কমলগঞ্জ নির্বাচনঃ শিক্ষক-ছাত্রের লড়াই

    1
    297

    “কমলগঞ্জে আওয়ামীলীগ যে কোন মূল্যে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া,বিএনপি আসনটি ধরে রাখতে তৎপর”

    আমারসিলেট24ডটকম,২০মার্চ,শাব্বির এলাহীঃ চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদ এমপির নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলায় জয়ের পথে হাটছে আওয়ামীলীগ। শুধু দলীয় নেতাকর্মীই নন, এমনটা মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মী, সুশীল সমাজসহ সাধারণ মানুষ। আওয়ামীলীগ যে কোন মূল্যে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আওয়ামীলীগের মনোনীত একক প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান (আনারস মার্কা)। আর বিএনপির মনোনীত এক প্রার্থী  হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির একাংশের সাবেক সভাপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরীর ছোট ভাই শামীম আহমদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল)। বিএনপিও এই আসনটি যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে লড়াই বেশ জমে উঠেছে। শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুর রহমানের সরাসরি ছাত্র শামীম আহমদ চৌধুরী। কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩টি পদে মোট ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী রয়েছে। আগামী ২৩ মার্চ ৪র্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৯টি ইউনিয়ন আর ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত কমলগঞ্জ উপজেলায় মোট ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৩৭ ভোটার ৭০টি ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৭ হাজার ৭৫৬ জন ও মহিলা ভোটার ৭৯ হাজার ৪৮১ জন। কমলগঞ্জ উপজেলায় ছোট বড় ২২টি চা বাগান রয়েছে। চা শ্রমিকরাই প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।

    কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান (আনারস মার্কা) ও উপজেলা বিএনপির একাংশের সাবেক সভাপতি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম আহমদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল মার্কা) নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

    ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিদ্দেক আলী (তালা), বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ হোসেন কুটি (চশমা), বিএনপি নেতা মো: আবুল হোসেন (টিয়া পাখি), আদমপুর ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা জাহাঙ্গির মুন্না রানা (উড়োজাহাজ), উপজেলা সিপিবি সম্পাদক কমরেড সাইফুর রহমান (জাহাজ), উপজেলা আনজুমানে আল-ইসলাহ সম্পাদক হাফেজ এম এ ওহাব (বাল্ব), নাগরিক কমিটির ব্যানারে হেফাজত নেতা মাওলানা নুরুল মুত্তাকিন জুনাইদ (মাইক ), জামায়াত নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নিজাম উদ্দিন (বই ) ও চা শ্রমিক নেতা গোপাল নুনিয়া (টিউবওয়েল) মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

    মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পারভীন আক্তার লিলি (ফুটবল),  আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদিকা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক, নারীনেত্রী শিক্ষিকা বিলকিস বেগম (কলস) ও আদিবাসী ফোরাম নেত্রী গীতা রানী কানু (পদ্ম ফুল) মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

    আগামী ২৩ মার্চ কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা উপজেলার সর্বত্র মায়-মুরব্বিয়ান, দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও অন্যান্য এলাকার নেতাকর্মীর সহযোগীতা ও সমর্থন লাভে কাজ করছেন। লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে সিরিজ উঠান বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে গোটা কমলগঞ্জ উপজেলা। এলাকায় প্রতিদিন চলছে মাইকে প্রচার-প্রচারনা। ঢোল-করতাল, বাঁশীর সুর আর হারমনিয়ামের তালের সাথে চলছে প্রার্থীদের নাম আর প্রতীকের নিয়ে নানা রকম গানের পরিবেশনা করে ভোটারদের মনোরঞ্জন দিয়ে যাছেন। অপরদিকে ভোটাররা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের নিয়ে শুরু করছেন বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা। আওয়ামীলীগ ৩টি পদেই একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পেরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ফুরফুরে ভাব বিরাজ করছে। বিএনপিতে চেয়ারম্যান ও মহিলা-ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারলে ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী নিয়ে বিভক্তিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তবে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ একক প্রার্থী মনোনয়ন করতে পারলেও শুধু বিএনপি থেকেই ৩ জন সহ ১৯ দলীয় জোট থেকে ৫ জন প্রার্থী লড়ছেন। স্থানীয়দের মতে, ভোটের লড়াইয়ে এখন আওয়ামী লীগ বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। অপরদিকে বিএনপি জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি। প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে নিজেকে অত্যন্ত সাবলীলভাবে ফুঁটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রার্থী থাকায় খেলাটা জমে উঠবে। শিক্ষক ও ছাত্রের এই লড়াইে শেষ হাসি কে হাসবে তা আগামী ২৩ মার্চ নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিদ্দেক আলী ভালো অবস্থানে আছেন। এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী এখন নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভিন আক্তার লিলি গতবার বিএনপি’র একক প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। এবারও তিনি  মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বিপক্ষে আওয়ামীলীগের শক্ত প্রার্থী না থাকায় গত নির্বাচনে সহজে জয়ী হলেও এবার তাকে শক্ত প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের  প্রার্থী হিসেবে বিলকিস বেগম কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন । এছাড়া এই পদে আদিবাসী ফোরাম নেত্রী চা শ্রমিক সন্তান গীতা রানী কানু ও লড়ছেন। তিনি চা বাগান এলাকার ভোট নিজের পক্ষে ধরে রাখতে মরণ কামড় দিচ্ছেন তার পাশাপাশি বস্তি এলাকার ভোট ছিনিয়ে নেয়ার জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করে চলেছেন।

