করোনা ঝুঁকিতেও দায়িত্বে অবিচল শ্রীমঙ্গলের সাংবাদিকরা

    0
    226

    “কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নির্দেশনা আসেনি,তবে সাংবাদিকদের প্রণোদনা ও সহায়তা দেয়া উচিৎ- নজরুল ইসলাম,শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা”

    সাদিক আহমদ নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ সংগ্রহের কাজে দেশের সব পথে-প্রান্তরে কাজ করে যাচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।এতে করে একদিকে যেমন রয়েছে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি অন্যদিকে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সংবাদকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা।
    করোনা ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণের এই ক্রান্তিলগ্নে তবুও ঘরে বসে নেই গণমাধ্যমকর্মীরা। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে দেশের এক প্রান্তের সংবাদ সবার আগে দেশের অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।
    গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সমাজের প্রতি মানবিকতাবোধ থেকেই মহান এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা যেখানে সংবাদ সংগ্রহ তাদের কাছে মুখ্য এবং নিজের জীবনটা কেবল গৌণ একটি বিষয়।
    কথায় আছে “পরাজয়ে ডরে না বীর”। অর্থাৎ শত বিপদ-আপদ এবং পরাজয়ে সংবাদকর্মীরা কখনো পিছু হটতে শিখে নি বরং সামনের সারিতে থেকে বিপদের মোকাবেলা করে সংবাদ সংগ্রহের মতো মহান দায়িত্ব পালনে নিজেকে সবসময় রেখেছেন সদা অবিচল।
    অতীতের জাতীয় যেকোনো সংকটে যেমন সংবাদকর্মীরা ঘরে বসে থাকেনি, ঠিক বর্তমান সময়েও করোনা ভাইরাসের মতো মহামারীতে অনেক সংবাদকর্মীরা একচুলও পিছন ফিরে সরে আসেনি।দুর্যোগ দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে ঐতিহ্য তাতে কোন হেরফের নেই। অদম্য সাংবাদিকরা ছুটছেন দিনরাত দেশের প্রত্যেকটি জনগণের কাছে সর্বশেষ আপডেট পৌঁছে দেয়ার জন্য।
    বিশ্বব্যাপী হু হু করে বাড়তে থাকা মহামারী করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত।প্রত্যেকের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা যখন ছুটিতে দিন কাটাচ্ছেন বাড়িতে, সাংবাদিকরা তখনও ছুটে চলছেন দেশের প্রত্যেকটি আনাচে কানাচে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বেশকিছু মাধ্যমে ভাইরাল হয় অপপ্রচার ও গুজব। আতঙ্ক উৎকণ্ঠায় এমতাবস্থায় মানুষের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে গণমাধ্যম।
    ঘরে বসেই মানুষ জানতে চায় পরিস্থিতির অগ্রগতি, সুখবর, সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং মুহুর্তের সকল আপডেট। গণমাধ্যমের প্রাণশক্তি জনগণের কাছে সর্বশেষ আপডেট পৌঁছে দিতে তাই সাংবাদিকদের এই নিরন্তর ছুটে চলা।
    অতীতের সকল দুর্যোগে যেমন নিজের জায়গা থেকে সামনের সারিতে অবিচল ছিলেন সংবাদকর্মীরা,করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিলগ্নেও সামনের সারিতে থেকেই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের পাশে থেকেই সংবাদ সংগ্রহ করছেন সংবাদকর্মীরা।মহামারী থেকে নিজেদের সুরক্ষায় সংবাদ সংগ্রহে কিছুটা বৈচিত্র্য এলেও মহান এই দায়িত্ব থেকে সরে যায়নি তারা।
    নিজেদের জীবনকে কিছুটা সুরক্ষিত রাখতে এবং পরিবারের কথা বিবেচনা করে নিজ উদ্যোগেই স্বল্প সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছেন সাংবাদিকরা।সরকারি এবং বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিকদের দেওয়া হচ্ছেনা সুরক্ষা সামগ্রী এবং পিপিই।তারপরও চালিয়ে যাচ্ছে স্বউদ্যোগে এই মিশন।
    ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাসের মধ্যে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বেসরকারি কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও সাংবাদিকদের জন্য নেই কোনো সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা,প্রণোদনা এবং সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা।মহামারীর এই ক্রান্তিলগ্নে সাংবাদিকদের জীবনের কথা চিন্তা করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল “দীপ্ত টিভি” প্রায় দুই সাপ্তাহের জন্য তাদের সংবাদ প্রচার বন্ধ রাখে।
    শ্রীমঙ্গল অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আমার সিলেট টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক মুহাম্মদ আনিছুল ইসলাম আশরাফী বলেন,গত মার্চের ৮ তারিখ থেকে বাংলাদেশে করোনারোগী শনাক্তের মধ্য দিয়ে সর্বক্ষেত্রে যে আতংক শুরু হয় এই আতংকের মোকাবেলায় এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান রাখতে সরকারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিকরাই নিজ উদ্যোগেই সমূহ বিপদ জেনেও কাজ করে যাচ্ছেন এবং তারা এখনো মাঠে রয়েছেন।আমি নিজেও মাঠে ঘুরেছি।দেখেছি বেশীরভাগ সাংবাদিকরাই নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে রাতদিন কাজ করছেন।
