৭৪বছরের জীবনে চৈত্রমাসে ভয়াবহ অকাল বন্যা দেখিনি। ইনশাহআল্লাহ সকলের সক্রিয় সহযোগিতা নিয়ে এই মহাদুর্যোগেরও মোকাবেলা করবো। আমি প্রধান মন্ত্রীকে বলেছি শহরের পাশা পাশি হাওর এলাকায় শিল্প-কলকারখানা করার জন্য যাতে করে হাওরবাসী কিছু করে খেতে পারে। এই দূর্যোগে হাওরবাসীর জন্য কিছু করার জন্য বলব, না হলে হাওরবাসী শহর মুখি হবে।

    সুনামগঞ্জ আর কিশোরগঞ্জ এক ও অভিন্ন হাওরের জনপদ। এখানে কান্না শুরু হলে কিশোরগঞ্জ গিয়ে শেষ হয়। কারণ উজান থেকে হানা দেয়া পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জ গড়িয়ে কিশোরগঞ্জ যায়। এতে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। এখন হাওর ও বোরো ফসল বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগে নদী খনন করতেই হবে। নদী খনন ব্যতিত হাওরকে বাঁচানোর কোন বিকল্প নেই। সোমবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন আয়োজিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ,মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ।

    সভা পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম।

    স্থানীয় সুধীজনদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন,সুনামগঞ্জের জনপ্রতিনিধি,সরকারি কর্মকর্তাসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন দুর্নীতির বিপক্ষে সেখানে হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি কিভাবে হয় আমি তা ভেবে পাচ্ছি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মাটি কাছনে ছবি তুলে দিলেই দায়িত্ব শেষ মনে করলে হবে না। এতে নিজের সু-খ্যাতি আর প্রচার দিলেন। আর হাওরবাসীর যা হবার হউক তা চলবে না। আপনারা সবাই দূর্নীতির কথা বললেন। ফেইসবুক,মিটিং,মিছিলে দুর্নীতি বিরোধী না হয়ে বাস্তবে কথায় ও কাজে নিজেদেরকে দুর্নীতি বিরোধী প্রমাণ করতে হবে। শিশু না কাদঁলে মা ও দুধ দেয় না তেমনি দাবী আদায়ের জন্য সময় মত সঠিক ভাবে কাঁদতে ও বলতে হবে।

    সংসদ সদস্যদের উদ্যোশে কওে বলেন,আগামী ২মে হাওরাঞ্চলের দুর্যোগ নিয়ে স্বশরীলে সংসদে কথা বলতে হবে। না কাদঁলে দাবী আদায় হয় না।

    অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি,মুহিবুর রহমান মানিক এমপি,মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি,ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি,অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এমপি,পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি,রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি,সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোছাঃ নাজমানারা খানম,ডিআইজি কামরুল আহসান,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল,জেলা পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান,অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক,সাবেক অধ্যক্ষ প্রপেসর পরির্মল কান্তি দে,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম,সাবেক এমপি ও পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ,দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী,মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আলী আমজাদ,মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান,সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু,দৈনিক সুনামকন্ঠ সম্পাদক বিজন সেন রায়,দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর পত্রিকার সম্পাদক পংকজ দে ও মানবাধিকারকর্মী সাংবাদিক আল-হেলাল প্রমুখ।

    অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সচিব সম্পদ বড়ুয়া,প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীনসহ গণভবনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জের মিঠামইন এলাকা থেকে লোফ্লাইং ফ্লাইটে তিনি অকালে তলিয়ে যাওয়া হাওর পরিদর্শন করে নেত্রকোণা আসেন। সেখান থেকে তিনি আবারও লোফ্লাইং করে সুনামগঞ্জের পশ্চিমা লের তলিয়ে যাওয়া হাওর দেখে দুপুর আড়াইটায় সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইন হেলিপ্যাডে অবস্থান করেন। সেখান থেকে সরাসরি সার্কিট হাউসে চলে আসেন রাষ্ট্রপতি। বিকেল ৬টায় সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য যাদুঘর পরিদর্শন করেন। এর সময় তিনি ৫ম রত্ন মরমী কবির প্রতিকৃতিসহ সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য যাদুঘর পরিদর্শন কালে যাদুঘরে সংরক্ষিত মরমী কবি রাধারমন,হাছন রাজা,বাউল কামাল পাশা,দুর্বিণ শাহ ও শাহ আব্দুল করিমের ছবি ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। পরে রাত সাড়ে ৮টায় শিল্পকলা একাডেমি ভবনে সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সোমবার রাতে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন রাষ্ট্রপতি।মঙ্গলবার হ্যালিকপ্টার যোগে আবার হাওর পরিদর্শন শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

    উল্লেখ্য,জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এ সময় পবিত্র কোরআন তেলায়াত করেন মাওলানা তাজুল ইসলাম,পবিত্র গীতা পাঠ করেন,নেজারতডেপুটি কালেক্টর অঞ্জন দাস,পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শুভন রামসা,পবিত্র তৃপিটক পাঠ করেন নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট সম্রাটখীসা।