    কমলগঞ্জ উপজেলায় চা বাগানের বিশাল একটি অংশ সব সময়ই আওয়ামীলীগ প্রার্থীর হয়ে কাজ করে জাতীয় নির্বাচনে। আর স্থানীয় নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কিছুটা। সকল প্রার্থীরা এখন চা বাগানমূখী হতে দেখা যাচ্ছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে খ্যত কমলগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান (আনারস মার্কা) এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শামীম আহমেদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল মার্কা)। বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় কমলগঞ্জে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হয়েছে। এবারে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী হওয়ায় অধ্যাপক রফিকুর রহমান এর ভাগ্য বদলে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করেছেন। বিগত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলহাজ্ব শামীম আহমেদ চৌধুরী বিজয়ী হন। এবারের নির্বাচনে শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুর রহমান ও ছাত্র শামীম আহমেদ চৌধুরীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হচ্ছে। শিক্ষক-ছাত্রের ভোট যুদ্ধে কে হবেন বিজয়ী এই অপেক্ষায় রয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলাবাসী। আলাপকালে দু’জন প্রার্থীই বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

    চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কমলগঞ্জ গণ মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে শিক্ষা বিস্তার সহ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত ছিলেন। আওয়ামীলীগ উপজেলা নির্বাচনে যে কোন মূল্যে আসন পুনরুদ্ধার করতে চায়। আলাপকালে অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ জনমানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছি। জীবনের শেষ বয়সে এসে আবার নির্বাচন করছি। হয়ত এটাইা হবে আমার শেষ নির্বাচন। নিজের দল ছাড়াও সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকায় বিপুল ভোটে আমি অবশ্যই বিজয়ী হবো বলে শতভাগ আশাবাদী।

    অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব শামীম আহমেদ চৌধুরী কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একাংশের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) এর ছোট ভাই শামীম আহমদ বিগত ৫ বছরে তেমন কোন কর্মকান্ড দেখাতে পারেননি। বিএনপি যে কোন মূল্যে আসনটি ধরে রাখতে চায়। আলাপকালে শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিগত ৫ বছরের সরকারী দলের রোষানলে ছিলাম। বেশির ভাগ সময়ই পলাতক ও মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছি। এজন্য এলাকার মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পারিনী এজন্য ভোটারদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আবার নির্বাচিত হলে মানুষের কল্যাণে কাজ করে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করব। তিনি বলেন, অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান আমার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী। তিনি আমার কলেজ জীবনের সরাসরি শিক্ষক। বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

    কমলগঞ্জ উপজেলায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচার চালানোর সুযোগ রয়েছে। ২৩ মার্চ এ উপজেলায় ভোট। মোট ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৩৭ ভোটার ৭০টি ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কমলগঞ্জ উপজেলার ভোটাররা মনে করেন, প্রার্থী সৎ, নিষ্ঠা, যোগ্য ও শিক্ষিত এবং প্রকৃত অর্থে যে প্রার্থী উপজেলার উন্নয়নে কাজ করতে সক্ষম হবেন সে প্রার্থীকেই আমরা ভোট দেব। নির্বাচন শেষ কোন প্রার্থী  হাসবেন তার জন্য আগামী ২৩ মার্চ নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।