    সরকারী সহায়তা ও প্রণোদনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,প্রণোদনা সম্পর্কে বলতে গেলে আমাদের দেশের সাংবাদিকরা বরাবরই নিগৃহীত।আমার জানামতে আমাদের এই এলাকার কোনো সাংবাদিক কয়েকটি মাস্ক,ফেসশিল্ড ব্যতিত আর তেমন কিছু পেয়েছে বলে আমার জানা নেই।তাও এগুলো সরেজমিনে যারা কাজ করেছেন তাদের হাতে পৌছে নি।যারা বাসাবাড়িতে থেকে কাজ করে দেখা গেছে ওরাই এগুলো ব্যবহার করে।সরকারের উচিৎ মাঠ পর্যায়ে করোনাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল সাংবাদিকদের প্রণোদনাসহ সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
    শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কন্ঠের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বুলেট বলেন,সাংবাদিকেরা মূলত কোনো কিছু পাবার আশায় কাজ করেনা।এই দৃষ্টিকোণ থেকে সাংবাদিকেরা করোনাকালীন সময়ে যেটা করেছে সেটা ঝুঁকি জেনেই করেছে।শ্রীমঙ্গলের সাংবাদিকরা একদমই কোনো কিছু পায়নি এটা বলা যায় না।বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে পিপিই,মাস্ক,হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।তবে সাংবাদিকদের এই সময়েও এমন মহান দায়িত্ব পালন করা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
    সরকারী সহায়তা ও প্রণোদনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রণোদনা ও সরকারী সহায়তা করা উচিৎ।আমার জানামতে,তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একজন অতিরিক্ত সচিব প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে প্রেসক্লাবের সাথে যোগাযোগ করে সাংবাদিকদের প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য।এটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি যা দুঃখজনক।
    শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব থেকে তালিকা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্বজ্যোতি বলেন,তালিকা এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।প্রত্যেক জেলার মতো মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে  অতিরিক্ত সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠি আসছে আমরা জেনেছি বিভিন্নভাবে।তবে মৌলভীবাজার জেলায় ঐরকমভাবে তালিকা হয়নি।অন্য জেলায় হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।আমরা শ্রীমঙ্গল উপজেলায় যারা কর্মরত আছি তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা হয়নি।
    শ্রীমঙ্গলের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও আরপি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন,করোনার এই দুর্যোগকালে শ্রীমঙ্গলের সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় দায়িত্ব পালন করেছে। মানুষের মধ্য এওয়ারনেস ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য সাংবাদিকরা নিউজ পরিবেশন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।মার্চ থেকে আজ কয়েকমাস হয়ে গেলো।শ্রীমঙ্গলের সাংবাদিকরা অর্থ জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি অর্থ সংকটেও রয়েছে।আমি মনে করি এদিক থেকে সরকারের প্রশাসনের তাদের জন্য সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিৎ।
    শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম আমার সিলেটকে বলেন,করোনার এই মারাত্মক সংক্রমনের সময়ে প্রশাসনের পাশে থেকেই কাজ করেছেন সাংবাদিকরা।করোনাকালীন সরকারী বিভিন্ন নির্দেশনা,বিধিনিষেধ সময়ে সময়ে যেগুলো এসেছে সেগুলো আমরা বিভিন্ন সার্কুলেট করে থাকি।আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় এবং মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন সাংবাদিকরা।জনগণের মধ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য বিষয়গুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকাটাই মুখ্য।সবকিছু মিলিয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়।
    সরকারী সহায়তা ও প্রণোদনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এটা নিয়ে আসলে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের ভাবার বিষয়।সাংবাদিকদের চিকিৎসা খরচ,সরকারী প্রণোদনা নিয়ে সরকার ভাবছে।তবে আমরা এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা পাইনি।সরকার এটি নিয়ে ভাবছে এবং এটি অবশ্যই হওয়া উচিৎ।